মিয়ানমারে দেড় বছরে জান্তা বাহিনীর ৯০ সেনা ঘাঁটি হাতছাড়া

fec-image

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে জান্তা সরকারের সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ বাড়ছে। ক্ষমতা দখলের পর এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৯০টি সেনা ঘাঁটি হারিয়েছে দেশটির জান্তা বাহিনী। বিগত ১৭ মাসে দেশটির বিভিন্ন নৃ–গোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠনের কাছে এসব ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। কারেন, কাচিন, চিন, রাখাইন রাজ্যে প্রতিরোধ-যুদ্ধ জোরদার হওয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়ছে সেনারা, বলছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিকদের নিয়ে গঠিত মিয়ানমারের বিশেষ উপদেষ্টা কাউন্সিল। এসব ঘাঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘাঁটিই কৌশলগতভাবে এবং প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও রসদ সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে জানানো হয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী নিউজের এক প্রতিবেদনে।

দেশটির রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সাথে জান্তা সেনাদের তীব্র সংঘর্ষ চলছে। গত দেড় বছরে রাখাইনের মংডুতে ৩০টি এবং পার্শ্ববর্তী চীন রাজ্যের পালেতোয়ায় ৬টি সেনা চৌকির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনারা, পর্যবেক্ষকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম ইরাবতি।

এছাড়া ইরাবতির আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত বিগত ১৫ মাসে কেবল কায়াহ রাজ্যেই কারেন বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘাতে ১ হাজার ৪৯৯ সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে। বিপরীতে বিদ্রোহী যোদ্ধা মারা গেছে ১৫১ জন। এই সময়ে রাজ্যটিতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষ। দেশটির অন্যান্য রাজ্যের অবস্থাও কম–বেশি একই রকম। জান্তা বাহিনীর এমন কোণঠাসা অবস্থা তাদের আরও সহিংস করে তুলবে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

এদিকে গত আগস্টে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা পালেতোয়ার ৫টি সেনা চৌকি দখল করে এবং আরেকটি থেকে সরকারি সেনারা পিছু হটে যায়। একই সময়ে, মংডুতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি ঘাটির দখল নেয় যোদ্ধারা, হত্যা করে ১৯ পুলিশ সদস্যকে। ঘাটিটি উদ্ধারে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা চালালেও এখনও সফলতা পায়নি সরকারি বাহিনী। রাখাইনের আরও কয়েকটি চৌকির দখলও হারিয়েছে সেনারা, জানিয়েছে পর্যবেক্ষকেরা।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে ৩ দশক ধরে সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহী কাচিন ইনডিপেনডেন্ট অর্গানাইজেশনের সংঘর্ষ চলছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর সহিংসতা আরও জোরদার হয়েছে। বিমান হামলা চালিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটির দখল নিতে ব্যর্থ হয়েছে সেনাবাহিনী।

থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী চিন রাজ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে জান্তা সরকার। তবে মে মাসের মাঝামাঝি বিদ্রোহীদের জোরালো হামলার শিকার হতে থাকে সেনাবাহিনী। এপর্যন্ত রাজ্যের ১৯টি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনারা।

কায়া এবং কারেন রাজ্যেও প্রবল প্রতিরোধের শিকার মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই দুই রাজ্যে ৩১টি ঘাঁটির দখল হারিয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের সংগঠন মিয়ানমারের বিশেষ উপদেষ্টা কাউন্সিলের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশটির মাত্র ১৭ শতাংশ এলাকার পুরোপুরি দখল আছে জান্তা সরকারের হাতে। আর ৫২ শতাংশ এলাকা রয়েছে জাতীয় ঐক্য সরকার এবং জান্তা বিরোধী বিভিন্ন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

একজন বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম ইরাবতী বলছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলায় এমনকি ১ হাজার সেনা নিয়ে বড় কোন অভিযান চালানোর সক্ষমতাও হারিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে আক্রমণ করার বদলে আত্মরক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে জান্তা সরকার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন