রেশন উত্তোলনে নেই ঝক্কি-ঝামেলা

‘করোনা’র আশির্বাদে খাগড়াছড়ির গুচ্ছগ্রামবাসীর মনে স্বস্তি

fec-image

মহামারি‘করোনা’র প্রার্দুভাবে পার্বত্য খাগড়াছড়ির গুচ্ছগ্রাম নামক বন্দিশালায় আবদ্ধ বাঙ্গালিরা যুগের পর যুগ মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছে। তাদের নিত্য অভাব-অনটনের সুযোগে সরকার প্রদত্ত রেশনে ভাগ বসিয়েছে ব্যবসায়ীরা! বিশ হাজার থেকে লক্ষ টাকার বিনিময়ে রেশন কার্ড বন্ধক নেওয়ার অজুহাতে অনন্তকাল ধরে সরকারি রেশন খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা!

করোনা’র ছোবলে লণ্ডভণ্ড জনজীবনে খাদ্য সংকটে স্থানীয় সাংসদ ও জেলা প্রশাসক বাঙ্গালি গুচ্ছগ্রামবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে এপ্রিল-জুন মাসের আগাম রেশন বিতরণে সদয় হওয়ায়‘করোনা’র আর্শিবাদ লেগেছে গুচ্ছগ্রামবাসীর প্রাণে।

দীর্ঘদিন পর কোন প্রকার ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীতে খাদ্যশষ্য উত্তোলন করছেন বাঙ্গালি গুচ্ছগ্রামবাসীরা। এ যেন গুচ্ছগ্রাম নামক বন্দিশালায় স্বস্তির নিঃশ্বাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনা ভাইরাসে মানুষজন গৃহেবন্দী। কাজ-কর্ম নেই তো, আয়-রোজগার নেই। যদিও সরকার অতি নিম্ন, নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাঝে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। তবুও প্রতিনিয়ত ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার বাড়ছে। পার্বত্য খাগড়াছড়ির জনপদেও এর ব্যতিক্রম নেই।

ফলে স্থানীয় সাংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস গুচ্ছগ্রামে জনদূর্ভোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত ২৬হাজারের অধিক রেশন কার্ডধারীকে এপ্রিল-জুন মাসের খাদ্যশষ্য বিতরণে বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে গুচ্ছগ্রামে প্রচলিত রেশন কার্ড ব্যবসায়ীদের কপালে বাজ পড়েছে! কেন না গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠার পর গুচ্ছগ্রাম নামক বন্দিশালায় দূর্গতদের অভাব-অনটনকে পুঁজি করে ধীরে ধীরে রেশন কার্ডগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয় ব্যবসায়ীরা!

কার্ড প্রতি ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ পর্যন্ত বন্ধক দেয় দরিদ্র মানুষগুলো। দীর্ঘ ৩ দশক পেরিয়ে গেলেও সেই বন্ধকী টাকা আজও পরিশোধ না হওয়ায় প্রতি মাসে রেশন অনায়াসে তুলে নেয় রেশন কার্ড ক্রেতারা(বন্ধক গ্রহীতা)!

এই দীর্ঘ সময়ের পুরো রেশন বন্ধক গ্রহীতারা ভোগ করলেও আসল টাকার দাবী কেউই ছাড়েনি। ফলে রেশন কার্ডের অঘোষিত মালিক সেজে গেছেন ব্যবসায়ীরা! এভাবে গুচ্ছগ্রামবাসীদের ওপর অমানবিক নিপীড়ন চলে আসলেও রেশন কার্ডটি ওই ব্যবসায়ীর কবল থেকে উদ্ধারে হস্তক্ষেপ করেনি কোন প্রশাসন। ফলে সরকার প্রদত্ত রেশন প্রকৃতপক্ষে ভোগ করে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

এভাবেই যুগের পর যুগ অ-উপজাতী গুচ্ছগ্রামবাসীর ওপর চলে আসা তাণ্ডবলীলায় বৈশ্বিক মহামারি‘করোনা’র আর্শিবাদ লেগেছে!

প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগে দেরি হওয়ায় আপাদত সরকারি কর্মকর্তাদের নামের (ডিও) অনুকূলে ৩ মাসের রেশন অনুমোদন দেওয়া হয়।

এছাড়া এবার রেশন বিতরণে প্রশাসন নজরদারী বাড়িয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ এবার সরাসরি প্রকৃত কার্ডধারী উপস্থিত থেকে রেশন গ্রহণ করায় বাধ্যবাধকতার বেড়াজালে পড়ে ব্যবসায়ীর এখন নমনীয় হয়ে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে রেশন কার্ডধারী কেউ রেশন তুলে নিয়ে ব্যবসায়ীর হাতে দেয় কী না।

সরকারি আইন প্রয়োগে প্রশাসনের কড়াকড়িতে‘বনের বাঘ, হরিণের কাছে ধরাশায়ী’
খাগড়াছড়ি’র ৯ উপজেলার ৮১টি অ-উপজাতী গুচ্ছগ্রামের ২৬,২১৪.৫ কার্ডধারী পরিবারে এপ্রিল-জুন মাসের খাদ্যশষ্য প্রতি মাসে ৩৫.৯৫ কেজি চাউল ও ৪৯.১০কেজি গম বরাদ্দ সাপেক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিতরণ শুরু করেছে। আর বিতরণ কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

এ প্রসঙ্গে মানিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, বৈশ্বিক মহামারি‘ করোনা ভাইরাস’ এর কারণে সরকারি বিধি-নিষেধে মানুষজন গৃহেবন্দী।

ফলে বাঙ্গালি গুচ্ছগ্রামবাসীর অভাব-অনটনের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা’র সরকার উর্ধ্বতন মহলে আলোচনা পূর্বক আগাম এপ্রিল-জুন মাসের রেশন বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এতে করে জনপদে স্বস্তি এসেছে। এখন মানুষজন খাদ্য সংকট অনুভব করবে না।

এ প্রসঙ্গে মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ বলেন, গুচ্চগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালির রেশন কার্ডধারীদের মাঝে রেশন বিতরণে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন পাওয়ায় রেশনের ডিও ইতোমধ্যে ছাড় করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিতরণ চলছে। প্রকৃত কার্ডধারীরা জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে নাম নিবন্ধন পূর্বক রেশন উত্তোলন করছেন। এতে করে জেলার ২৬ হাজার ২শত ১৪ পরিবারে খাদ্য সংকট দূর হলো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন