আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অন্যরা একজোট

খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগে হাইব্রিডদের দাপট ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ

fec-image

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগে কোন্দল ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। হাইব্রিডদের দাপট ও দলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করা, স্বেচ্ছাচারিতা,অনিয়মতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিকভাবে নিজের মনগড়া মতো সংগঠন পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী গ্রুপ আলাদা বৈঠক ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে স্বাক্ষাতসহ নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের গ্রুপটির মতো জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বৈঠক করেছেন। তবে এ সব আমলে নিতে নারাজ জেলা আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, গত (৭ জুন) রাতে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শিবশঙ্কর দেব’র সভাপতিত্বে সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগ’র সাবেক সভাপতি স্বপন চৌধুরী, ধনা চন্দ্র সেন, জেলা ছাত্রলীগ’র আহ্বায়ক উবিক মোহন ত্রিপুরা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল কবীর টিপু,জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও খাগড়াছড়ি চালক সমবায় সমিতি লি.এর সভাপতি মনোতোষ ধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর চুমনি চাকমা, সাবেক ছাত্রনেতা নুর আহম্মদ সরকার, চিন্তা হরন শর্মা, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর অতীশ চাকমা ও সাবেক পৌর ছাত্রলীগ নেতা ফরিদুজ্জামান স্বাধীন।

সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগে হাইব্রিড নেতাদের কারণে জেলা-উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দলে মূল্যায়ন পাচ্ছে না। দুঃসময়ে যাঁরা দলের জন্য জেল জুলুম খেটেছেন, দিনের পর দিন খেতে পাইনি, রাতে বাসা-বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি,তাঁরাই এখন অবহেলিত।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল বিকালে বিকেল পর্যটন মোটেলের হলরুমে গোপনীয়তা রক্ষা করে এক সভা করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সহ-সভাপতি, উপদেষ্টাসহ নানা নেতাকর্মীরা। বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা সভার সভাপতিত্ব করেন।

এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের ১১ জন সহ-সভাপতির মধ্যে ৮ জন সহ-সভাপতিসহ একাধিক নেতা অংশ নেন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী নলীগের উপদেষ্টা জাহেদুল আলম, অ্যাডভোকেট নাসির আহমেদ উদ্দিন, খগেশ্বর ত্রিপুরা, সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা, তপন কান্তি দাশ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র শামছুল হক ও জেলা কমিটির সদস্য জয়নাব দেব সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিকভাবে নিজের মনগড়া মতো করে সংগঠন চালানোসহ নানা স্বেচ্ছাচারিত অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে গত ৯ এপ্রিল বিকালে কয়েক প্রভাবশালী নেতার বর্জনের মধ্যদিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। সভা বিকাল সাড়ে ৫টার শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।

বর্ধিত সভায় আলোচনায় প্রাধান্য পায় আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে দলের বাইরে একাধিক নেতার আলাদা বৈঠক। সভায় তৃণমূল নেতারা বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি জানিয়ে বিরোধ সৃষ্টি না করে দলকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়া একটি পক্ষ উদ্দেশ্যেপ্রনোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখা করছে, যা দল ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে বলেও মত দেন। অনেকে আলাদা বৈঠককারীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।

অপর দিকে, গত ২৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাথে স্বাক্ষাত করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরার নেতৃত্বে বর্ধিত সভা বর্জনকারীরা।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জাহেদুল আলম, খগেশ্বর ত্রিপুরা, সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা, তপন কান্তি দাশ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র শামছুল হক,খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র মো: রফিকুল আলম ও জেলা কমিটির সদস্য জয়নাব দেব সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রভাবশালী গ্রুপের এ সব তৎপরতা আমলে নিতে চান না জেলা আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, কারো কোন অভিযোগ থাকলে দলীয় ফোরামে কথা বলার সুযোগ আছে। হাইব্রিড কারা তা জানা নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে দলের লোক ছাড়া ও সুশিল সমাজ দলীয় মনোয়নের জন্য তৎপরতা চালায়। আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল, যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারণ করবেন কাকে মনোনয়ন দিবেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের প্রীতি সম্মেলনতে তিনি নিছক চা-চক্র বলে উড়িয়ে দেন। তার মতে, খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগ অতীতের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী।

তিনি অভিযোগ করেন, যারা বিগত দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে, তারা আবার দলের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র অতীতের মতো সফল হবে না।

অপর দিকে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতায় টানা তিন মেয়াদে দলের সু-সময়ে বসন্তের কোকিলরা দলের সকল সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে আর বঞ্চিত হচ্ছে ত্যাগী নেতারা। বিএনপি-জামাতের অনেক নেতা এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। তারা বিভিন্ন পদে থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ প্রকৃত-ত্যাগী আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অবহেলিত-বঞ্চিত।

উল্লেখ, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের কাউন্সিলেও দ্বিতীয় বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন।

২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল চরমে পৌছে। কোন্দলকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জাহেদুল আলমকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্ত কোন্দল থামে নি। দলীয় অফিসে তালা ঝুলে প্রায় দেড় বছর। এ কোন্দলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ হামলা-পাল্টা হামলায় দলীয় কর্মীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। পরবর্তিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে কোন্দল নিসরস হয়।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সামনে রেখে আবারও সে কোন্দল দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ, আওয়ামী লীগ, খাগড়াছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন