ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

ম্যালেরিয়া

দিদারুল আলম রাফি:

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং ৩ পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় ম্যালেরিয়া ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এই রোগ।

তিন পার্বত্য জেলায় কয়েক বছর ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রোধ করা গেলেও তা আবারো জনমনে আতংক দেখা দিয়েছে। গত কয়েকবছর তা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলতি বছরে, পাহাড়ের মানুষের কাছে ফের মহামারী হিসেবে দেখা দিয়েছে ম্যালেরিয়া।

ম্যালেরিয়া মূলত প্লাজমোডিয়াম, ফেলসিপেরাম, ভাইভক্স, ওভালে অথবা ম্যালেরি-এর যেকোনো একটি জীবানু বহনকারী মশার দংশন থেকে এ রোগ হয়।

ম্যালেরিয়ার লক্ষণ:
ম্যালেরিয়ার সাধারণ লক্ষণ হল শীত লাগা এবং কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। এটা বড়দের মধ্যেই অধিকহারে দেখা যায়। বাচ্চাদের অনেক সময় জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমাল, শ্বাসজনিত অসুবিধা ইত্যাদি দেখা যায়। ছয় মাস
থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা ভাবটি লক্ষ্য করা যায় না। এর পরিবর্তে খিটখিটে ভাব, ঝিমুনি, খাওয়ার অনীহা, বমি, মাথাব্যথা, খুব বেশী জ্বর প্রভৃতি দেখা দিয়ে থাকে। পাঁচ বছরের বেশী বয়সীরা ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হলে প্রথমে শীত ও কাঁপুনি অনুভব করে, তারপর জ্বর ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সেই সঙ্গে প্রচন্ড মাথাব্যথা ও তারপর ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লে রোগী খুব দুর্বল বোধ করে। ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া ভয়াবহ আর জটিল আকার ধারণ করতে পারে শুরু থেকেই।
খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, রক্তস্বল্পতা, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, কোমায় আচ্ছন্ন হওয়া ইত্যাদি জটিলতার লক্ষণ।

প্রাথমিক বিপদ সংকেত 
ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে:

পানি অথবা খাবারের প্রতি খুব বেশী অনীহা, ঘন ঘন বমি হওয়া, খিঁচুনি ও ঝিমুনিভাব দেখা দিলে বা অজ্ঞান হয়ে পড়লে এবং রোগীর মাঝে অত্যধিক ক্লান্তি দেখা দিলে।

রোগ নির্ণয়ের উপায় 
রক্ত পরীক্ষার মধ্যে ম্যালেরিয়ার জীবাণু খুঁজে বের করা রোগ নির্ণয়ের সর্বেোত্তম উপায়। ম্যালেরিয়া সন্দেহ করলে যে কোন সময়ই রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা যাবে। তবে তা অবশ্যই ওষুধ শুরু করার আগে। যদি প্রথম পরীক্ষায় কিছু না পাওয়া যায়, তবে পরপর তিনদিন পরীক্ষা করা উচিত। মাইক্রোস্কোপ ছাড়াও এখন
ম্যালেরিয়ার এন্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এ ধরনের পরীক্ষায় কম সময় লাগে।

ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা                                                                                                                    রক্তের ব্লাড ফিল্ম নামক পরীক্ষাটি দ্বারা জীবাণু নিশ্চিত করা যায়। 

জটিলতা                                                                                                                                রক্ত শুন্যতা, প্লিহা (Spleen) বড় হয়ে যাওয়া, কোমাসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

চিকিৎসা 
ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য রোগ দ্রুত শনাক্তকরণ ও আরোগ্য লাভ। চিকিৎসা নির্ভর করে রোগী কী ধরনের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, ভাইভ্যাক্স না ফ্যালসিপেরামে। ম্যালেরিয়ার জন্য ক্লোরোকুইন সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ। কিন্তু পুরো কোর্স খেতে হবে। তবে এখন আরও ভাল ভাল ওষুধ দেশে আছে।
ম্যালেরিয়ার জটিলতা দেখা দিলে সত্বর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সব রকম সুব্যবস্থা আছে এমন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা করা উচিত।

ম্যালেরিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায় 
ম্যালেরিয়াবাহী মশা মূলত সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্যে কামড়ায়। এ সময়টাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। সন্ধ্যা থেকে শোয়ার আগে আর শোয়ার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিছানায় যাওয়ার আগে শরীরের খোলা অংশগুলোতে মশা তাড়ানোর ক্রিম লাগানো যেতে পারে; কিন্তু এ ক্রিমগুলোর কার্যকারিতা স্বল্পস্থায়ী। মশারি ব্যবহার না করলে মশা তাড়ানোর ধুপ ও ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়িঘর ও আশপাশে যাতে মশা বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোথাও অবাঞ্ছিত পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ওষুধ খেয়ে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পদ্ধতিটি যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য নয়। কোনো অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার
প্রাদুর্ভাব থাকলে সে স্থানে যাবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কলোরোকুইন বা প্রগুয়ানিল জাতীয় ঔষধে এ রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, পার্বত্যনিউজ
Facebook Comment

One Reply to “ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন