পেকুয়ার রাজাখালীতে ত্রাণের চাল হরিলুট

13315771_291463124527854_403767159086106_n
পেকুয়া প্রতিনিধি:
পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদে এবার ত্রাণের চাল হরিলুট হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও মিলছে। গত ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ছোবলে পেকুয়ার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নে লন্ডবন্ড হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর সরকারের ত্রাণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাধ্যমে পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো মাঝে বিতরনের জন্য ৭ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব চাল গত কয়েক দিন পূর্বে পেকুয়ার পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের ছাড়পত্র নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদাম থেকে নিয়ে আসেন রাজাখালী ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর। খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে ওই চালগুলো রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রাখা হয়। ৩০ মে রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে এসব চাল দায়সারাভাবে বিতরণ করা হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজাখালী ইউনিয়নে ত্রানের চাল বিতরনের সময় তদারকীর দায়িত্বের জন্য টেক অফিসার নিয়োগ করা হয় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী মো. সেলিমুল হককে। কিন্তু ৩০ মে রাজাখালী ইউনিয়নের ত্রানের চাল বিতরনের সময় ওই কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। এ ব্যাপারে জানার জন্য সেলিমুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর এখনো সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুললের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেননি। দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই ত্রাণের চাল বিতরনের নামে লুটপাটে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজাখালীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন।

এ নিয়ে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল অভিযোগ করেছেন, নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর তার কাছ থেকে এখনো দায়িত্ব বুঝে নেননি। সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল আরো জানান, সরকারীভাবে বরাদ্দের ত্রাণের চাল লুট করতেই চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর অতি উৎসাহী হয়ে সরকারী টেক অফিসারের উপস্থিতি ছাড়াই ৩০ মে ত্রাণের চাল বিতরণ করেছেন। ছৈয়দ নুর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল বিতরণে ব্যাপক লুটপাটের  ঘটনাটি তিনি সরকারীভাবে তদন্ত দাবী করেছেন।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের ২য় তলায় ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর, ইউপি সদস্য বাদশা মিয়া ও আজম উদ্দিন চাল বিতরণ করছেন। কিন্তু এসময় সরকারীভাবে নিযুক্ত টেক অফিসারের দেখা মেলেনি। এছাড়াও ওই ইউনিনের ইউপি সচিবও চাল বিতরনের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। মাষ্টার রোলে স্বাক্ষর গ্রহণ ছাড়াই যেনতেনভাবে লোকজনের মাঝে গড়ে ৬-৭ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারীভাবে প্রতিজনকে ১০কেজি করে চাল বিতরনের নিয়ম থাকলেও রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ইউপি সদস্যরা সেটা মানেননি। এভাবে চাল বিতরণ করে বরাদ্দের সিংহভাগই চালই কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

রাজাখালী সুন্দরী পাড়া ও বকশিয়া ঘোনা থেকে ত্রানের চাল পাওয়া গৃহবধূ মর্জিনা বেগম, আছমা খাতুন, রেজিয়া বেগম, সফুরা বেগম, আবদুল গফুরসহ আরো কয়েকজন লোক অভিযোগ করেছেন, তাদের ৬-৭ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।  ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা বলে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন এসব দরিদ্র লোকজন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর বলেন‘ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য তার ইউনিয়নে ৭ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব চাল আমার ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড়ের প্রায় ৭ হাজার জনকে বিতরণ করা হবে। ১০কেজির পরিবর্তে প্রতিজনকে ৬-৭ কেজি করে কেন দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেননি। টেক অফিসার ও ইউপি সচিবের অনুপস্থিতিতে কেন চাল বিতরণ করা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর বলেন ‘আমিই এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান; সুতরাং আমি যা করি তাই নিয়ম। এর বাইরে আমি আর কিছুই মানি না।’

পেকুয়ার ইউএনও মো. মারুফুর রশিদ খানের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  টেক অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া ত্রাণের চাল বিতরণ করার নিয়ম নেই। রাজাখালীতে ত্রানের চাল বিতরণে কোন ধরনের অনিয়ম হলে তিনি বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন