পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র তৎপরতায় কারা সাহায্য করছে?

fec-image

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির আগের সশস্ত্র সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রতিবেদনে সঞ্জয় হাজারিকা লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশী বিদ্রোহীরা বলেছে, ভারত তাদের সাহায্য করছে।’ Hazarika, Sanjoy, “Bangladeshi Insurgents Say India Is Supporting Them”, The New York Times, 11 June, 1989.

দীর্ঘস্থায়ী, প্রচণ্ড সংঘাতের অবসান কল্পে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত সংগঠন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে সরকারের শান্তিচুক্তি হয় দুই যুগ আগে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর। শর্ত অনুযায়ী সশস্ত্র তৎপরতা বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও চুক্তির দুই যুগের প্রেক্ষাপটে অস্ত্রধারী গ্রুপগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিবর্তিত পটভূমিতে পাহাড়ে ক্রমবর্ধমান সশস্ত্র তৎপরতাকে কারা সাহায্য করছে? কোন সূত্র থেকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অস্ত্র, গোলাবারুদ ও নানাবিধ সহযোগিতা পাচ্ছে? বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন গহীন পার্বত্যভূমিতে শান্তিচুক্তি ও অব্যাহত উন্নয়ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সশস্ত্র পন্থায় রক্তপাতের ঘটনায় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

শান্তিচুক্তির পর পরই ‘বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি’ নামে আমার একটি বই প্রকাশ পায় ১৯৯৯ সালে। শান্তিচুক্তির এতো বছরের অভিজ্ঞতায় উন্নয়ন, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার দিকগুলো পর্যালোচনার প্রয়োজনে আমি সরজমিন গবেষণা চালাই। গত ছয় মাসে কয়েকবার পাহাড়ের নানা অঞ্চলে গবেষণাকালে সশস্ত্র প্রবণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপত্তার হুমকিগুলো দৃষ্টিগোচর হয়।

পাহাড়ের নানা সংস্থার কাছ থেকে আহরিত তথ্যে জানা যায়, গত এক বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর গুলি বিনিময় হয়েছে ১২ বার, সশস্ত্র গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে গুলি বিনিময় করেছে ১৮ বার, ২১টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ২৮টি, গ্রেফতার হয়েছে ৫০৮ জন, অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১৪২টি এবং গোলা বারুদ উদ্ধার হয়েছে ৫১০টি।

শান্তি চুক্তির পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সামাজিক অপরাধের বাইরে তিন পার্বত্য জেলায় মোট খুন হয়েছে ২ হাজার ৫৭৩ জন মানুষ। অপহৃত হয়েছে অন্তত ২ হাজার ৬২৬ জন। নিহতদের মধ্যে পাহাড়ি-বাঙ্গালি উভয় সম্প্রদায়ে থাকলেও বাঙালিদের সংখ্যা বেশি। বাঙালিরা খুন হয়েছেন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও চাঁদাবাজির জের ধরে এবং অধিকাংশই পাহাড়িদের হাতে। নিহত পাহাড়িরা মারা গেছে তাদেরই সশস্ত্র তৎপরতা ও আধিপত্যের লড়াইয়ের নিজস্ব অন্তঃকোন্দলের কারণে।

পাহাড়ে কর্মরত বিভিন্ন সূত্রের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের কাছে তিন হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র আছে। সেখানে পুরনো অস্ত্রের পাশাপাশি নতুন এবং অত্যাধুনিক কিছু অস্ত্রও রয়েছে। এসবের মধ্যে আছে এম ১৬ রাইফেল, মায়ানমারে তৈরি এম ১ রাইফেল, একে ৪৭ রাইফেল, একে ২২ রাইফেল এবং এলএমজি (লাইট মেশিনগান)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের গ্রুপগুলোর সশস্ত্র ক্যাডার, সেমি-আর্মড ক্যাডারের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি হতে পারে। জেএসএস ও ইউপিডিএফ বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন ও অপহরণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত আরও রক্তপাতের আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রধান দুই আঞ্চলিক গোষ্ঠী জেএসএস এবং শান্তিচুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় হানাহানির সংখ্যা বেড়েছে। জেএসএস বর্তমানে মূলধারার জেএসএস এবং জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ বর্তমানে মূল ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে বিভক্ত। স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে একটা সমঝোতা ছিল। সে কারণে এক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে অন্য গ্রুপ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেনি। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ বিভক্ত হয়ে গণতান্ত্রিক গ্রুপের জন্ম হলে হানাহানির মাত্রা বেড়ে যায়। বর্তমানে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় জেএসএস এবং খাগড়াছড়ি জেলায় ইউপিডিএফের আধিপত্য রয়েছে। তবে নানিয়ারচরসহ কিছু কিছু স্থানে জেএসএস ও ইউপিডিএফের বিদ্রোহী গ্রুপগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠায় ওইসব স্থানে হানাহানি হচ্ছে।

রাজনৈতিক ও নেতৃত্বগত প্রভাব বিস্তারের দিকগুলো ছাড়াও সশস্ত্র হানাহানির অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। এক হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী বছরে প্রায় চারশ’ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে থাকে। এসবের ভাগাভাগি নিয়ে গ্রুপগুলোর মধ্যে বিরোধের জন্ম হচ্ছে। তবে, আশঙ্কাজনক তথ্য হলো এই যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির সময় জমা না হওয়া অস্ত্রের সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে দুর্গম পাহাড়ি পথে আসছে ওইসব অস্ত্রের চালান। সশস্ত্র গ্রুপগুলোর চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার এবং রাজনৈতিক কারণে হানাহানিতে এসব অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। এজন্য খুন, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে অশান্ত হচ্ছে পাহাড়ি জনপদ।

পার্বত্য অঞ্চলে চারটি সশস্ত্র সংগঠন প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করেছে। সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ঠিকাদারদের মূল বাজেটের ১০ শতাংশ হারে চাঁদা দিতে হয় তাদের। এ অর্থ দিয়েই সংগঠনগুলো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা, লবিং এবং অস্ত্র সংগ্রহ করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলের চারটি সংগঠন জেএসএস (মূল), ইউপিডিএফ (মূল), জেএসএস (সংস্কার) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-কে চাঁদা না দিয়ে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায় না। সাধারণ নাগরিক, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন বাগান, বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে এই চার সংগঠন প্রায় ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। অস্ত্রের ভাণ্ডার সমৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এসব অর্থ ব্যয় করে তারা। ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ১৪৫ কোটি, রাঙ্গামাটি থেকে ১৩০ কোটি এবং বান্দরবান থেকে ১২৫ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করে সংগঠন চারটি, এমন তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রগুলো।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সশস্ত্রগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে সরকারের শান্তিচুক্তি সই হয়। চুক্তির শর্ত মোতাবেক ওই সময়ে জেএসএস সদস্যরা তাদের অস্ত্র জমা দেন। এর বিনিময়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু এখন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই সময়ে অনেক অস্ত্র জমা পড়েনি। সেগুলো এখন পাহাড়কে অশান্ত করতে ব্যবহার হচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সীমান্তের ওপার থেকে আসা নতুন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেক উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। সেখানে পাহারার ব্যবস্থা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্তের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সীমান্তচৌকি (বর্ডার আউটপোস্ট-বিওপি) নেই। ফলে সেখানে বাধাহীনভাবে অস্ত্র ঢুকতে পারে। তাছাড়া শান্তিচুক্তি সই করার পর চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত মোতাবেক বেশকিছু নিরাপত্তা ফাঁড়ি প্রত্যাহার করা হয়। শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৫২টি নিরাপত্তা ফাঁড়ি ছিল। চুক্তির পর অনেকগুলো প্রত্যাহারের পর বর্তমানে সেখানে ২১৮টি নিরাপত্তা ফাঁড়ি রয়েছে।

তদুপরি, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড়ি সীমান্তে পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকায় উন্মুক্ত সীমান্তে বিওপি স্থাপন করা যাচ্ছে না। কেননা বিওপি স্থাপন করতে হলে তার নিরাপত্তার প্রয়োজনে যোগাযোগ জরুরি। বর্তমান অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন দুর্গম স্থানও রয়েছে, যেখানে কোনো সশস্ত্র হামলা হলে নিরাপত্তা বাহিনীর পৌঁছতে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

যদিও চুক্তি মোতাবেক ৪৫ দিনের মধ্যে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের তালিকা প্রদান করা হয়েছিল এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ থেকে ৫ মার্চ ১৯৯৮ পর্যন্ত ৪ দফায় ১৯৪৭ জন সশস্ত্র শান্তি বাহিনীর সদস্য শেখ হাসিনা সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। ৮৭৫টি অস্ত্রসহ ২ লাখের অধিক গলা বারুদ তারা জমা দিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ সর্বশেষ দলের আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা শান্তি বাহিনীর পুরোপুরি বিলুপ্তি ঘটলেও সশস্ত্র ক্যাডারের সংখ্যা ও অস্ত্রের মওজুদ আরো তিনগুন বেড়েছে; এমন তথ্য বিভিন্ন সংস্থার।

এমনই পটভূমিতে ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী সেনাবাহিনী জিওসিস, পুলিশ প্রধান ও ব্যাব প্রধানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে কিভাবে আইনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠ করা যায় তা নিয়ে তিন পার্বত্য জেলার সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন ও রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। সেখানেও সকলের একটাই মত ছিল, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেনা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ র‌্যাবের বিশেষ ব্যটালিয়ন নিয়োগ করতে হবে। এর পর নভেম্বরে র‌্যাবের একটি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠার ব্যপারে সরকারি সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হলেও বিষয়টি অজ্ঞাত কারণে মাঝপথেই থেমে গেছে।

এদিকে, গত চার বছরে শুধুমাত্র রাঙামাটিতেই আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে খুনের শিকার হয়েছে অন্তত ১২৪ জন। গত তিন বছরের তুলনা এবছর হত্যার ঘটনা অবশ্য কিছুটা কমেছে। নিহতদের মধ্যে ৯২ জনই পার্বত্য এলাকার চারটি আঞ্চলিক দলের নেতা-কর্মী। এর মধ্য ইউপিডিএফের ৩৯ জন, জেএসএসের (লারমা) ৩৮ জন, জেএসএসের ১৩ জন ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের ২ জন রয়েছেন। অন্যদের মধ্যে ২০ জন সাধারণ নাগরিক, একজন সেনাসদস্য, বিএনপির নেতা ১ জন, আওয়ামী লীগের ১০ জন ও মগ পার্টির ১ জন রয়েছেন।

অভিজ্ঞমহলের মতে, পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হানাহানির ঘটনা ঘটেছে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে। এই দুই জেলায় নিহত হন ১০৫ জন। আর বান্দরবানে নিহত হন ১৯ জন। ২০১৮ সালে রাঙামাটিতে খুনের শিকার হয় ৩২ জন। ১৯ সালে খুন হয় ৪১ জন, ২০২০ সালে খুন হয় ১১জন, আর এ বছর পাহাড়িদের অর্ন্তদ্বন্দ্বে খুনের সংখ্যা ৫। খুনের তালিকায় বান্দরবানের একজন মসজিদের ইমাম রয়েছে। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে অস্ত্রবাজির এই মহড়ায় সবুজ পাহাড়ে চলছে রক্তের হোলি খেলা। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে সশস্ত্র তৎপরতা। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে খুনের তালিকা। বাড়ছে নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের বিরুদ্ধে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা।

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন