ফটিকছড়িতে মাদ্রাসার শিক্ষকের অমানুষিক নির্যাতনে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র গুরুতর আহত ॥ রামগড় হাসপাতালে ভর্তি

R amgarh 03
নিজস্বসংবাদদাতা, রামগড়:
রামগড়ের পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ির বাগানবাজর ইউনিয়নের চিকনছড়ায় একটি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকদের অমানুষিক নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মো: নাছির উদ্দিন(১২)। গতকাল শুক্রবার আহত শিশু ছাত্রটিকে রামগড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চিকনছড়া এমদাদুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসায় বৃহষ্পতিবার রাতে ছাত্রটির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাছির উদ্দিন জানায়, ঐ মাদ্রাসার বড় হুজুর(প্রধান শিক্ষক) ইলিয়াছের অফিস রুমের বাক্স থেকে গত বুধবার তাঁর ছেলে( মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র) আব্দুল আজিজ ৫ হাজার টাকা চুরি করে। সে নিজে এ চুরির ঘটনা দেখে ফেলায় আজিজ তাকেও দুই হাজার টাকা দেয়।

বৃহষ্পতিবার রাতে নাছিরকে টাকা চুরির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুরো ঘটনা জানিয়ে দেয় এবং বড় হুজুরের ছেলের দেয়া দুই হাজার টাকাও সে ফেরৎ দেয়। আহত নাছির জানায়, বড় হুজুরের ছেলের নাম বলে দেয়ায় তিনি ক্ষুব্দ হন এবং টাকা চুরির জন্য তাকে দায়ী করেন। মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করতে ইলিয়াছ হুজুর বৃহষ্পতিবার রাত ১০টার দিকে নাছিরকে তাঁর অফিস রুমে নিয়ে বেদম পেটায়। এক মূহুর্তে মাদ্রাসার অন্য দুই শিক্ষক ছেলেটিকে মাটিয়ে শুইয়ে দুই উরুর উপর মোটা বাঁশ দিয়ে দুপাশ থেকে চেপে ধরে ।

এ অবস্থায ইলিয়াছ হুজুর ও অপর শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহ(ময়মনসিংহ হুজুর) লাঠি দিয়ে ছেলেটির দুপায়ের তালুসহ সমস্ত শরীরে এলোপাথারি পেটায়। অমানুষিক নির্যাতনের এক মূহুর্তে শিশু নাছির অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

দাঁতমারার কাঞ্চনাথলি গ্রামের বাসিন্দা আহত নাছিরের বাবা আব্দুল মান্নান জানান, বৃহষ্পতিবার রাত ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কল করে ইলিয়াছ হুজুর তাঁকে বলেন, নাছির আত্মহত্যা করতে পারে অথবা কোথাও পালিয়ে যেতে পারে। সেজন্য যেন তিনি এসে তাঁর ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যান।

তিনি আরও জানান, গতকাল শুক্রবার সকালে তিনি তাঁর বড় ছেলে ইয়াছিনকে মাদ্রাসায় পাঠালে ইলিয়াছ হুজুর তাকেও মারধর করে পুলিশে দেয়ায় হুমকী ধমকী দেন। পরে তিনি নিজে এসে আহত অবস্থায় নাছিরকে মাদ্রাসা থেকে নিয়ে এসে বাগানবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী ঘটনাটি জানান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে আহত অবস্থায় নাছিরকে রামগড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বাগানবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী জানান, শিশুটির উপর শিক্ষকরা যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে তা নজীরবিহীন। শিশুটির সমস্ত শরীরজুড়ে এ নির্যাতনের দাগ দেখে তিনি নিজেও হতবাক হন বলে জানান। তিনি শিশু নির্যাতনকারী শিক্ষকদের শাস্তি দাবী করেন।

এদিকে মোবাইল ফোনে ইলিয়াছ হুজুরের সাথে আলাপে তিনি নির্যাতন চালানোর কথা স্বীকার করে বলেন, টাকা চুরির অপরাধে সকল শিক্ষকের উপস্থিতিতে নাছিরের বিচার করা হয়েছে। তাঁর নিজের ছেলে টাকাগুলো চুরি করার কথা তিনি অস্বীকার করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের বেত্রাঘাত করা যে আইনত নিষিদ্ধ তাও তিনি অবগত নন বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন