ভিডিওসহ

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সামরিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে সরকার: জাতিসংঘে সন্তু লারমার জামাতা

fec-image

পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে আরো জানা গিয়েছে, অগাস্টিনা চাকমা কানাডার নাগরিক ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও তার পূর্ব পুরুষের বাড়ি বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলা শহরে। তার পিতার নাম শ্রী প্রীতিবিন্দু চাকমা ও মাতার নাম জুলিয়ানা লারমা। জুলিয়ানা লারমা জেএসএস সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার আপন মেয়ে। সে হিসেবে অগাস্টিনা চাকমা সন্তু লারমার আপন নাতি। 

বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সামরিকীকরণের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম (ইউএনপিএফআইআই)-এর ২১তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এই সেশনে‘জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের সাথে আলোচনা’ শীর্ষক পাঁচ নম্বর এজেন্ডায় অনলাইনের মাধ্যমে অংশ নিয়ে গত শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) পিসিজেএসএস-এর প্রতিনিধি প্রীতি বিন্দু চাকমা আরও বলেন, সেনাবাহিনী প্রায়শই সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। যার ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বাড়িঘর তল্লাশি, মানবাধিকার কর্মীদের অপরাধী সাব্যস্তকরণ ও  আদিবাসী মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মত ঘটনা ঘটে।

তিনি  বলেন, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা। অন্যভাবে বললে, সামরিক বাহিনীই সবকিছু সেখানে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি পাঁচটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দিয়ে  আদিবাসীদের মধ্যে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা বিবাদে সেনাবাহিনী তাদেরকে ব্যবহার করে।

প্রীতি বিন্দু চাকমা বলেন, “গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধির বক্তব্য শুনেছি। সেখানে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার এবং আদিবাসী জুম্ম জনগণের মধ্যে ১৯৯৭ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং চুক্তিটি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। সরকারী প্রতিনিধি হওয়ায় তিনি জানেন না এটি সম্পূর্ণ না আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।“

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ  করতে পিসিজেএসএস-এর প্রতিনিধি প্রীতি বিন্দু চাকমা জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামকে আহ্বান জানান। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে নেয়ার আগে তাদের মানবাধিকার বিষয় খতিয়ে দেখতে পদক্ষেপ নিতেও বলেন তিনি।

উল্লেখ্য প্রীতি বিন্দু চাকমা জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমার মেয়ে জুলিয়ানা লারমার স্বামী, অর্থাৎ সন্তু লারমার জামাই।

জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউইয়র্কে বর্তমানে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২১তম অধিবেশন চলছে। গত ২৫শে এপ্রিল শুরু হওয়া এ অধিবেশনটি চলবে আগামী ৬ মে পর্যন্ত। এতে অংশগ্রহণকারীরা সশরীরে ও অনলাইনের মাধ্যমে অংশ নিচ্ছে। আদিবাসী মানুষ, ব্যবসা, স্বায়ত্তশাসন এবং মানবাধিকার নীতি  এবং আদিবাসী ভাষার আন্তর্জাতিক দশক ২০২২-২০৩২ এর সূচনা নিয়ে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের এই চলতি অধিবেশনের মুল বিষয়বস্তু সাজানো হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে, পিসিজেএসএস-এর পক্ষে আগুস্টিনা চাকমা এবং বাংলাদেশ আদিবাসী মহিলা নেটওয়ার্কের পক্ষে চঞ্চনা চাকমা স্থায়ী ফোরামের চলতি অধিবেশনে সশরীরে অংশ নিচ্ছেন।

কানাডা প্রবাসী পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী ও মডেল অগাস্টিনা চাকমা  এজেন্ডা আইটেম ৪-এ অংশগ্রহণ করে তার বক্তৃতায় বলেন,  “আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার ছাড়া আদিবাসীদের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের (সিএইচটি) /Jummaland আদিবাসী জুম্ম জনগণও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিটি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এবং পিসিজেএসএস এর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, জেলা পর্যায়ে তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সংস্থা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য।

কিন্তু পার্বত্য চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকারের বিলম্বিত কৌশলের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো সেরকম স্ব-শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। গত ২৫ বছরে এসব কাউন্সিলকে সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

গত ২৫ বছরেও এসব কাউন্সিল নির্বাচনের লক্ষ্যে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে নির্বাচন বিধি ও ভোটার তালিকা বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। ফলস্বরূপ, এই কাউন্সিলগুলি এখন পর্যন্ত অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী পরিষদ দ্বারা শাসিত হয়েছে, যা স্ব-নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অংশগ্রহণমূলক ভূমিকার অনুপস্থিতি আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠীর জাতীয় সত্ত্বা এবং তাদের জন্মভূমির অস্তিত্ব, তাদের সংস্কৃতি ও জীবিকা, মানবাধিকার এবং এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।

বর্তমান সরকারও আগের স্বৈরশাসকদের মতো সামরিক পন্থা অবলম্বন করে আসছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ডি ফ্যাক্টো সামরিক শাসন ‘অপারেশন উত্তোরন’-এর অধীনে। সেনাবাহিনী নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। আদিবাসী জুম্ম জনগণ এখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে নিয়োজিত পিসিজেএসএস কর্মী ও সমর্থকদের ‘সন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজ’ এবং ‘সশস্ত্র দুর্বৃত্ত’ ইত্যাদি হিসেবে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী ব্যাপক প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মসূচি চালিয়ে আসছে।

তাই, আদিবাসী জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, আর্মি স্থায়ী ফোরামকে প্রকৃত সামরিক শাসন ‘অপারেশন উত্তোরন’ সহ সমস্ত অস্থায়ী ক‍্যাম্প প্রত্যাহার এবং রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর করার জন্য যথাযথ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম কাউন্সিল এবং ২০১১ সালে গৃহীত পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত স্থায়ী ফোরামের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেওয়া।”

এদিকে অগাস্টিনা চাকমার এই বক্তব্যের পর স্যোশাল মিডিয়াতে তিনি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছেন। পাহাড়ি বিভিন্ন আইডি থেকে তাকে নানা ধরণের বীরত্বপূর্ণ খেতাব দেয়া হলেও বাঙালি আইডিগুলো থেকে তার ব্যাপক সমালোচনা করা হচ্ছে। অনেকেই তিনি কীভাবে ভিসা নিয়ে জাতিসংঘে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কেউ কেউ আবার তার নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট বাতিলের দাবীও করেছেন।

কিন্তু পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে অগাস্টিনা চাকমা ভিসা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা পাসপোর্ট বাতিলের সুযোগ নেই। কেননা তিনি স্থায়ীভাবে কানাডার টরেন্টোতে বসবাস করেন। অগাস্টিনা মূলত একজন মডেল ও প্রোডাক্ট ব্রান্ড প্রোমোটার। এ ছাড়াও ডাটা এন্ট্রি নিয়েও তিনি কাজ করে থাকেন। তার স্যোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো ঘুরে সার্ফ করে তাকে বিভিন্ন পণ্যের মডেল হতে দেখা যায়। এ ছাড়াও অত্যন্ত খোলামেলা পোশাকে তার সরব উপস্থিতি রয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়। প্রায় অর্ধনগ্ন, বিকিনি পরিহিত ও সাঁতারের পোশাকে সাঁতার কাটার একাধিক ভিডিও রয়েছে তার স্যোশাল মিডিয়াতে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ ইউরোপের নামি দামী হোটেলগুলোতে তার অবাধ, নিয়মিত যাতায়াত ও সেখানে দামী মদ সেবন ও পার্টি করার ছবি ও ভিডিও রয়েছে।

পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে আরো জানা গিয়েছে, অগাস্টিনা চাকমা কানাডার নাগরিক ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও তার পূর্ব পুরুষের বাড়ি বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলা শহরে। তার পিতার নাম শ্রী প্রীতিবিন্দু চাকমা ও মাতার নাম জুলিয়ানা লারমা। জুলিয়ানা লারমা জেএসএস সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার আপন মেয়ে। সে হিসেবে অগাস্টিনা চাকমা সন্তু লারমার আপন নাতনী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সামরিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে সরকার: জাতিসংঘে সন্তু লারমার জামাতা”

  1. সন্তু বাবুর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এভাবে মডেলিং করছে – ভবিষ্যৎ ভালো।
    চাকমা মেয়েরা এ পেশার মাধ্যমে চাকমা সমাজকে আরও বিকশিত করতে পারবে বলে মনে করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন