ছেলের বিরুদ্ধে বাবার অভিযোগ

বাঘাইছড়িতে গুচ্ছগ্রাম বাসিন্দাদের খাদ্যশস্য আত্মসাৎ করছেন ইউপি চেয়ারম্যান

fec-image

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের অনুকূলে সরকার থেকে পাওয়া খাদ্যশস্য ও মৃত ব্যক্তির অর্থ লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

চেয়ারম্যান দীর্ঘ চার বছর ধরে এই লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন গুচ্ছগ্রামের সদস্যরা।

এমনকি রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে খাদ্যশস্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্বয়ং তার বাবা সুলতান আহমেদও।

তিনি জানান, ৩ মাসে ২শত ৭৩ কেজি চাউল ও গম বরাদ্দ আসে গুচ্ছগ্রামের প্রতিটি সদস্যের নামে। সেখান থেকে ১৮৪ কেজি বিতরণ করলেও বাকিগুলো চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেন।

জানা গেছে, গত ২২ জুলাই বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গুচ্ছগ্রামের ৭৫ বাসিন্দা গণস্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, গুচ্ছগ্রামে প্রতি তিন মাসে প্রতি পরিবারের জন্য ২৭৩ কেজি চাউল ও গম বরাদ্দ দেওয়া হলেও রাসেল ১৮৪ কেজি বিতরণ করেন। সদস্যপ্রতি বাকি ৮৯ কেজি খাদ্য শস্য বরাদ্দে কম বিতরণ করেন।

প্রতি বরাদ্দ থেকে ৭৫ পরিবারের ৮৯ কেজি করে ৬ হাজার ৬শত ৭৫ কেজি চাউল ও গম আত্মসাৎ করেন।

এছাড়াও গত এপ্রিল, মে, জুন তিন মাসের বরাদ্দকৃত চাউল ও গম কাউকে না জানিয়ে বিক্রিও করে দেন। অবশেষে জানাজানি হলে নামেমাত্র টাকা বিতরণ করে সিংহভাগ তিনি নিজে আত্মসাৎ করেন।

৫ থেকে ৭টি পরিবারকে ১০০ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান হুমকি দিয়ে বলেন, গুচ্ছগ্রামের ৭৫ পরিবারের সকলে একত্রিত হয়েও তার কিছু করতে পারবে না, বরং অভিযোগকারীর কার্ড বাতিল করে দিবেন তিনি।

অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে, গুচ্ছগ্রামের যে কার্ডধারী পরিবার প্রধানের মৃত্যু হয়েছে সেই মৃত ব্যক্তির কার্ড পরিবর্তন করতে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা অফিস খরচের নামে নেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অত্যাচার, নারী নির্যাতন, ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা মামলায় জিম্মি, মাদক, চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। ফলে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাময়িকভাবে বহিষ্করও করা হয়। এমনকি যুবলীগ থাকাকালীনও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে গুচ্ছগ্রামের খাদ্যশস্য বিতরণে অনিয়ম করে আসছে। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের নাম পরিবর্তনের নামে মানুষের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।

তিনি আরো জানান, কেউ তার অনিয়ম ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বললে মামলা মোকাদ্দমাসহ বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন।

গুচ্ছগ্রামের সাবেক সভাপতি মো. আলী হোসেন অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি গুচ্ছগ্রামের সভাপতি ছিলেন। চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী ৪ বছর ধরে এই অনিয়ম ও লুটপাট করে আসছেন। এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চাইলে তাকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন রাসেল চৌধুরী।

আমতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, তিনিও চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ শুনে আসছেন।

আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর সোবহান বলেন, তিন মাসে ২শত ৭৩ কেজি খাদ্যশস্য বরাদ্দ আসে গুচ্ছগ্রামের প্রতিটি পরিবারের জন্য। এরমধ্যে থাকে ২ মাসের গম এবং ১ মাসের চাউল। কিন্তু দুই বছর আগে চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জেলা পরিষদের একটি চিঠি দেখিয়ে তাদের বলেন, সরকারের ফান্ডে গম নেই।

গমের পরিবর্তে ৭৫টি গুচ্ছগ্রামের পরিবারের জন্য ৬শত ৭৮ গ্রাম করে চাউল অর্থাৎ প্রায় ১৮৪ কেজি চাউল দিয়েছে সরকার। ওই চিঠি দেখিয়ে খাদ্যশস্যের পরিমাণ তাদের কম দেখানো হচ্ছে।

এক বছর পর তারা  খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বাকি সব খাদ্যশস্য চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী আত্মসাৎ করছেন।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, এ পযর্ন্ত সরকার থেকে যে বরাদ্দগুলো এসেছে, তা নিয়ে ইউপি সদস্যদের সাথেও কোন সমন্বয় না করে নিজের ইচ্ছে মতো বণ্টন করেন এবং ইউপি সদস্যদের নামে যা বরাদ্দ আসে তাও তিনি আত্মসাৎ করেন। কিছু বললেই উল্টো মামলা-মোকাদ্দমার হুমকি দেন চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী।

এসব বিষয়ে আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর কাছ জানতে চাইলে তিনি জানান, সামনে ইউনিয়ন পরিষদের কাউন্সিল। যার কারণে তাকে ফাঁসানোর জন্য এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগগুলো করা হচ্ছে।

আপনার বাবাও আপনার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্বার্থের লোভে তার বাবা এই অভিযোগ করেছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু জানান, আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুচ্ছগ্রামের সরকারি বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য বিতরণে অনিয়ম ও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের নাম পরিবর্তনের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণের ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন।

এই অভিযোগটির বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গুচ্ছগ্রাম, চেয়ারম্যান, বাঘাইছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন