মানবতার সড়কের করুন দশা
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে উখিয়া-টেকনাফে বানের স্রোতের মতো আসতে থাকে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন মানবতাবাদী মানুষের আনা-গোনা। সেই একমাত্র যাতায়াত কক্সবাজার-লিংকরোড-টেকনাফ সড়ক এখন মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। যার করুন পরিনতি ভোগ করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। বলতে গেলে প্রায় ৪০ শতাংশই ভেঙ্গে গেছে। কোথাও কোথাও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত এনজিওর গাড়ি চলাচলে এ করুন অবস্থা হয়েছে বলে দাবি করেছেন উখিয়া-টেকনাফের মানুষ।
সামনে আর কিছুদিন পরেই ঈদুল আযহা ও বর্ষা মৌসুম শুরু হবে। ঈদে লাখো মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবেন। এসব ভাঙা সড়ক পাড়ি দিতে তাদের পোহাতে হবে চরম দুর্ভোগ। এখনই রাস্তা খারাপ হওয়ায় অনেক এলাকায় মিয়ানমার থেকে আনা গরুর ট্রাক সময় মতো গন্তব্যে নিতে পারছেন না।
এলাকার সচেতনরা বলছেন, সারা বছর সড়ক সংস্কার না করে মানবতার ট্রাঙ্গল পয়েন্ট উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় রোহিঙ্গাদের দেখতে সারা বিশ্বের নেতৃবৃন্দ এলে হুড়োহুড়ি করে জোড়াতালি দিয়ে সড়ক মেরামত করা হয়। ফলে সেটা টেকসই বা স্থায়ী সমাধান হয় না। টেকসই সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়ায় এই সড়কের বেহাল দশা থেকেই যাচ্ছে।
উখিয়া-টেকনাফ সড়ককে চার লেন উন্নীতকরনে জাইকার সহযোগিতা চেয়েছেন উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। কিন্তু সেই কাজ এখনো বাসতবায়নের সুফল দেখছেনা।
এ সড়কের কয়েকজন বাস চালক জানান, উখিয়া থেকে টেকনাফ দুই ঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা না। সেখানে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে রাস্তার দুরাবস্থার কারণে। উখিয়ার সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার আক্ষেপ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আজ এ সড়কের এমন কান্না। এনজিওর গাড়ি অবাধে চলাচল করছে নিয়মিত। কিন্তু ভাঙ্গছে সড়ক সেই কথা তারা ভুলে গেছে এখন। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদেরকে। এটা তো হতে পারেনা। তিনি দ্রুত লিংকরোড-টেকনাফ সড়কের উন্নয়ন বাস্তবায়ন চান।
ওই সড়কে চলাচলরত পালকী বাসের চালক শাহেদুল আলম শাহেদ জানান-আমাদের আসলে পোড়াতেই গলদ রয়েছে। সড়কে একটা গর্ত বড় হয়ে চলার অনুপযোগী না হওয়া পর্যন্ত টেন্ডার দেওয়া হয় না। আর টেন্ডার না দিলে কোনো কাজও করা হয় না। আমাদের এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিয়ম হল প্রতিটি সড়ক মহাসড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নিয়মিত তদারকি করবেন। কোথাও সমস্যা হলে বড় গর্ত হওয়ার আগেই তা নিজস্ব লোকজন দিয়ে সংস্কার করবেন টেন্ডারের অপেক্ষায় না থেকে। দরদ দিয়ে সারা বছর সড়ক-মহাসড়কের কাজ করে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, সড়কে যে জায়গাগুলোতে সংস্কার দরকার সেগুলোতে যানবাহনের অত্যাধিক চাপ রয়েছে। এর সাথে সামনে বর্ষা মৌসুম চলে আসছে। এই অবস্থায় অত্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে খোয়া দিয়ে কিছু একটা হয়তো করার চেষ্টা হবে। জরুরি ভিত্তিতে কোনভাবে ঠেকা দিয়ে যেন ইভেন্টটাকে পার করা যায়। কিন্তু টেকসই সমাধান যে করা যায়, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না।
উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সরওয়ার আলম শাহিন বলেন, সড়কে অতিমাত্রায় ওভারলোড রোহিঙ্গাদের মালবাহি ট্রাক চলার কারণে সড়কের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। অনেকে আবার অতিরিক্ত মালামাল বহনের জন্য গাড়ির আকার পরিবর্তন করছে। মরিচ্যা, কোর্টবাজার, উখিয়া, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালীসহ টেকনাফ পর্যন্ত অধিকাংশই ভাঙা।
এ সড়কে অন্তত ৫০ কিলোমিটার রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে কার্পেটিং উঠে বেরিয়ে এসেছে কাদামাটিও ইট। গর্তে পানি জমে সড়কের ওপর তৈরি হয়েছে ছোট ছোট পুকুর। কোনো কোনো জায়গায় বড় বড় গর্তে পানি জমে পরিণত হয়েছে মরণফাঁদ। এ করুন মরনফাঁদ নিয়ে আমরা লেখালেখি করেছি কিন্তু কাজ কিছুই হয়না।
আমাদের প্রতিবাদের মুখে কয়েকদিন আগে কোর্টবাজারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সড়ক পরিদর্শন করে হালকা গর্তও সংস্কার করেন। উখিয়া-টেকনাফের সর্বস্তরের মানুষের দাবী দ্রুত সড়ক সংস্কার করতে হবে। আর না হয় এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক একেইবারে ভেঙ্গে একাকার হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে যাবে।