আশ্রয়ণ কেন্দ্র যেন পরিপাটি প্রশান্তির পল্লী

মানিকছড়িতে ২১ জুলাই নতুন ঘরে উঠবেন ৬২ পরিবার

fec-image

সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় দু’লাখ পরিবারে দুই শতক ভূমি ও লাল-সবুজ টিনের আধা পাকা “নীড়” সাজিয়ে প্রশান্তির সুবাতাস নিশ্চিত করা হয়েছে । এরই আলোকে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় ইতোমধ্যে চারটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ৮৪ পরিবার ও উপজেলার তৃণমূলে ৬১৩ পরিবার আলাদা আলাদা ঘর ও ভূমি পেয়ে স্বস্তিবোধ করছেন পরিবারগুলো । আরও ২৫ টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার চারটি এলাকায় ছিন্নমূল পরিবারের মধ্যে যাদের রাত্রীযাপনে বা মাথা গুজার ঠাঁই ছিল না। ওই সমস্ত পরিবারগুলো আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নির্মিত ঘরে ঠাঁই পেয়ে তাঁরা এখন আনন্দ-আবেগে আত্মহারা! প্রত্যেকে ঘরের পাশে শাক-সবজি বাগান সৃজন, হাঁস-মুরগি, কবুতর ও ছাগল লালন-পালনে নতুন স্বপ্ন বুনছেন তাঁরা । আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ ও যাতায়াতে সড়ক উন্নয়নসহ নানা সুবিধায় একেকটি আশ্রয়ণ কেন্দ্র প্রশান্তির নীড়ে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল,অসহায়, দরিদ্র, বিধবা ও প্রতিবন্ধী মানুষকে নিজস্ব ভূমি ও গৃহে বসবাসের ব্যবস্থায় দুই শতক ভূমির মালিকানা ও ঘর নির্মাণ করে স্বস্তি এনে দিয়েছেন। এর আলোকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে চারটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ৮৪ পরিবারকে ঠাঁই দিয়েছেন। আর প্রতিটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রকে ঘিরে সড়ক উন্নয়ন, বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ ঘরের পাশে শাক-সবজি বাগান সৃজনে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে পরিবারের একেক জন সদস্যকে। শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মুুক্তব ও ইবাদত খানা।

উপজেলা সদরস্থ কর্নেল বাগানের অদূরের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়েছেন ছিন্নমূল নারী সাহিদা আক্তার। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে বাস করতেন গুচ্ছগ্রামস্থ নদীর পাড়ে! মো. আবুল কাশেম (চা- কারিগর) বয়স ও রোগে পঙ্গুত্ববরণ করে জীবন মরণের লড়াইয়ে ঠাঁই পেয়েছেন এই আশ্রয়ণে! শুধু এরা নয়, এ রকম ৮৪টি পরিবার কম-বেশি অসহায় ও দরিদ্র। এরা সকলে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঠাঁই পেয়ে এখন জীবনের অন্তিমকালে এসে শান্তির পরশ পেয়েছেন। সাহিদা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি খুব অসহায়, বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে ফেরি (পুরাতন ও পরিত্যক্ত) ব্যবসা করতাম। হঠাৎ একদিন গ্রেনেড জাতীয় বস্তুর আঘাতে স্বামীর একটি হাত উড়ে যায়! এক পর্যায়ে স্বামীর হাত কবজি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। এর পর পৃথিবী যেন আমার কাছে অন্ধকার। যা ছিল সব খুঁইয়ে স্কুলের বারান্দায় রাত্রি যাপন করতাম। অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যার আর্শিবাদে ভূমি ও গৃহে ঠাঁই পেয়ে যেন স্বর্গে বাস করছি। বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ, শাক-সবজি বাগানে এখন আমরা স্বপ্ন বুনছি। এভাবে উপজেলার তৃণমূলে আরও ৬১৩ পরিবার এককভাবে ভূমি ও গৃহ পেয়ে এখন শান্তির পরশে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছেন।

৩য় পর্যায়ের ২য় ধাপে ২১ জুলাই ৬২টি ঘরের চাবি ও ভূমির দলিল হাতে পাবেন সুবিধাভোগীরা। বর্তমানে আরও ২৫ ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই ঘরগুলো নির্মাণ শেষে উপজেলায় উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭২২ পরিবারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী বলেন,” বাংলাদেশে একজনও ভূমিহীন থাকবে না” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নির্দেশনার আওতায় দেশজুড়ে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ চলমান রয়েছে”। এর আলোকে উপজেলায় ইতোমধ্যে ৬৯৭ দুঃস্থ ও অতিদরিদ্র পরিবারের ঠাঁই হয়েছে দুই শতক জায়গায় নির্মিত নীড়ে। আর নির্মাণাধীন ২৫টি ঘর খুব শিগরই কাজ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হবে সুবিধাভোগী পরিবারে। তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সকল মানুষকে পর্যাক্রমে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন