মতবিনিময় সভায় বক্তাদের অবিলম্বে দোহাজারী-ঘুমধুম রেল যোগাযোগ স্থাপনের দাবী

Coxs Rail line 04

স্টাফ রিপোর্টার:

‘কক্সবাজার রেল সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘পর্যটন উন্নয়ন আন্দোলন’র উদ্যোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে হোটেল সী প্যালেসের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, “৪৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে রেল লাইন কমেছে। বাড়েনি। দেশে দুই লাইন এবং চার লাইনের ‘রেল যোগাযোগ’ দরকার। এটি আদায় করতে হলে নানামুখি চাপ সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন, ড. খন্দকার আলী আমজাদ। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি, কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী,

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘পর্যটন উন্নয়ন আন্দোলন’র আহ্বায়ক ও সাপ্তাহিক বাংলা টুডে’র নির্বাহী সম্পাদক সাদেক রহমান। সাদেক রহমান তার প্রবন্ধে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল ১৮৪ টি দেশ নিয়ে এ বছরের প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী এক দশকে পর্যটন খাতে ১২টি দেশ দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি করবে, যার অন্যতম বাংলাদেশ। কিন্তু এই সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে হতাশাও রয়েছে। যথাযথ নিরাপত্তা, অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ নানা সুবিধা দেয়ার সক্ষমতা এখনো পর্যটন শিল্পে গড়ে উঠেনি। প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে রেল যোগাযোগ স্থাপনের।

প্রবন্ধে আরো বলা হয়, ১৯৮০ সালে বার্মা রেলওয়ে ও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে রেল লাইন স্থাপনের ব্যাপারে রুট নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চলে আরেক দফা সমীক্ষা। ওই সমীক্ষায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে মিয়ানমারের আকিয়াব পর্যন্ত এক লাইন বিশিষ্ট রেল লাইন স্থাপনের কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ’৪৭ এর দেশ ভাগ পর্যন্ত কোন অগ্রগতি হয়নি। দেশ ভাগের পর পাকিস্তান সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৮ সালে আরো একটি সমীক্ষা পরিচালনা হয়। বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে সর্বশেষ সমীক্ষা পরিচালনা করে। সমীক্ষায় দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এরপর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় ২০১৪ সালের জুন মাসে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু হবে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজায় রেল লাইনটির ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ভিত্তি ফলক রচিত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাজের অগ্রগতি হয়নি।

এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ৩১২ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়ার কথা। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েও বরাদ্দের অভাবে প্রায় ৩ বছর ধরে থমকে আছে ‘অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া’।
রেলওয়ে সার্ভে করে এই প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এডিবি রেলওয়ের সার্ভেকে গ্রহণ করছে না বলে নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) নিজস্ব উদ্যোগে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য তারা আবার টেন্ডার করবে। এরপর ডিজাইন করবে। তারপর টাকা দিবে।

এই ধীরগতিতে রেল লাইন আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় মতবিনিময় সভায়।
বক্তারা ‘অবিলম্বে রেল দোহাজারী-ঘুমধুম রেল লাইন’ স্থাপনের দাবী জানান।

সভায় বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবীদ নাছির উদ্দিন, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, বিশিষ্ট ব্যাংকার শহিদুজ্জামান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় মহাসড়ক বাস্তবায়ন পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক এম আজিজ মাহবুব, হোটেল সী গালের সিইও শেখ ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী, এলডিপি’র কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজ’র পরিচালক রোটারিয়ান সাইয়েদ জালাল উদ্দিন, হোটেল সী প্যালেসের জিএম বিল্লাল হোসেন, হোটেল দি কক্স টুডে’র জিএম এসএম শাহাব উদ্দিন, কবি ও সাংবাদিক রুহুল কাদের বাবুল, কবি অমিত চৌধুরী, কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন এর সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান, সাংবাদিক যথাক্রমে আমানুল হক বাবুল, মোর্শেদুর রহমান খোকন, সাইফুর রহিম শাহীন, আবদুল্লাহ নয়ন, সায়ীদ আলমগীর প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন