মহেশখালীতে ৫’শ টাকার লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়

fec-image

মহেশখালীতে উপকুলীয় বিভিন্ন লবণের মোকামে লবণ থাকার পরও বিদেশ থেকে লবণ আমদানীসহ নানা কারনে দিন দিন মূল্য কমে যাচ্ছে লবণের। ধ্বস নেমেছে লবণ বিক্রিতে। এতে করে সংকটে পড়েছে লবণ চাষীরা। আর চরম হতাশায় এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ৫৫ হাজার চাষীসহ ৫ লাখ মানুষ। যারা দেশের মানুষের লবণের চাহিদা মিটিয়ে জীবন-যাপন করে।

৬০ হাজার একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই শিল্প কক্সবাজারের উপকুলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীসহ উপকুলীয় উপজেলায় অর্থনীতিতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখলেও ভাল নেই লবণ শিল্পের সাথে জড়িতরা।

লাগামহীনভাবে লবণের দাম কমে যাওয়ায় খুবই ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষীরা। লবণের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার দাবীতে চাষীরা ইতোমধ্যে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে মহেশখালীতে।

লবণ চাষীরা জানায়, মাঠ পর্যায়ে এক মণ লবণ উৎপাদন করতে ব্যয় হয় ৩ শত টাকা। সে লবণ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। অথচ এক মাস আগেও প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকায়। এতে লাভ’ত দুরের কথা গুনতে হয়েছে লোকসান। আর এ ক্ষতি’র জন্য চাষীরা দায়ী করছেন অসাধু মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ও চাহিদা পুর্ণ থাকার পরেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানিকে।

এ অবস্থায় লবণ চাষী ও মালিকদের দাবি লবণের মূল্য আগের মতই রাখার। যাতে করে লবণ শিল্প বেঁচে থাকে আর এই শিল্পের সাথে জড়িতরা রক্ষা পায়।

এ দাবিতে মহেশখালীতে বেশ কয়েকদিন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষি ও মালিকরা। তারা মানববন্ধনের মাধ্যমে লবণের ন্যায্যমূল্য পেতে প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্বারকলিপি প্রদান করেছিলো।

মহেশখালী লবণ চাষী সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার পাশা চৌধুরী জানায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মণ প্রতি লবণের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪’শ থেকে ৪’শ ৫০ টাকায়। ২০১৮-২০১৯ সালে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে ১৭০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায়। কিন্তু মাঠে মণ প্রতি লবণ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৩শ টাকা।

মহেশখালীর কালারমারছড়ার লবণ চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, মন প্রতি ৫’শ টাকা থাকা লবণ ১৫০ টাকায় নেমে যাওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। আমি ঋণ নিয়ে এ চাষ শুরু করছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে পারিনি। তার মতে এর জন্য দায়ী পটিয়া ও নারায়গঞ্জের কিছু অসাধু মিল মালিক। যারা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ফেলেছে। আর চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও বেশি লাভের আশায় বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে দেশি লবণের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী জানান, গত বছরের লবণের দামের উপর নির্ভর করে চাষিরা অগ্রিম টাকা নিয়ে লবণের মাঠ করছে। এই অবস্থায় যদি ৫’শ টাকার লবণ ১৭০ টাকা হয়, তাহলে চাষীদের মজুরীর টাকা পর্যন্ত উঠবেনা।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানি না করায় দেশে লবণের দাম ভাল ছিল। চাষিরাও সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও ভ্যাট আর কর দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় বিদেশী লবণের সাথে দেশি লবণ মিশিয়ে বিক্রি করছে। আর তারাই লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে চরম দূরাবস্থায় পড়েছে লবণ চাষী ও মালিকেরা।

বিসিক কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী জানান, এবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। এ বছর লবণের চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন। বিষয়টি তিনি মন্ত্রনালয়কে অবহিত করেছেন বলেও জানান।

কক্সবাজারের ৭ উপজেলা চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ৫৫ হাজার লবণ চাষীর পাশাপাশি এ শিল্পের সাথে ৫ লাখ মানুষ জড়িত। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস লবণ চাষ। তাই লবণ চাষী ও মালিকদের ন্যায্যমূল্য প্রদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন