পূর্ণিমা চাকমার হত্যাকারীরা ধরা পড়বে তো?

fec-image

পূর্ণিমা চাকমা উঠতি বয়সী এক তরুণী। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের বগাখালী এলাকা থেকে জেলা শহরে এসেছেন লেখা-পড়া করার জন্য। ভর্তি হয়েছিলেন রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে। অপমৃত্যুর আগে তিনি দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। লেখা-পড়া চালিয়ে নিতে শহরের রাজবাড়ি এলাকার মল্লিকা চাকমার বাড়িতে মেস করে থাকতেন তিনি।

পূর্ণিমা চাকমার মরদেহ যেভাবে উদ্ধার করা হয়েছিলো:

২৯ অক্টোবর দুপুরে বাড়ির মালিক পক্ষ পূর্ণিমা-কে অবচেতন অবস্থায় রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণার পরপরই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বাসা মালিকের লোকজন পালিয়ে যান।পরে তারা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে বিভিন্ন রকম কথা রটাতে থাকে। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে পূর্ণিমার মরদেহ সুরতহাল করার জন্য মর্গে পাঠান।

ফুঁসে উঠেছে জনতা:

পূর্ণিমা চাকমার অপমৃত্যুটা কোনরকমে মানতে নারাজ তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং তার এলাকার বাসিন্দারা। তাই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানাতে থাকে। তারা শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে থেমে থাকেননি।হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য রাজপথেও নেমেছেন। ১ নভেম্বর সকালে পূর্ণিমা চাকমার হত্যাকারীদের বিচারে আওতায় আনার জন্য রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন।

ঘটনার ব্যাপারে পূর্ণিমার স্বজনরা যা বলছেন:

পূর্ণিমার বাবা সাধন চাকমা বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। সে কোনো অবস্থাতেই আত্মহত্যা করার মেয়ে না। অন্য কোনোভাবেও সে মারা যায়নি। কারণ সে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। ঘটনার আগের দিনও মেয়ের সঙ্গে আমার ফোনে কথাবার্তা হয়েছে। আমার মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি মেয়ের হত্যার বিচার চাই। আমার একমাত্র দাবি খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি। আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল একজন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করা। সেজন্য সেই দুর্গম এলাকা থেকে এসে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করছিল। আমাদের গ্রাম থেকে রাঙামাটি শহরে যাওয়া-আসায় সময় লাগে চার দিন। এত কষ্ট করে আমার মেয়ে শহরে এসে পড়ালেখা করছিল। অথচ খুনিরা আজ মেয়ের স্বপ্ন শেষ করে দিল।

পূর্ণিমার মামাতো ভাই কাপ্তাই সুইডিশ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র পলাশ চাকমা বলেন, পূর্ণিমা কোনোভাবেই আত্মহত্যা করেনি। সে ওই রকম মেয়ে না। পূর্ণিমাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আসল ঘটনা দামা-চাপা দিতে নানাভাবে অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। পূর্ণিমার বাবাকে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছে বাড়ির মালিক। টাকা দিয়ে কী পূর্ণিমাকে ফিরে পাওয়া যাবে? তাই আমাদের দাবি খুনিদের ফাঁসি।

পূর্ণিমার আরেক স্বজন ক্ষুদিরাম চাকমা বলেন, যেদিন পূর্ণিমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেদিন ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমি হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি পূর্ণিমার নিথর দেহ একলা পড়ে আছে। পাশে তখন আমি ছাড়া কেউ ছিল না। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও পূর্ণিমার মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে গেছে বাসার মালিক মল্লিকা চাকমার পরিবারের লোকজন। লাশের দেহে আত্মহত্যার কোনো আলামতও ছিল না। শুধু গলায় সামনে জঘন্য আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। বাসার মালিকের পক্ষ বলছেন- সিলিং ফ্যানে ওড়না জড়িয়ে পূর্ণিমা আত্মহত্যা করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ গলায় ফাঁসের কোনো গোলাকার চিহ্ন নেই। তাছাড়া বাসায় যে রুমে পূর্ণিমা আত্মহত্যা করেছে বলা হয়েছে, সেখানে গিয়ে দেখা যায়- সিলিং ফ্যান লাগানো আছে অনেক উঁচুতে। পূর্ণিমা নিজে কীভাবে সিলিং ফ্যানে গলায় ওড়না পেঁচিয়েছে, তার কোনো রকম আলামতও নেই। তাই আমরা নিশ্চিত যে, নিষ্পাপ পূর্ণিমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা যদি নির্দোষ হয় তাহলে কেন পালিয়ে গেল ? আমরা পূর্ণিমা হত্যার বিচার চাই।

অবশেষে পূর্ণিমা চাকমা হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ :

পূর্ণিমা চাকমা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার (০১নভেম্বর) দিনগত রাতে তিনজনকে আসামি করে রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন, পুর্ণিমার মামাতো ভাই পলাশ চাকমা। মামলার আসামীরা হলেন, বাড়ির মালিক মল্লিকা দেওয়ান, গান্ধী চাকমা এবং নিকিতা দেওয়ান।

রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, পূর্ণিমা চাকমা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার রাতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এখনো মরদেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে ওসি যোগ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন