বাংলাদেশে উপজাতিগুলোর মধ্যে আদিবাসী হওয়ার সকল গুণ বিদ্যামান, তাই তারা আদিবাসী: মিজানুর রহমান

 

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে উপজাতিগুলোর মধ্যে আদিবাসী হওয়ার জন্য যে চারটি গুণের প্রয়োজন সেই সবক’টি গুণই বিদ্যামান। তাই তারা আদিবাসী।’ তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই তাদেরকে আদিবাসী বলে আসছি। কারণ, নির্দিষ্ট অঞ্চল, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ভিন্নতাসহ সকল গুণই তাদের মধ্যে আছে। সরকারকেও এটা মেনে নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ বছরের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আদিবাসী জাতিসমূহের অধিকার সংক্রান্ত সকল চুক্তি ও অঙ্গিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করুন।’ বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার, কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বিশ্ব আদিবাসী দিবস ৯ আগস্ট হলেও এ বছর ৯ আগস্ট ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ৩ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মূল অনুষ্ঠান পালন করে।

‘১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির প্রতি সরকারসহ সকল শ্রদ্ধাশীল হওয়া অপরিহার্য’ উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ চুক্তির উপর একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। আমরা সে গবেষণা অনুসারেই আমরা কথা বলছি।তাই উপজাতীদের ডাকে সাড়া দিয়ে আবার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।তিনি আরা বলেন, ‘অন্তত আদিবাসী প্রশ্নে মানবাধিকার কমিশন পুষ্টিহীন বিড়াল না, রয়াল বেঙ্গল টাইগার।’

‘১৬ বছর পরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি, এটা আমাদের জন্য দৃর্ভাগ্যজনক’  মন্তব্য করে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, কথা ছিল চুক্তিটি বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু আমরা তা করতে পারি নি।এটা আমাদের দৃর্ভাগ্য। মেনন বলেন, আমাদের জন্য একটা বড় সুযোগ ছিল পঞ্চদশ সংশোধনী। এসময় সরকার এটা বাস্তবায়ন করতে পারত। কিন্তু তারা তা করে নি। এ চুক্তি বাস্তবায়নের পিছনে মুল অন্তরায় সম্পর্কে তিনি বলেন, হয় সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে দ্বিধান্বিত অথবা তারা এ চুক্তি চায় না।তিনি আরো বলেন, চুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেসকো শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হলেন। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত হলো না।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘১৬ বছর আগে আপনি যে চুক্তি করেছিলেন, আমি প্রশ্ন করছি ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও সে প্রতিশ্রুতি কেন পালন করেননি? উত্তরে আপনি অনেক কথাই বলতে পারেন। আমি বলব, আপনি পাহাড়ের আদিবাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, প্রতারণা করেছেন। আপনি ও আপনার সরকার আদিবাসীবান্ধব হতে পারেননি। কোনো দিন হতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।’

সন্তু লারমা বলেন, ‘যখন কোনো চুক্তি হয়, তখন এর দুটি পক্ষ থাকে। কিন্তু এর বাইরে আরেকটি তৃতীয় পক্ষ থাকে, সেটি হলো সাধারণ মানুষ। দুই পক্ষের বাইরে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তাঁরা সেটি পরিপূর্ণভাবে করতে পারেননি। আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণ হিসেবে সন্তু লারমা বলেছেন, ৪২ বছর অতিবাহিত হয়েছে। যেসব সরকার ও শাসক এসেছেন, তাঁরা উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন এবং আদিবাসীদের প্রতি সব সময় বৈরী মনোভাব দেখিয়েছেন। বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হলেও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে পারেনি। এর ফলে সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীরা তাদের জীবনধারা হারাতে বসেছে।

চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশিস রায় বলেন, পার্বত্য চুক্তির সময় লিখিত চুক্তি ছাড়াও একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। সেটি হলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে পাহাড়ে যেসব অভিবাসন ঘটানো হয়েছে, সেই সমস্যা সমাধান করা। এটিরও বরখেলাপ করা হয়েছে। চুক্তি করার পর বরখেলাপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এর আগে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “বাংলাদেশে উপজাতিগুলোর মধ্যে আদিবাসী হওয়ার সকল গুণ বিদ্যামান, তাই তারা আদিবাসী: মিজানুর রহমান”

  1. এভাবে কোন কিছু হবেনা। আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। এছাড়া কোন উপায় নাই।সরকারের যদি সৎ ইচ্ছা থাকত চুক্তি কবে বাস্তবায়ন হতো। সুতরাং আসুন সকলে একত্রিত হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন