নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম

উপকারভোগীদের কাছ থেকে কাঠ, টিন, মালামাল পরিবহণ খরচ, আবার কারো থেকে শ্রম আদায় করে নির্মিত হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। এই শর্ত যারা মেনেছেন তারাই কেবলমাত্র টিনসেড সেমিপাকা ঘরের মালিক হতে পারছেন। এভাবে ঘর বন্টনে আর্থিক লেনদেনের কারনে খোঁদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতারা। আর স্থানীয় প্রশাসন জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অনেকটা দায়সারাগোচর তদন্ত সেরেছেন অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ভূমিহীণ ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৪৩টি ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে ঘরগুলো বরাদ্দ দওয়া হয়েছে। তবে অলিখিত শর্তে উপকারভোগীর কাছ থেকে ঘরের ছাউনীর জন্য কাঠ, টিন আবার কারো কাছে মালামাল পরিবহণ বাবদ খরচ এবং শ্রম আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্ধারিত ঘরের বরাদ্দ ছাড়াও মালামাল পরিবহণ বাবদ ইতোপূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে অতিরিক্ত পরিবহণ ব্যায় ও জ্বালানী ব্যয় এবং নিয়মিত কাজের গুণগতমান পিআইসি কর্তৃক পরিদর্শণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের যোগসাজোসে এসব ঘর নির্মাণ কাজে অনিয়ম আর দুর্নীতি জড়িয়ে পড়েছে। বাইশারী ইউনিয়নে নির্মিতব্য গৃহগুলো নিয়মিত পরিদর্শণ না করায় নিম্মমানের মালামাল দিয়ে এবং উপকারভোগীদের ঠকিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

এই প্রসঙ্গে বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের জন্য কাঠসহ মালামাল নেওয়ার বিষয়টি এলাকার মানুষ থেকে শুনেছেন। তবে একজন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত চেয়ারম্যান কর্তৃক অর্থ আদায় করার খবরটি খুবই দুখজনক। প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এই কাজে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাইশারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছালেহ নুর রিপন জানান, সম্প্রতি ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনৈতিক মিটিং করতে গিয়ে একাধিক মানুষ থেকে বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম অর্থ আদায় করেছেন এমন খবর শুনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছেন। কিন্তু খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর চেয়ারম্যান উপকারভোগীদের নানাভাবে হুমকি ও হয়রানী করছেন। তাই সব উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের পর বাইশারী ইউনিয়নের কাগজীখোলা ২নং ওয়ার্ডের আথুইমং পাড়া এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি। ১ এপ্রিল তিনি ওই এলাকার তিনজন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। এসময় এক উপকারভোগী ছাউনীর জন্য ১২ হাজার টাকার কাঠ,  এক গাড়ি বালি নিজেরা কিনেছেন বলে স্বীকার করলেও অন্যরা প্রকাশ্যে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

এই প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মো. মজনুর রহমান জানান, ঘর দেওয়া বাবদ অফিস কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। একটি গ্রাম পরিদর্শনকালে উপকারভোগীরা বলেছেন, কাঠ কিনার পর চেয়ারম্যান সমন্বয় করবেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন নেতা তিনজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। তবে যারা ঘর পেয়েছেন তাদেরকে আমি ১৩ ফুট গাছের টাকা দিয়েছি। অফিস বা ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়নি।

এই প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মংহ্লা অং মারমা বলেন, ক্যাথুইপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে অনিয়মের খবর মানুষের কাছ থেকে শুনেছি। সম্প্রতি আথুইমংপাড়া তদন্ত করেছেন ইউএনও। তবে এই বিষয়ে মোবাইলে বিস্তারিত কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অনিয়ম, ঘর নির্মাণ, নাইক্ষ্যংছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন