মনের জোরেই এক পায়ে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন: আম্পুটি ফুটবল

fec-image

ফুটবল মানের দুই পায়ের খেলা। কিন্তু এক পায়েই এই খেলা খেলে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আম্পুটি ফুটবলাররা। যারা দুই ক্র্যাচের উপর ভর দিয়ে একপায়ে ফুটবল খেলে। প্রতিবন্ধকতায় দমিয়ে না যাওয়া এই খেলোয়াড়দের স্বপ্ন আর্ন্তজাতিক ক্রিড়াঙ্গনে দেশের হয়ে বিজয় ছিনেয়ে আনা।

মুজিব বাংলাদেশ কার্নিভাল উপলক্ষে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমীন স্টেডিয়ামে আম্পুটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভাষার মাসে লাল-সবুজে দুই দলে ভাগ হয়ে টান-টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে চলে আম্পুটি ফুটবল প্রীতি ম্যাচ। দেশের সাত জেলা থেকে আসা এই ফুটবলারদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প একেক রকম। সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট, জন্মগতসহ নানা কারণে তারা হারিয়েছে হাত-পা। কিন্তু অঙ্গহানি তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারা ওয়ার্ল্ড কাপ জিতে বিদেশের মাঠিতে উড়াতে চায় দেশের পতাকা।

খাগড়া ছড়ির ইব্রাহিম খলিল জানান, ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তার একটি পা হারিয়েছেন। ওই ঘটনায় তার ৪ বন্ধু মারা যায়। বেচেঁ যাওয়া দুই বন্দুর মধ্যে তিনি একজন। সে আগে থেকেই ফুটবল খেলত। ফুটবল তাকে সবসময় টানে। সে শারীরিকভাবে পঙ্গু হলেও মনের দিক দিয়ে হয়নি। তাই আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুটবলকে সাথে নিয়ে।

জামাল পুরের শাহাব উদ্দিন জানান, জন্মগত ভাবে তার একটি পা নেই। সমাজ তাদের অবহেলার চোখে দেখে। কিন্তু সে সমাজকে দেখিয়ে দিতে চায়। তারাও অন্য দশজন মানুষের মত স্বাভাবিক। তাদের চেয়েও বেশিকিছু করতে চায় দেশের জন্য।

আয়োজকদের মধ্যে এনি মোমেন্ট টু টুরস্ এন্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুবাইর ইবনে মাহবুব জানান, ‘সাগরের ঢেউ সবার জন্য’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সমুদ্রের নগরীতে এই আয়োজন। মূলত প্রতিবন্ধীদের অক্ষম না ভেবে তাদের প্রতিভাকে বিকাশের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ায় এই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য। এরই ধারাবাহিকতায় আম্পুটি ফুটবল প্রীতি ম্যাচসহ থাকছে নানা আয়োজন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল কনসালটেন্ট নিউরো (ডেভেলপমেন্ট ডিসেবিলিটি প্রটেকশন ট্রাস্ট) ড. মারুফ আজমেদ মৃদুল জানান, মুজিব বাংলাদেশ কক্সবাজার কার্নিভালের মাধ্যমে স্পেশাল (প্রতিবন্ধী) মানুষের অধিকার তুলে ধারা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে কক্সবাজারে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আম্পুটি ফুটবল ম্যাচসহ তাদের অধিকার বাস্তবায়নে নানা আয়োজন করা হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পাবে দেশ ও জাতির উন্নতি।

বাংলাদেশ আম্পুটি ফুটবল এসোসিয়েশন জেনারেল সেক্রেটারি বদিউজ্জামান আল-আমিন জানান, আম্পুটিকে অঙ্গহানি অর্থে বুঝানো হয়। মূলত যাদের এক হাত নাই ও এক পা নাই তারাই খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। ওয়ার্ল্ড আম্পুটি ফুটবল ফেড়ারেশনের মাধ্যমে এই খেলার নিয়মনীতিসহ সবকিছু পরিচালিত হয়। সারা পৃথিবীর ৫০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশও ওয়ার্ল্ড আম্পুটি ফুটবলের সদস্য। এই খেলায় পরবর্তী ওয়ার্ল্ড কাপের প্রস্তুতি চলছে। এটি প্রীতি ম্যাচ।

মুজিব বাংলাদেশ কক্সবাজার কার্নিভাল উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে সাথে নিয়ে এনি মোমেন্ট টুরস্ টু এন্ড ট্রাভেলসের উদ্যোগে ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দিন কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এই আয়োজন। এতে আম্পুটি ফুটবল ম্যাচসহ রয়েছে প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট, প্রতিবন্ধীদের জন্য সমুদ্র সৈকতে একটি র‌্যাম্প এবং ওয়াশরুম, সাইক্লিং, ম্যারাথন, ঘুড়ি ওড়ানো, ফানুস ওড়ানো ও লোকজ গান ও কনসার্ট।

১৯৮৪ সাল থেকে ৪ বছর পর পর একপিউটি ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা। জাপানসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে বেশ কয়েকবার বিশ্বকাপ বাচাই পর্বে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ।

ভিডিওতে নিউজটি দেখুন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন