মাটিরাঙ্গায় এক কিলোমিটার জুড়ে কাঁঠালের হাট

30.05.2016_ Kathal NEWS  Pic (2)

সিনিয়র রিপোর্টার:

খাড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বাজারে জমে উঠছে কাঁঠালের হাট। খাগড়াছড়ি জেলার মধ্যে সব চেয়ে বড় কাঁঠালের হাট এটি। সপ্তাহের শনিবার হাটবার হলেও বৃহস্পতিবার থেকেই প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদসহ আশে পাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা কাঁঠাল নিয়ে আসতে শুরু করেন জেলার সর্ববৃহত এ কাঁঠালের বাজারে। এ দুই দিন মাটিরাঙ্গার এক কিলোমিটার জুড়ে বসে কাঁঠালের হাট।

শনিবারের হাটবারকে সামনে রেখে বুধবারেই মাটিরাঙ্গায় এসে ভীড় জমাতে শুরু করেন নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাম্মনবাড়িয়া ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা। এ সকল ব্যবসায়ীরা ট্রাকে ট্রাকে কাঁঠাল নিযে যাচ্ছেন সমতলের জেলাগুলোতে। সেখানকার আড়তগুলোতে পাহাড়ের কাঁঠালের রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা। এমনটা জানিয়ে একানকার বাজারে আসা পাইকাররা বলেন, সমতলের জেলাগুলোতে পাহাড়ের কাঁঠালের চাহিদাও ব্যাপক।

মাটিরাঙ্গা বাজারে কাঁঠাল নিয়ে আসা খুচরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় এ কাঁঠালের হাটে উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদ ছাড়াও লোগাং, পানছড়ি, মারিশ্যা, মাইসছড়ি, ভুয়াছড়ি, বাঘাইছড়ি থেকে ট্রাক ও চাঁদের গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে আসেন স্থানীয় খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রয় হচ্ছে ৩০ থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামে। সমতলের জেলাগুলোতে এ কাঁঠালের দাম তিনগুনের বেশী।

মাটিরাঙ্গা বাজারের ইজারাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে এ বাজার থেকে কমপক্ষে ১০০ ট্রাক কাঁঠাল সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। যা থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করছে সরকার। এছাড়াও গাড়িতে কাঁঠাল লোড আনলোডসহ অন্যান্য কাজে প্রতি সপ্তাহের হাটবারে অন্তত দুই‘শ শ্রমিক নিয়োজিত থাকায় এ মৌসুমে বেকারত্বের হারও কমে আসে। ফলে অত্র এলাকায় ঘরে ঘরে অনেকটা উৎসব ভাব পরিলক্ষিত হয়।

মাটিরাঙ্গার তবলছড়ির কাঁঠাল বাগান মালিক মো. কবির হোসেন জানান, প্রতি বছর মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কাঁঠাল বিক্রয় করি। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কাঁঠালে কাঁঠালে ভরে গেছে চাষীদের বাগান। বৃষ্টি থাকায় এ বছর কাঁঠালের বাজারদরও ভালো। ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে আশাবাদি চাষিরা। পাইকারদের অনেকেই বাগান থেকেই কাঁঠাল ক্রয় করে থাকে বলে খরচ খুব একটা হয় না বলেও জানান তিনি।

গেল শনিবার মাটিরাঙ্গা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাগানীরা কাঁঠালের স্তুুপ সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রির অপেক্ষায়। প্রতিটি স্তুুপে রয়েছে শত শত কাঁঠাল। পাইকারী ক্রেতারা দরদাম করে কিনছেন।

সমতল জেলা থেকে আগত পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, স্থানীয় চাষিরা এখনো চড়া দাম ধরে রেখেছেন। আর কয়েক দিন পর দাম অর্ধেকেরও নীচে যাবে। তার পরও সমতলের বড় বড় শহরে চাহিদা থাকায় তারা অনেকটা চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাহাড়ের কাঁঠাল।

নোয়াখালীর কাঁঠাল ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, ছোট বড় কোন হিসাব হয় না। প্রতিটি কাঁঠাল এক দরে ক্রয় করি বাগান মালিকের কাছ থেকে। তবে কাঁঠালের এ মৌসুমে মাটিরাঙ্গা বাজারে দালাল এবং মধ্যসত্বভোগীর আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা হয়রানীসহ আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান কয়েকজন পাইকারী ব্যবসায়ী।

মাটিরাঙ্গা বাজারে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ব্যস্ত সড়কের উপরে কাঁঠালের হাট বসে বলে বাড়তি ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের উপরেই কাঁঠাল ট্রাকে লোড-আনলোড হয়ে থাকে বলে দীর্ঘ সময় ধরে যানজট লেগে থাকে সড়কে। যানজট নিরসনে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। ফলে বাজারে আসা জনগণের চলাফেরায় ভোগান্তির সৃষ্টি ছাড়াও প্রায় দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। তারা দূর্ঘটনা এড়ানোসহ জনগণের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে কাঁঠাল বাজারটি অন্যত্র সড়িয়ে নেয়ারও দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক বলেন, কাঁঠাল কলাসহ কাঁচা বাজারটি সড়ানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আমরা ইতমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি। বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে। আমা করছি কুব শীঘ্রই আমরা একটি বড় পরিসরে কাঁঠাল কলাসহ কাঁচা বাজারটি স্থানান্তর করতে পারবো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন