খাগড়াছড়িতে ফসলি জমিতে বসতি গড়ে তোলায় ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে আবাদীজমি, খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা

 khagrachari_Land_Decreasing_picture(02)

পানখাইয়াপাড়া বিলের প্রাকৃতিক দৃশ্য দিন দিন হারিয়েছে যাচ্ছে

মুহাম্মদ আব্দুল হালিম, খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা :
কৃষি জমি সুরক্ষা আইন ও পৌরসভা ম্যানুয়াল এর তোয়াক্কা না করেই খাগড়াছড়ি পৌর শহরের কৃষি জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ ও হাউজিং সোসাইটি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে কালক্রমে আবাদি জমি আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে কৃষিজমিতে অকৃষি স্থাপনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও খাগড়াছড়ি শহরের নিউজিল্যান্ড খ্যাত পানখাইয়া পাড়া বিল, শান্তি নগর, শালবাগান, নারায়ন খাইয়া, কলেজ গেইট, স্বনির্ভর এলাকা, উত্তর খবংপুড়িয়া, দক্ষিণ খবংপুড়িয়া ও খাগড়াপুর এলাকায় তিন ফসলি জমিগুলোতে আইন লংঘন করে বালু ফেলে ও মাটি ভরাট করে অবাধে গড়ে উঠছে  দালান কোঠা ও সরকারী-বেসরকারী ভবনসহ অকৃষি স্থাপনা। এমন কি পৌর সভার অনুমোদন না নিয়ে অনেক বসতবাড়ী এবং ভবনও গড়ে উঠছে। কোথাও আইনের বিধান অনুসরণ করা হচ্ছেনা। পানখাইয়াপাড়া বিল , মিলনপুর, এপিবিএন এলাকা, গোলাবাড়ি, কলেজ গেইট, স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় একশত কানি  ফসলি জমিতে কোন আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ্যভাবে বসতবাড়ি ও হাউজিং গড়ে তোলায় হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকট।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  জানান, পৌর শহরের চারপাশে কৃষিজমিতে যেভাবে বসতি ও সরকারী-বেসরকারী ভবন নির্মাণ হচ্ছে এতে ইতিমধ্যে ৫০ভাগ কৃষিজমি  হ্রাস পেয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যত ভাল হবেনা।

একসময় পানখাইয়াপাড়া বিলে প্রতিদিন বিকেলে বাহিরের ও স্থানীয় পর্যটকদের ভিড় দেখা যেত। কিন্তু এখন আর তা দেখা যাচ্ছেনা। আজ থেকে আট নয় বছর আগে বিকেল বেলা এই  বিলে কিছু বিদেশী পর্যটক ঘুরতে আসে । সবুজ বেষ্টনি, চারপাশে সারি সারি পাকা ধানের অপরুপ দৃশ্য, সম্মুখপানে  আলুটিলার উচুঁ উচুঁ পাহাড় যেন পর্যটকদের আকর্ষন করছে। তাই বিদেশী পর্যটকরা ওশেনিয়া মহাদেশের প্রশান্ত মহাসাগরের  বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ পুঞ্জের সাথে তুলনা করে একে বললেন আহা! কি সুন্দর নিউজিল্যান্ড। এর পর থেকেই মানুষের মুখে মুখে এর নাম  নিউজিল্যান্ড নামে খ্যাত হয় ।

খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের সন্মান শ্রেণীর ছাত্র এনামুল করিম ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী আছমা আক্তার জানান, আমরা পড়া লেখার পাশাপাশি বিকেল বেলা নিউজিল্যান্ড মাঠে ঘুরতে আসতাম। কিন্তু দিন দিন আবাসিক স্থাপনা গড়ে ওঠায় এখন আর সে বিনোদনের পরিবেশ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষক অনিমেষ চাকমা  জানান, অসচেতনতার অভাবে খাগড়াছড়ি শহরের কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত খাগড়াছড়ি পৌর শহরে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে।

খাগড়াছড়ি পৌর সভার মেয়র মো: রফিকুল আলম জানান, আইন ভঙ্গ করে পৌর শহরে সরকারী-বেসরকারী ভবনসহ কিছু অকৃষি স্থাপনা নির্মানের করেছে । তবে যারা আইন ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন