বাঘাইছড়িতে পুলিশের বিরুদ্ধে দিনমজুরকে গ্রেফতার করে চোখ বেধেঁ নির্যাতনের অভিযোগ
আলমগীর মানিক,রাঙ্গামাটি:
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়নে পূর্বলাল্যাঘোনা গ্রামে টাকা চুরির অভিযোগ দিনমজুরকে থানায় আটকে রেখে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুন সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবদুল খালেক এক লাখ ৭০ হাজার হারিয়ে ফেলেন। গ্রামবাসীর পরামর্শে ১৯ জুন তাঁর সন্দেহজনক হিসেবে পার্শ্ববর্তী ২০জনকে বৈদ্যের মন্ত্র পড়া চাল খাওয়ানো হয়। বৈদ্য বলেছেন, যিনি চুরি করেছেন সে চাল কম খেতে পারবেন।
এতে অন্যরা বেশি চাল খেতে পারলেও মো. মেহরাজ আলী কম খেতে পাড়ায় তাকে চুরির ঘটনার জড়িত সন্দেহ করা হয়। তার পরদিন ২০ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় মেহরাজ আলীকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এতে টাকা চুরির কথা স্বীকার করাতে শুরু হয় তাঁর ওপর নির্যাতন।
এক পর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ওই দিন বিকেল চার টা দিকে মেহরাজ আলীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। এতে ঘরের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে মাটি খুঁড়ে হারিয়ে যাওয়া টাকা খুঁজতে থাকে পুলিশ।
এছাড়া বিভিন্ন জিনিসপত্র তছনছ করা হয়েছে। তার পর দিন আবার শুরু হয় টাকা বের করে দেওয়া ও স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য নির্যাতন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত পৌনে ১১টা দিকে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোববার সকালে অসুস্থ অবস্থায় মেহরাজ আলীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
মেহরাজ আলীর স্ত্রী সুলতানা বেগম অভিযোগ করেন, আমার স্বামীকে দেখতে থানায় গিয়েছি। দেখি হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করছে। প্রথমে উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাসুদ লাঠি দিয়ে বেধরক মারধর করেন। পরে আবার দুজন পুলিশ এসে বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন চালান। আমি তাঁদের পায়ে ধরেছি কিন্তু কোনো কথা শুনেননি।
দুইদিন ধরে কিছু খেতে দেয়নি পুলিশ। আমার স্বামী কোনো টাকা চুরি করেনি। সে আমাদেরকে দিনমজুর করে খাওয়াচ্ছেন। তাঁকে আটকের পর চার শিশু সন্তান না খেয়ে রয়েছে। আমার বাবা মো. আবদুল মোতালেবকেও আটক করেছে পুলিশ। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে নিতে দেয়নি।
মেহরাজ আলীর শালিকা রেহানা আক্তার বলেন, আমরা শুনেছি মো. আবদুল খালেক পুলিশকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। শুধু আমার দুলাভাইকে নির্যাতন করার জন্য। আমরা গরীব বলে এভাবে টাকা মানুষকে নির্যাতন করতে দেখেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এছাড়া আমাদেরকে দুই দিন ধনে গৃহবন্দি করে রেখেছে পুলিশ। যেন কোথাও অভিযোগ দিতে না পারি।
স্থানীয় বাসিন্দা জমির আলী বলেন, পুলিশের নির্যাতনে ও অত্যাচারে মেহরাজ আলীর বাড়ি তছনছ হয়ে গেছে। টাকা খুঁজতে ঘরের ভেরতে ব্যাপক খুঁড়াখুড়ি করা হয়েছে। এখন আর বাড়িতে কেউ থাকে না। চার শিশু সন্তান নিয়ে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে তাঁর স্ত্রী সুলতানা বেগম।
সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবদুল খালেক বলেন, মেহরাজ আলী ও শাহাজান আমার বাড়িতে কাজ করতেন। প্রথমে দুই জনকে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহ করতাম। পরে বৈদ্য চাল মন্ত্র পড়া খাওয়ানোর পর মেহরাজ আলীকে সন্দেহ বেশি বেড়ে যায়। এতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছি। বাড়িতে তল্লাশি ও মেহরাজ আলীকে নির্যাতনের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে।
গত ২২ জুন শনিবার রাত পৌনে ১১টায় বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা মো. মেহরাজ আলী বলেন, আমাকে থানায় ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। খেতেও দেওয়া হয়নি আমার সারা শরীর ব্যাথা। আমি কোনো চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। খালেক মেন্বার আমাকে মিথ্যাভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত পুলিশের উপপরিদর্শক(এসআই) মো. মাসুদ ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, আমরা মেহরাজ আলীকে কোনো নির্যাতন করিনি শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শুক্রবার আনতে দেরি হওয়ায় এতদিন থানায় রাখতে হয়েছে। জিজ্ঞাবাদে সে প্রথমে চুরির কথা স্বীকার করেছেন। পরে তাঁর স্ত্রী এসে আবার অস্বীকার করা শুরু করেন। গত শনিবার বিকেলে তাঁর বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিক উল্লাহ বলেন, আমরা থানায় কোনো আসামিকে নির্যাতন করি না। নির্যাতন করলে শরীরে দাগ থাকবে। সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবদুল খালেকের অনেক টাকা হারিয়ে গেছে সেজন্য বিভিন্ন স্থানে খুঁজা হচ্ছে। তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি করা হয়েছে।