বরের কাজ নিজেরাই করছেন কনেরা, অর্থ হাতাতে গণবিবাহে মহা জালিয়াতি

fec-image

ভারতে গণবিবাহে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি প্রকল্পের টাকা হাতানোর জন্য এই কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই জালিয়াতির ঘটনায় দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে জালিয়াতির এই গণবিবাহের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। ওই ভিডিওতে কনেদের নিজেই নিজেদের গলায় মালা পরাতে দেখা গেছে। যদিও এটি বরের করার কথা।

গত ২৫ জানুয়ারি দেশটির উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায় ভুয়া এই গণবিয়ের আসর বসে বলে জানা গেছে। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিয়ের নামে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশে দুই সরকারি কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি গণবিবাহের অনুষ্ঠানে নববধূদের নিজেদের মালা নিজেদেরই পরার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর এই জালিয়াতিটি প্রকাশ পায়।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কিছু পুরুষ বরের সাজে তাদের মুখ লুকিয়ে আছেন। উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলায় গত ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই গণবিবাহের অনুষ্ঠানে প্রায় ৫৬৮ দম্পতি বিয়ে করেছিলেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে, পরে দেখা গেছে, বর এবং কনে সেজে থাকার জন্য বেশ কয়েকজনকে অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।

স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, ভুয়া বর এবং কনে সেজে থাকার জন্য পুরুষ ও নারীদের ৫০০ রুপি থেকে ২ হাজার রুপি করে দেওয়া হয়েছিল। বিমল কুমার পাঠক নামের ওই ব্যক্তি বলেছেন, ‘কিছু নারীর (মালা পরানোর) কেউ ছিল না। তারা নিজেরাই নিজেদের ভার্মালা (মালা) পরিয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি, এসব লোকেদের ৫০০ রুপি থেকে ২ হাজার রুপি করে দেওয়া হয়েছে।’

১৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এনডিটিভিকে বলেছেন, গণবিবাহের অনুষ্ঠানে নিজেকে বর হিসাবে জাহির করার জন্য তাকে অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। রাজ কুমার নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি সেখানে বিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে সেখানে বসিয়ে দেয়। তারা বলেছিল, তারা আমাকে টাকা দেবে। তখন অনেককেই সেখানে বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল।’

গণবিয়ের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজেপি বিধায়ক কেতকি সিং। কথিত জালিয়াতির সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে অনুষ্ঠানের মাত্র দুদিন আগে জানিয়েছিল। আমি সন্দেহ করেছিলাম, সেখানে রহস্যময় কিছু আছে। কিন্তু এখন এ বিষয়ে সম্পূর্ণ তদন্ত করা হচ্ছে।’

সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, বিয়ের জন্য দম্পতিদের ৫১ হাজার রুপি করে দেয় উত্তর প্রদেশ সরকার। এর মধ্যে ৩৫ হাজার রুপি পান কনে। ১০ হাজার রুপির বিবাহের সামগ্রী এবং বিয়ের জন্য ৬ হাজার রুপি দেওয়া হয়।

মূলত এই অর্থ হাতানোর জন্যই এই জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, অভিযুক্তদের কাছে কোনও অর্থ স্থানান্তর করার আগে এই কেলেঙ্কারিটি উদঘাটন করা হয়।

তারা বলছেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করতে এবং সমস্ত সুবিধাভোগীদের যাচাই করার জন্য আমরা অবিলম্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। সম্পূর্ণ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত, সুবিধাভোগীদের কোনও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে না।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন