বান্দরবান পৌর নির্বাচন: সম্পদ ও মামলায় এগিয়ে বিএনপি, পিছিয়ে আ’লীগ প্রার্থী

fec-image

চতুর্থধাপে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সদর পৌর নির্বাচন। এই পৌরসভায় এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ব্যানারে থাকা দুই প্রার্থীর দিকে নজর রাখছেন ভোটাররা। পাশাপাশি জাতীয়পার্টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নিজেদের কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন, পাশাপাশি প্রার্থীদের অতীতের ভালো মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। প্রধান দুই প্রার্থী বর্তমান ও সাবেক মেয়র হওয়ায় ক্ষমতাকালীন সময়ে তাদের অর্জিত সম্পদের খবর নিতেও ভুলছেন না ভোটাররা।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী ধন-সম্পদে পিছিয়ে থাকলেও সম্পদ ও মামলায় এগিয়ে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ ইসলাম বেবী’র শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় প্রতীক নিয়ে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন। তার জন্ম ১৯৫৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে আমানত হিসেবে আছে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১লাখ টাকা। নিজের ০.৫ ভরি এবং স্ত্রীর নামে ১২ভরি স্বর্ণালংকারসহ রয়েছে ফ্রিজ ও অন্যান্য আসবাবপত্র।

স্থাবর সম্পদের হিসাবে তার কৃষি কোনো জমি নেই। তবে অকৃষি জমি রয়েছে ৪একর। বাগান রয়েছে ২লক্ষ টাকার। ব্যাংকে কোন দায়দেনা নেই। ২০১৩ সনের সিআর একটি মামলা রয়েছে। ব্যবসা খাতে তিনি আয় করেন ১লাখ ২০হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের আয় ৭লাখ টাকা এবং মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা পান ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ রেজা সম্পদ ও মামলায় এগিয়ে রয়েছেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তার হলফনামা থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ৬মার্চ তাঁর জন্ম। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। ব্যবসায়িক খাতে তিনি বছরে আয় করেন ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং প্রার্থীর উপর নির্ভরশীলদের আয় ৩ লক্ষ ৫০হাজার টাকা। এছাড়া কৃষি জমি, বাড়ি-এর্পাটমেন্ট, বাগানের মতো কোন সম্পদ নেই তাঁর। তবে অকৃষি জমি রয়েছে ২একর পাহাড় ৪২৩৫বর্গফুট জমি। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ৪ লক্ষ ও স্ত্রীর নামে ২লক্ষ টাকার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ২ লক্ষ ২ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। বিএনপির এই প্রার্থী জিআর ১৯৬ ও জিআর ২০০/২০২০ দুটি চলমান মামলার আসামি এবং সিআর ৪১/২০১০ মামলায় বেকসুর খালাস দেখিয়েছেন।

এছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর ১টি স্বর্ণের আংটি, ১টি চেইন, স্ত্রীর ৪ তোলা বিবিধ স্বর্ণালংকারসহ রয়েছে একটি টিভি, ফ্রিজ একটি, ফ্যান দুটি, মোবাইল একটি ও অন্যান্য আসবাবপত্র। অন্যান্য খাতের সম্পদের মধ্যে বিএনপি প্রার্থীর রয়েছে ৯১ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২০ লক্ষ ১৫হাজার টাকা। দার-দেনার মধ্যে ঋণ রয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা।

জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোঃ শাহ জাহান এর জন্ম ১২আগস্ট ১৯৬৭। তিনি স্বশিক্ষিত। অস্থাবর সম্পদে তিনি ব্যবসা খাতে আয় করেন ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নগদ টাকা রয়েছে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে আমানত আছে তিন হাজার টাকা। এছাড়া ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ সমর্থিত মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এর জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। বাণিজ্যিক পশু খামার থেকে তিনি আয় করেন ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ২লাখ ৫০হাজার টাকা, ব্যাংকে আমানত আছে ২ লাখ ৫০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৬ হাজার টাকা। নিজের ২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, স্ত্রীর ১০ভরি এবং নির্ভরশীলদের নামে ৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ রয়েছে ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র। দায়-দেনার মধ্যে ২লাখ ৫০হাজার টাকা রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষি-অকৃষি জমি, দালান বা আবাসিক কোনো সম্পদ নেই তার।

স্বতন্ত্র প্রার্থী বিধান লালা, জন্ম ১২ ডিসেম্বর ১৯৬৬। তিনিও স্বশিক্ষিত। ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ ব্যবসা খাতে তিনি আয় করেন ২লাখ ৫০ হাজা টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ৫১ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বান্দরবান পৌরসভার আয়তন ২৫.৮৮ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার সংখ্যা ২৯ হাজার ৭২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬,৬০৯ ও নারী ভোটার ১৩ হাজার ১২০ জন। এই ভোটারের বিপরীতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান পৌর নির্বাচনে ১৩টি ভোট কেন্দ্রের ৮১টি বুথে ভোট গ্রহণ হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন