বাহারছড়া ইউনিয়ন শিশু পরিষদ নির্বাচন

fec-image

উৎসাহ উদ্দীপনায় ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ হলো কক্সাবাজার টেকনাফে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়ন শিশু পরিষদ নির্বাচন। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৮টি কেন্দ্রে চলে ভোট।

ওই ইউনিয়নে ৪ হাজার ১২৫ জন ভোটারের মধ্যে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে মেয়ে শিশু ১৬ জন, ছেলে শিশু ৯ জন।

বাহারছড়া ইউনিয়নের ২৫২টি শিশু পরিষদের কিশোর কিশোরীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ইউনিয়ন শিশু পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে অ্যাকশন মিডিওর এর আর্থিক সহযোগিতায় ‘কিশোর-কিশোরী এবং প্রবীণদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন প্রকল্প’ কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে শিশুদের এই নির্বাচন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

আয়োজকরা জানান, শিশুরা ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের যোগ্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং একইসাথে ওয়ার্ড চেয়ারম্যান নির্বাচন করলো। ভোটে তাসলিমা মুনির রিতা (চেয়ার মার্কা) ৭৪৮ ভোট পেয়ে ইউনিয়ন শিশু পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ওমর ফারুক পেয়েছেন (ছাতা মার্কা) ৭০৭ ভোট।

এছাড়া ১ নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন-মিনা আকতার ( দোয়াত কালি), ২নং ওয়ার্ড মোহাম্মদ আলমগীর প্রতীক (টেলিভিশন), ৩নং ওয়ার্ড আহসান মোহাম্মদ রাব্বী (মোরগ) , ৪নং ওয়ার্ডে মেহের আফরোজ মুনা (বই) , ৫নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ শরিফ (মোরগ) , ৬নং ওয়ার্ডে আজিজা আলিম পুষ্পা (মোরগ) , ৭নং ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম (বই) ও ৮নং ওয়ার্ডে আহম্মদ (বই) ।

শনিবার সকাল ৯টা থেকে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে শিশু ভোটারগণ তাদের ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে উপস্থিত হয়। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে আনন্দচিত্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রদান করে। ভোটাররা আগে থেকেই প্রকল্পের কর্মকর্তা কর্তৃক ভোটার ওরিয়েন্টেশন সম্পূর্ণ করে। এ কারণে তাদের পক্ষে ভোট প্রদান করা সহজ হয়।

সরেজমিনে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখে গেছে, ভোট কেন্দ্রে প্রতিটি শিশুর চোখে মূখে ছিল আনন্দ। তারা যোগ্য প্রার্থীকে তারা নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পেরেছে।

এদিকে প্রার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হয়ে কিভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে হয় তা তারা জেনেছে। এছাড়া এখন তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, যোগাযোগ দক্ষতা বেড়েছে, উপস্থাপনা দক্ষতা বেড়েছে এবং নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতাও বেড়েছে। তারা আরো জানিয়েছে যে নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই।

নির্বাচনে বিজিতরা জানিয়েছে, বিজয়ীদেরকে তারা সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করবেন । বিজয়ীরাও জানিয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলেই বিজয়ী হওয়া সম্ভব হয়েছে। আমরা তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং আমরা তাদেরকে সাথে নিয়ে বড়দের সহযোগিতায় একজন শিশু হিসেবে অন্যান্য শিশুর বিকাশে একযোগে কাজ করবো।

এই নির্বাচন সম্পূর্ণ করতে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল করিম। রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন-নার্গিস আকতার রনি, সহকারী নির্বাচন কমিশনার ছিলেন, ফরিদুল আলম বাহারী ও জাকের হোসেন।

পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও কেন্দ্র পরিদর্শন করেন-এ্যাকশন ম্যাডিও’র প্রজেক্ট ম্যানেজার শারাহ ওয়িস ও গণস্বাস্থ্য এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সুলতান মাহমুদ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার শিক্ষাবিদ প্রফেসর ফজলুল করিম বলেন, শিশুরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হয়ে তাদের পছন্দমত নেতা নির্বাচন করেছে। শিশুরা সংখ্যা গড়িষ্ঠের মতামতকে শ্রদ্ধা জানাতে শিখেছে, পরমতের প্রতি সহনশীল হতে শিখেছে। তারা জয় পরাজয় মেনে একে অপরকে সাথে নিয়ে কাজ করার অঙ্গিকার করেছে। তাদের দেখে অন্যরা শিখবে। এভাবে তাদের মধ্যে বিকল্প আরো যোগ্য নেতা তৈরি হবে। এই প্রক্রিয়ায় তারা বড় হলে একদিকে নিজেদেরকে তারা আরো যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবে এবং তারা যে জায়গায় কাজ করবে সেখানেও তারা তাদের যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

৬নং ওয়ার্ডের প্রিসাইডিং অফিসার এবাদুল হক জানান, উৎসবমূখর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিশুদের নির্বাচন প্রজন্মকে শিক্ষা দিবে। গণতন্ত্র চর্চা, সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা, স্কুলে ইভটিজিং প্রতিরোধ ও ক্রীড়াক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখবে এ নির্বাচন ও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।

নির্বাচিত ইউনিয়ন শিশু পরিষদের চেয়ারম্যান তাসলিমা মুনির রিতা বলেন, একদম শিশু বয়স থেকে নেত্বত্ব দেয়ার সংকল্প ছিল তা আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। শিশু শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ ও উন্নয়নের কথা স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে এগিয়ে নেয়ার কথা জানান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝড়েপড়া শিক্ষার্থী, ইভিটিজিং প্রতিরোধ, অসহায়-গরিবদের সহযোগিতা করাসহ নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।

৩নং ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফা আলম সুইটি বলেন, এ নির্বাচন ভবিষ্যত প্রজন্মকে গণতন্ত্র শিক্ষা দিবে। আজকের শিশুরাই সমাজে দেশে নেত্বত্ব দিবে। ব্যালট বিপ্লব এখান থেকে শুরু করলে আগামীতে সবখানে সকল নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারব।

বিভিন্ন সরকারি পর্যায়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ মেম্বারবৃন্দ, বিভিন্ন টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়া, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃদ, এনসিটিএফ এর সদস্যবৃদ, শিশু পরিষদের গ্র্যাজুয়েট শিশু মনিটরসহ আরো অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। একইসাথে তারা এই নির্বাচনকে একটি গ্রহণযোগ্য ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করার একটি বলিষ্ঠ প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন