‘ফ্রি মার্কেট’ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করবে
আবদুল্লাহ নয়ন:
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী হয়েও কক্সবাজারে এখনো আশানরূপ পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করা ও পর্যটকের আগমন ঘটানো সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পর্যটন খাতে যুগোপযোগী নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হবে। বাড়াতে হবে পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। অবশ্য তা হতে হবে দেশিয় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে। ক´বাজারের পর্যটন উন্নয়নে পার্বত্য নিউজ ডট কম’র ২০ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ ১ম পর্ব।
ফ্রি মার্কেট
‘ফ্রি মার্কেট’ হচ্ছে উন্মুক্ত মাঠ কিংবা রাস্তার দু’পাশ বন্ধ রেখে ছোট ছোট ভ্রাম্যমান দোকান দিয়ে একটি ‘বাজার’ বসানো। যাতে সব ধরণের পণ্য সূলভ মূল্যে ক্রয় করতে পারবেন ক্রেতারা। বিশেষ পর্যটন এলাকাগুলোতে এর গুরুত্ব ও চাহিদা বেশি। থাইল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়াসহ উন্নত বিশ্বের প্রায় দেশে চালু আছে ‘ফ্রি মার্কেট’ ব্যবস্থা। ‘ফ্রি মার্কেট’কে কেন্দ্র করে অনেক দেশের পর্যটন শিল্প এগিয়ে গেছে বহুদুর। তারা সমৃদ্ধ হয়েছেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
ফ্রি মার্কেট’র সুবিধা : ফ্রি মাকেটে মুদি দোকান, ফুড জোন, কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প থেকে শুরু করে মেডিসিন-এমনকি ভ্রাম্যমান প্যাথলজি পর্যন্তও রাখা যায়। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের নগরী কক্সবাজারে নানা দেশ থেকে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক আসেন। যাতায়াত ব্যবস্থাসহ নানা অসুবিধার কারণে পর্যটকরা শহর কিংবা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে পারেন না। একজন পর্যটক চাইলেন পান, সুপারী, আদা, রসুন কিংবা মাঠ থেকে তোলা লবণ ক্রয় করবেন। সেজন্য তাকে বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরতে হয়। অনেক সময় বিরক্ত বোধ করে পর্যটকরা তা না কিনেই ফিরে যান। এজন্য ফ্রি মার্কেটে সব ধরণের জিনিস থাকলে পর্যটকরা এক জায়গা থেকেই পছন্দের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে উপকৃত হবেন।
কক্সবাজারে যেভাবে করা সম্ভব : বিশিষ্ট পর্যটন গবেষক আবু আহমেদ ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, চীনের যেসব স্থানে পর্যটকদের আগমন বেশি। সেখানে তারা সপ্তাহের এক-দুই দিন ‘ফ্রি মার্কেট’র ব্যবস্থা করেন। রাস্তার দু’পাশ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে ছোট ছোট ভ্রাম্যমান দোকান বসানো হয়। চারিদিকে পর্যটকে ভরপুর। যার যেটি পছন্দ-সেটি কিনছে। পুরো রাত চলে বেচা-কেনা। ভোরে ভ্রাম্যমান দোকানগুলো যার যার স্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তখন রাস্তায় গাড়ি কিংবা জনচলাচল ব্যাহত হয় না।
কক্সবাজারের হলিডে মোড় থেকে লাবণী পয়েন্ট, ১৭ ইসিবি তথা ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসা রোড হয়ে সৈকতের কবি নুরুল হুদা চত্বর পর্যন্ত, লাবণী পয়েন্ট হয়ে সী ইন পয়েন্ট পর্যন্ত কিংবা গলফ মাঠ, বাহারছড়া গোল চত্বর মাঠ সহ ফ্রি এলাকাগুলোতে এ মার্কেট বসানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এজন্য সর্বপ্রথম আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। প্রয়োজন দেশকে এগিয়ে নেয়ার ভাল চিন্তার। পর্যটকরা কি চায়? তাদেরকে কিভাবে ধরে রাখা যায়-সেটি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এজন্য সরকারকেই সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিতে হবে। কক্সবাজারে এ উদ্যোগ নিতে পারেন জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের একার পক্ষে এ কাজ যদি সম্ভব না হয়। তাহলে বেসরকারী কোন সংস্থা কিংবা ব্যক্তি খাতে অনুমতি দিয়ে ছেড়ে দেয়া যায়। ‘ফ্রি মার্কেটে’ অবস্থানকারী ব্যবসায়ীরা ৫/১০ টাকা করে চাঁদা দিতে পারেন। যেটি দিয়ে বাজারের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে কেয়ার-টেকার নিযুক্ত করা যায়।
পর্যটন বিশ্লেষক সী-ইন পয়েন্টস্থ ফুড ভিলেজ’র স্বত্ত্বাধিকারী এস এম কিবরিয়া বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকেরা কক্সবাজারে ‘ফ্রি মার্কেট’ আছে কিনা জানতে চায়। না পেয়ে তারা কেবল হোটেলে রাত যাপন করে সৈকত দর্শন শেষে দেশে ফিরে যায়।
পর্যটন বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কক্সবাজারের উন্নয়নে পর্যটকদের স্বার্থে ‘ফ্রি মার্কেট’ শীঘ্রই চালু করা গেলে পর্যটন খাত আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে। বিশ্বের দরবারের নতুন করে নাম লেখাবে কক্সবাজার। আর এজন্য কোটি কোটি ডলারের প্রয়োজন নেই-প্রয়োজন কেবল বিনামূল্যের উদ্যোগের।