চকরিয়ায় সার্ভেয়ার ও তহশিলদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ

fec-image

চকরিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও কাকারা ভূমি অফিসের তহশিলদার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও সেবা গ্রহীতাদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অফিসে এই দুই কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে খতিয়ান সৃজন, মনগড়া বিভিন্ন রিপোর্ট প্রতিবেদন দিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি করে আসছেন বলে দাবি করেছেন চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মঈনু উদ্দিন নামে এক সেবা গ্রহীতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগে জানান, চকরিয়া ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার মশিউর রহমান যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে খতিয়ান সৃজন, সার্ভেয়ার রিপোর্ট প্রতিবেদন ও নানা কাজে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে হয়রানি, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে আসছে। কাগজপত্র সঠিক থাকলেও টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে তিনি সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে কুটকৌশলে মাধ্যমে সেবা গ্রহীতাদের সুকৌশলে প্রতিনিয়ত হায়রানি করে যাচ্ছেন। এছাড়া সার্ভেয়ারের বিভিন্ন কাজে এসব অনিয়মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন কামাল নামে এক ওমেদার।

চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মো. মঈনু উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, চকরিয়া পৌরসভা এলাকায় লক্ষ্যারচর মৌজায় আমার পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত নালিশী জমির বিএস ২৩৯ নস্বর খতিয়ানের মোট জমিতে ভুলবশত রেকর্ড হয় ৫.০৯ একর। যা করণিক ভুল মিচ মামলা নং ১২১/১৪-১৫ ইং মূলে উচ্চ আদালত মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অথচ মোট জমির পরিমাণ ভুল ৫.০৯ একর স্থলে ৪.৬৫ একর হয়ে সংশোধন করা হয়। কিন্তু চকরিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোটা উৎকোচের বিনিময়ে চকরিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিস মামলা ১২৩/২২-২৩ বাদী পক্ষকে খুশি করতে ভুলকৃত ৫.০৯ একর জমির হিসেব দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আমার দীর্ঘদিনের ভোগদখলীয় জায়গায় কোন ধরনের বসতি ও স্থাপনা উল্লেখ না দেখিয়ে এমনকি আমার জমির কোন ধরনের কাগজপত্র সঠিকভাবে পর্যালোচনা না করে মনগড়া নিজের ইচ্ছেমতো একতরফাভাবে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ভুক্তভোগী আরো জানান, বিএস ২৩৯ নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক ছমন খাতুন থেকে এবং রেকর্ড মালিক লাল মিয়া ওয়ারিশগণ থেকে ১৯৯৪ সালের ১০ মার্চ রেজি: কবলা নং-৯২৪ খরিদসূত্রে মালিক হয় আমার পিতা মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন। আমার পিতা জীবিত থাকাকালীন অত্র দলিল মূলে নামজারি মামলা নং-১০০৮ (১)/১৭-১৮ ইং মূলে বিএস ৫৫৫৮/৬৩০০ দাগের ০.০৫ একর জমি নিয়ে ৩৫৭৬ নম্বর খতিয়ান সৃজন করেন। পরবর্তীতে সৃজিত ৩৫৭৬ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৫৫৫৮/৬৩০০ দাগের জমিতে দেখতে পাই জমি আমার দখলে নেই। তাই বেদখলীয় জমি আপোষে বাদ দেয়ার জন্য চকরিয়া ভূমি অফিসে মিস মামলার বাদী মোহাম্মদ হোসেন গং নামজারী আপিল মামলা নং-১১৬/২১ ইং দায়ের করেন। বর্তমানে কক্সবাজার এডিসি (রিভিনিও) আদালতে রায় দেওয়ার পর্যায়ে রয়েছে মামলাটি। সেই প্রেক্ষিতে বেদখলীয় জমি বাদ দিয়ে দখলীয় জমি নিয়ে /প্রাপ্য জমির চেয়ে কম জমি নিয়ে বিএস ৫৫৬২ দাগের ০.০২৯২ একর, ৫৫৬৬ দাগের ০.০৪৩৩ একর মোট ০.০৭২৫ একর জমি নিয়ে অত্র বিরোধীয় সৃজিত ৩৯৫৯ নম্বর খতিয়ান আমার পিতার নামে সৃজনপূর্বক তথায় অদ্যাবধি ভোগদখলরত আছি। তাছাড়া উক্ত জমির নালিশি বিএস ২৩৯ নম্বর খতিয়ান থেকে ওয়ারিশসূত্রেও প্রাপ্ত হয় ভুক্তভোগী।

তিনি বলেন, একইভাবে কাকারা ভূমি অফিসের তহশিলদার মো. রফিকুল আলম বিরোধীয় জায়গা নিয়ে সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন আলোকে অনুরূপভাবে ভুক্তভোগীর কাগজপত্র পর্যালোচনা না করে অসুস্থতা দেখিয়ে তিনিও প্রতিবেদন দাখিল করেন। তা নিয়ে আমি সংক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। ভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট এই দুই কর্মকর্তার এহেন অনিয়ম কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে পুনর্তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মঈনু উদ্দিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেবাগ্রহীতা জানান, কোচপাড়া মৌজার ০.১০০০ একর নামজারি খতিয়ান করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রতিবেদনের পর সার্ভেয়ারের কাছে গেলে সার্ভেয়ার তাকে রেকর্ডীয় মালিকের অংশ জমি নাই মর্মে জানায়। তিনি উক্ত রেকর্ডীয় মালিক থেকে সর্বপ্রথম খরিদ মালিক মর্মে চ্যালেঞ্জ করলে সার্ভেয়ার আমাকে বালাম খুলে বলেন এই যে দেখেন, আপনাকে যিনি জমি বিক্রি করেছেন তাহার নামে গোল দেওয়া আছে। পরবর্তীতে সার্ভেয়ারের সহযোগী উমেদার ছরওয়ার আমাকে একটা গোল দাগ কাটলে ভূমি অফিসের কর্মচারী আমিনের সাথে কামাল বাহিরে চলে যায়। তখন কামাল আমাকে বলেন এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা দিলে গোল চিহ্ন চলে যাবে। আমি যেহেতু মেয়ে বিয়ে দেবো তাই জমি বিক্রি করতেই হবে। তাই অনন্যেপায় হয়ে কামালকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে আগ্রহী হই। সার্ভেয়ারের সহযোগী কামালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রচার হলেও তিনি বহাল তাবিয়তে রয়েছে। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন কামালের খুটির জোর কোথায়? উক্ত কামালকে নামজারি মামলা নম্বর দিয়ে রাখলে সকালে অফিস চালু হওয়ার সাথে সাথে নাকি পাশ হয়ে যায়। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, অফিস সহকারী এবং এমএলএসএস সকলেই কামালের আর্শীবাদ ও সহযোগিতা নিয়ে চলে। কোন কারণে কামালের সাথে অফিসের কারও বনিবনা না হলে তিনি সরকারি কর্মচারীর বদলির টাকা ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি অফিসের একজন কর্মচারী জানান, এই মুহূর্তে কামালের বিরোধিতা করলে তাকে নাকি অন্যত্রে বদলি করা হবে। তার কাছে সার্ভেয়ারসহ কয়েকজন ব্যক্তির সুদৃষ্টি রয়েছে। ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া কোন ধরনের কাজ হয় না, এ ধরনের তথ্য দেন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে চকরিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মশিউর রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার উপরে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোন ধরনের উৎকোচের বিনিময়ে রিপোর্ট বা প্রতিবেদন দেয়া হয় না। এখানে বাদী/বিবাদীর কাগজপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিন তদন্তপূর্বক মূলত প্রতিবেদন দেয়া হয়।

অভিযোগের ব্যাপারে তহশিলদার রফিকুল আলমের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া য়ায়নি।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামানের কাছে মুঠোফোনে অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে মামলার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে তা আগামী বুধবার দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব রযেছে বলে অবগত করেন। তিনি আরো বলেন, তার দপ্তরে অনেকগুলো মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এখন কোনটার বিষয়ে অভিযোগ, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অনিয়ম, অভিযোগ, চকরিয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন