বাইশারীতে টিসিবি’র পণ্যে পঁচা চাল বিক্রির অভিযোগ

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে টিসিবি’র পণ্যে খাবার অনুপযোগী পঁচা ও নিম্নমানের চাল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের চাউলের কথা সকলে স্বীকার করলেও দায় নিচ্ছেন না কেউ। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন ডিলাররা।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদে বেলা ১১টা থেকে ৯টি ওয়ার্ডে এক হাজার উপকারভোগীর মাঝে টিসিবি’র এই পণ্য বিতরণের কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী ওএমএস ডিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে বিতরণ করেন টিসিবি’র ডিলারগণ।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার টিসিবি’র ডিলার অজয় এন্টারপ্রাইজের অজয় বলেন, জনপ্রতি ২ কেজি ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেলের সাথে ৫ কেজি করে চাল ৪৭০ টাকার মাধ্যমে বিতরণ শুরু হলে উপকারভোগীরা নিম্নমানের খাবার অনুপযোগী চাল দেখতে পেয়ে ক্রয় করতে আপত্তি করেন।

টিসিবি’র উপকারভোগী নুরুল ইসলাম বলেন, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ৫ কেজি চাল ৪৭০ টাকায় ক্রয় করেছিলাম। পরে দেখি চালটা খাওয়ার মতো নয়। পঁচা ও দুর্গন্ত যুক্ত।

মধ্যম বাইশারী গ্রামের ছৈয়দুল হক (৭০) বলেন, একেবারে পঁচা চাউল, হাঁস মুরগীও খাবে না।

একই গ্রামের আবদুস ছালাম টিসিবি থেকে ক্রয়কৃত নিম্নমানের পঁচা চাউলের নমুনা দেখিয়ে জানান, এসব খাবার অনুপযোগী চাল দেখে পণ্য ক্রয়ের সময় আপত্তি করলে তারা বলেছিল নিলে নেন না হলে করার কিছু নেই, তাই কিনেছি। তবে চাল খাবার অনুপযোগী হওয়ায় খেতে পারিনি।

প্রায় অর্ধশতাধিক টিসিবির কার্ডধারী অভিযোগ করে বলেন, পঁচন ধরা, পোকায় খাওয়া ও লাল টুকটুকে চাউল। এ গুলো হাঁস-মুরগীকে খাওয়ানো ছাড়া উপায় নেই। তারা প্রশ্ন করেন, সরকার স্বল্প মূল্যে গরিব-অসহায়দের টিসিবি’র মাধ্যমে চাউল বিতরণের উদ্যাগ গ্রহণ করেছেন অথচ তা যদি খাওয়াই না যায় তাহলে এই চাল নিয়ে লাভ কি। একই অভিযোগ প্রায় উপকারভোগীর। ভুক্তভোগীরা তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন উপকারভোগীরা।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা খাদ্য অফিসার মোহাম্ম সেলিম হেলালী জানান, তিনি জেলা শহর বান্দরবান ছিলেন। তবুও এ পঁচা চাল সংক্রান্ত খবর শুনে তিনি স্থানীয় ডিলার ওচাথোয়াই চাককে ফোন করে ভুক্তভোগীদের তোলা অভিযোগের চাল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।

চালের স্থানীয় ডিলার ওচাথোয়াই চাক এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি এ চাল কক্সবাজারের রামু চালের গোদাম থেকে কিনে এনেছেন। কয়েক বস্তা খারাপ ছিলো, যা বিক্রি না করে ফেরত দিয়েছি। ভালগুলো বিক্রি করে দিই।

তেল ও ডালের ডিলার অজয় ভট্টাচার্য বলেন, তিনি ডিলার ঠিকই। তবে তেল ও ডালের। চালের ডিলার অন্যজন। তবে ভোক্তভোগীদের আপত্তির মুখে কয়েক বস্তা চাল বিক্রি না করে ফেরত দিয়ে দেন ডিলার ওচাথোয়াই চাক।

টিসিবি’র ডিলার অজয় বলেন, ডাল এবং তেল আমাদের চাউলগুলো আমাদের নয়।

ওএমএস ডিলার বুলেট বলেন, আমরা খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে টিসিবি’র ডিলারদের সরবরাহ করেছি। সব বস্তা দেখে নেয়া সম্ভব হয়নি। ওসিএলএসডি উপরের বস্তাগুলো ভালো দিলেও নিচের বস্তায় নিম্নমানের চাউল দিবে এটা বুঝতে পানিনি ।

বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলম কোম্পানি বলেন, টিসিবি’র চাউলগুলো নিম্নমানের হওয়ায় বিতরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিনকে বিষয়টি জানানো হলে তিন মুঠোফোনে জানান, নিম্নমানের চাল বিতরণের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তাদেরকে ভালো চাল দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখবেন বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ, টিসিবি, বাইশারী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন