পাহাড়ি-বাঙ্গালি নয়, জনকল্যাণে কাজ করবে এমন প্রার্থীকেই বেঁছে নিতে চায় লক্ষ্মীছড়িবাসী

upazila election logo

মোবারক হোসেন, লক্ষ্মীছড়ি :

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়িতে বইছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী হাওয়া। প্রার্থীরা এখনো প্রকাশ্যে আসে নি। জোরে শোরে তেমন প্রচারণায়ও দেখা যাচ্ছে না। তবে নানা কৌশলে নিজেদের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন ভোটারদের কাছে। কেউ বলছেন আমি মনোনয়ন পত্র নিয়েছি আবার কেউ বলছেন আপনারা চাইলে মনোনয়ন পত্র কিনব আমার জন্য দোয়া করবেন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ডজনেরও বেশি চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদেই মনোনয়ন পত্র বিক্রি হয়েছে ১৪টি। আর পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫টি এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩টি মনোনয়ন পত্র বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এখনো পর্যন্ত কোন প্রার্থী দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন এমন কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে নি। যদিও আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থীত একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পত্র নিয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে হয়েছে বা নির্বাচন থেকে সরে গেছেন এমন প্রার্থীদের পাশাপাশি নতুন মুখও দেখা যাচ্ছে। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অতীতের হিসেব নিকেশ থেকে ভোটাররা অবশ্য কারো নাম এই মুহুর্তে প্রাথমিক বিবেচনায় নিচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে প্রার্থী হয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে না থাকা এবং প্রার্থী হয়েও জামানত হারানো কিংবা বহু দলীয় সমর্থন নিয়ে নাটকীয় ভূমিকায় জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে হীন কৌশল অবলম্বনকারি ব্যাক্তিদের এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে দেখতে চায় না জনসাধারণ।

পাহাড়ি-বাঙ্গালি বিবেধ ভুলে লক্ষ্মীছড়িবাসীর উন্নয়নে কাজ করবে এমন প্রার্থীকে বেঁছে নিতে চায় সাধারণ ভোটাররা। তবে দলীয় বিবেচনায় কোন প্রার্থী থাকছে কিনা বা কেমন প্রার্থী থাকছে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো ২/১দিন।

খবর নিয়ে জানা যায়, বড় দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রাথী এখনো চুড়ান্ত হয় নি। বিএনপি নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী দিবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যায় নি। রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামে টিকে থাকা এই দলটি সরাসরি প্রার্থী দিবে কি না এমনটা নিশ্চিত না হলেও ভোটের হিসেব মতে বিকল্প কোন চিন্তা করা হবে কিনা কোনটাই স্পষ্ট নয়। আওয়ামীলীগ থেকে কোন প্রার্থী এখনো চুড়ান্ত করা হয় নি। সরকারের ক্ষমতায় থাকা এই দলটিও কৌশলগত কারণে কেমন প্রার্থী নির্ধারণ করলে জয় ঘরে তুলতে সহজ হবে এমনটিই ভাবছেন নিবিড় ভাবে। জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী দেয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। সুবিধা বুঝে নেতা-কর্মীরা যে কোন প্রার্থীর দিকে ঝুঁকতে পারেন এমনটাই জানা গেছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ইউপিডিএফ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে লক্ষ্মীছড়ি জেএসএস’র ব্যানারে প্রার্থী দিকে কিনা নিশ্চিত ভাবে জানা যায় নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিজ্ঞমহল মনে করে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক ততটা প্রভাব ফেলেনা লক্ষ্মীছড়িতে। তবে নানা নাটকীয়তা লক্ষ্য করা যায় নির্বাচন এলে।

অনেকেই নির্বাচন বাণিজ্যে নেমে পড়েন এমনটা দেখা গেছে অতীতে। এখানে আঞ্চলিক দলের প্রাধান্য থাকায় জয়ের শত ভাগ সম্ভাবনা থাকে ইউপিডিএফ সমর্থীত প্রার্থীর। সেই হিসেব নিকেশ থেকেই স্বাভাবিকভাবেই এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চান না উপজাতীয় ভোটাররা।

ভোট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৬ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ভোটার রয়েছে উপজাতীয়। পুরো উপজেলায় মাত্র ৪ হাজার বাঙ্গালি ভোট। তার মধ্যে আনসার-ভিডিপিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি মিলে নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব থাকায় অনেকেই ভোট দিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রেও বাঙ্গালী প্রার্থীরা পিছিয়ে থাকে।

এছাড়াও রাজনৈতিক বিরোধের কারণেও নির্বাচনী কৌশলে কখনো বাঙ্গালি প্রার্থীকে এক মঞ্চে আসতে দেখা যায় নি। আর ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব দাবিদার যোগ্য প্রার্থীও খুব একটা নেই বলেও ভোটাররা মনে করে। কঠিন এই বাস্তবতার আলোকে শান্তি সম্প্রীতির মডেল হিসেবে পরিচিত এই লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি-বাঙ্গালি হিসেব না করে সকলের গ্রহণযোগ্য এলাকার উন্নয়নে, সকল সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে থেকে জাতীয় রাজনীতি কিংবা আঞ্চলিক রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে পার্বত্যবাসী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জনকল্যাণে কাজ করবে এমন প্রার্থীকেই বেঁছে নিতে চায় লক্ষ্মীছড়িবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন