বর্ষার শুরুতেই নাইক্ষ্যংছড়ির ১৬স্থানে পাহাড় ধ্বস
বর্ষার শুরুতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১৬স্থানে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বেশ কয়েকটি ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুন থেকে জেলার অন্যান্য এলাকার ন্যায় নাইক্ষ্যংছড়িতেও টানা বর্ষণ শুরু হয়। ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে উপজেলা সদরের দক্ষিণ বিছামারা, ঠাণ্ডাঝিরি, বড়ুয়াপাড়া, বাগানঘোনা, পূর্ব বিছামারা এলাকায় অন্তত ১৬টি স্থানে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনায় কোন ধরনের হতাহত হয়নি।
পাহাড় ধ্বসের শিকার হওয়া বাসিন্দারা হলেন- তৈয়ব উল্লাহ, রাজিয়া আক্তার, মো: ইউনুছ, ফরিদুল আলম, সাধন বড়ুয়া, ছৈয়দ আলম, নুর আয়েশা বেগম, ইউনুছ, আবদুল গণি, দিলদার বেগম, রোকেয়া বেগম, নুরুল ইসলাম, আলী আহমদ, ফাতেমা বেগম, ইমাম হোসেন। পাহাড় ধ্বসের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ওই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ফয়েজ আহমদ।
এছাড়া ১নং ওয়ার্ডে মরহুম ছানাউল্লাহ মাতবরের বাড়িতেও পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইশারী মগেরখিল ও উত্তর বাইশারী গ্রামে ৪টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর রয়েছে প্রশাসনের কাছে।
ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গত চার দিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারনে নিম্মএলাকায় জমে থাকা পানি বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নেমে গেছে।
পানি নেমে যাওয়ায় ও ভারী বর্ষণ কমে যাওয়ায় পাহাড় ধ্বস ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের বসতবাড়ির ভাঙ্গন অংশ মেরামতের কাজ করছিল।
তাদের সাথে আলাপে জানা যায়, একদিকে করোনার প্রভাব অন্যদিকে টানা বর্ষণের কারনে কর্মহীন এই মানুষগুলোর ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জনজীবনযাত্রা।
পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত সদর ইউনিয়নের স্কুলপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক সানজিদা আক্তার রুনা জানান- গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের ফলে বুধবার পর পর তিনবার পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে তার বাড়িতে।
এতে গাছপালার ক্ষতিসহ পানি ঢুকছে বসতঘরে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ খবর না নিলেও পাহাড় ধ্বসের খবরটি তিনি নিজ থেকে ইউনিয়ন পরিষদে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন- ভারী বর্ষণে বুধবার সদর ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডে বেশ কয়েকটি পাহাড় ধ্বসের হলেও কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া পানিবন্দী হওয়া মানুষের মাঝে তাৎক্ষণিক ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান-
ভারী বর্ষনে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিল। পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইশারী ও উত্তর বাইশারীতে ৪টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বসতবাড়ি ও ক্ষেত খামারে পানি উঠায় অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ভারী বর্ষণে ইউনিয়ন পরিষদের গাইড ওয়াল ও একটি মসজিদের দেওয়াসহ কয়েকটি বসতঘর ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পাহাড় ধ্বস পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে উপজেলা প্রশাসন এমনটি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন- পাহাড় ধ্বসে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
তবে পাহাড়ের পাদদেশে যারা বসবাস করছেন তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিন যাচাই বাছাইয়ের পর জানা যাবে গত চারদিনে বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর বর্ষার নামলের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মানুষের মাঝে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। একমাত্র মাথা গোজার স্থান হওয়ায় এসব মানুষ অন্যত্র সরে যেতেও পারেনা। সচেতন নাগরিকদের মতে, পুর্নবাসন ছাড়া ঝুকিপূর্ণ স্থান থেকে এসব মানুষকে সরিয়ে নেওয়া কষ্টকর। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকেই দেখতে হবে।