বদরখালীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দোকানপ্লট দখলের অভিযোগ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদ বদরখালীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও সমিতির প্রয়াত সম্পাদকের নামে বরাদ্দকৃত চারটি দোকানের প্লট জবরদখলের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে দোকানের প্লট গুলো দখলে নিয়ে গতকাল সকাল থেকে স্যালো মেশিন বসিয়ে পাশের সাগর চ্যানেল থেকে বালু উত্তোলনপূর্বক দোকানের ওই জায়গায় ভরাট করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগী প্লট মালিকপক্ষের লোকজন অভিযোগ তুলেছেন, দোকানের প্লটগুলো জবরদখলের ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বদরখালীর সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও তাঁর ছেলে নুর মোহাম্মদ তানভীর।

বদরখালী বাজারের পশ্চিমাংশে পাউবোর বেড়িবাঁধ লাগোয়া চারটি দোকানের প্লট মালিক বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আলহাজ এম. হোছাইন আহমদ ও সমিতির প্রয়াত সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী। তৎমধ্যে সমিতির বরাদ্দ অনুকুলে একটি ও ক্রয়সূত্রে দুইটিসহ মোট তিনটির মালিক সাবেক চেয়ারম্যান হোছাইন আহমদ।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দোকানপ্লট মালিক সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ হোছাইন আহমদ শুক্রবার চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বদরখালী সমিতির সম্পাদক নুরুল আমিন জনির হাতে।

অভিযোগ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বদরখালী সমিতির সম্পাদক নুরুল আমিন জনি। তিনি বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান হোছাইন আহমদ ও সমিতির প্রয়াত সম্পাদক ইকবাল বদরীর দোকানপ্লট জবরদখলের ঘটনাটি কোনভাবে মেনে নেওয়া যায়না। মূলত সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী পেশি শক্তি দেখিয়ে এ কাজটি করছেন। সমিতির বর্তমান কমিটির সম্পাদক হিসেবে আমি তাকে বারণ করেছি, দোকানের প্লটগুলো দখল না করতে। তিনি কথা শুনছেনা।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম হোছাইন আহমদ বলেন, ১৯৮২ সালে বদরখালী সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্বান্তের আলোকে সমিতির ১৬২জন সভ্যাকে একটি করে দোকানপ্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তদমধ্যে ১২৪ নং দোকানপ্লট মালিক সমিতির প্রয়াত সম্পাদক ইকবাল বদরীর বাবা কবির আহমদ। ১২৭ নং দোকানপ্লট আমার বাবা ছৈয়দ আহমদ নামীয় বরাদ্দকৃত। অপর ১২৫ ও ১২৬ নং প্লট দুইটি আগের মালিক থেকে পরবর্তীতে আমি ক্রয় করি। এতদিন আমরা প্লটগুলো খালী জায়গা হিসেবে রেখে দিই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দোকানপ্লটের পাশে সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী নুরে মর্জিনা জন্নাত লাকীর নামে কেনা একটি দোকান আছে। কয়েকদিন আগে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর তার স্ত্রীর দোকানঘর সংস্কারের অজুহাতে কৌশলে আমার তিনটি ও সমিতির প্রয়াত সম্পাদকের একটি দোকানপ্লট দখলে নেমেছে। পাশাপাশি চলাচল পথের জায়গাও তিনি দখলে নিয়েছেন। এখন পাশের সাগর চ্যানল থেকে সেলো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনপূর্বক সেখানে ভরাটের অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এব্যাপারে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বদরখালী সমিতির নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতি নুরুল আলম সিকদারের ছেলে সরওয়ার আলম সভাপতি পদে এবং কমিটির বেশিরভাগ সদস্য ফের প্রার্থী হয়েছেন। একারণে সবাই ভোটের মাঠ নষ্ট হবে এই আশঙ্কায় জবরদখলের বিরুদ্ধে কথা বলছেনা। এ সুযোগে আ.লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী ও তার ছেলে তানভীর সাবেক চেয়ারম্যান ও সমিতির প্রয়াত সম্পাদকের দোকান প্লট দখলে মেতে উঠেছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, আমি কারো দোকানপ্লট দখল করিনি। মূলত আমি সমিতি থেকে নিজের নামে বরাদ্দকৃত ও আমার স্ত্রী লাকীর নামে অন্যজন থেকে কেনা দোকান প্লটে সংস্কার কাজ করছি। এই দোকান প্লট আমি ১৯৯৪ সাল থেকে ভোগদখলে রয়েছি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ভুক্তভোগী দোকান প্লট মালিক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটির আলোকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ নিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ, দোকানপ্লট দখল, বদরখালী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন