রাখাইনে জান্তা বাহিনীর ২ কর্নেল ও এক মেজর নিহত

fec-image

মিয়ানমারে বিদ্রাহীদের হামলার মুখে দিশেহারা জান্তা সরকার। এবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে তীব্র সংঘাতে জান্তা বাহিনীর ২ জন কর্নেল ও একজন মেজরসহ ২৩ সেনা সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।

বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে আরাকান আর্মি

বিবৃতিতে আরাকান আর্মি বলেছে, রাখাইনের পোন্নাগিউন শহরে গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে সামরিক বাহিনীর ৫৫০ তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিন বিভাগের (এলআইবি ৫৫০) সঙ্গে সংঘাত বাঁধে গোষ্ঠীটির। ১৩ দিন ধরে ব্যাপক যুদ্ধ চলার পর গত ৪ মার্চ এলআইবি ৫৫০’র হেড কোয়ার্টার দখলে নেয় এএ

হেড কোয়ার্টার ও তার আশপাশের এলাকা থেকে এই সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে আরাকান আর্মি। নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিচয়ও উদ্ধার করা হয়েছে। এরা হলেন কর্নেল মায়ো মিন কো কো, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিও দু অং এবং মেজর সো হাতওয়ে।

৫৫০ তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি বিভাগের হেডকোয়ার্টার দখলের পশাপাশি সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, সামরিক সরঞ্জাম এবং কয়েকটি সাঁজোয়া যান জব্দ করেছে আরাকান আর্মি। সেই সঙ্গে পোন্নাগিউন শহরকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে গোষ্ঠীটি।

প্রসঙ্গত, রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে থেকে পোন্নাগিউনের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। পোন্নাগিউনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে সিতওয়ের নিকটবর্তী পাউকতাও শহরও দখলও করেছে আরাকান আর্মি

সর্বশেষ ২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি। কিন্তু সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী নেত্র অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই ফুঁসে উঠেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনতা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমারের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভ দমনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করার পর ২০২২ সালের দিকে গণতন্ত্রপন্থীদের একাংশ জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে।

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএমভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত।

রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বাঁধে নভেম্বর থেকে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেতওয়া শহরজুড়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালানো শুরু করে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

এর আগে গত মাসে সিতওয়ের সামরিক কমান্ডারদের সতর্কবার্তা দিয়েছিল আরাকান আর্মি। সেই সতর্কবার্তায় কমান্ডারদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে গোষ্ঠীটি বলেছিল, যদি সামরিক বাহিনী তা না করে— সেক্ষেত্রে পরাজয় বরণ করতে হবে।

সিতওয়ে সামরিক কমান্ড আত্মসমর্পণ করেনি। তবে আরাকান আর্মির হুমকির পর সিতওয়ের জান্তা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী সাবেক এক সেনা কমান্ডার দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘পোন্নাগিউন দখলের মধ্যে দিয়ে আরাকান আর্মি বার্তা দিলো যে, তারা সিতওয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে। গোষ্ঠীটি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে সিতওয়ের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

সূত্র : দ্য ইরাবতি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন