রাঙামাটিতে অপহৃত ৩ বন কর্মকর্তা এখনো উদ্ধার হয়নি: চলছে মুক্তিপণের দেনদরবার: বনবিভাগের অস্বীকার
পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :
অপহরণের ১ দিন পার হয়ে গেলেও কোন খোঁজ মেলেনি রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় অপহত দুই বন কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর। এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বনবিভাগ কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির উপর চাপ সৃষ্টির জন্য রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির ৪টি বন বিভাগে কাঠের পারমিট সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে পাহাড়ে চাপা আতঙ্ক। বাইরে প্রশাসনের উদ্ধার তৎপরতার কথা বলা হলেও ভেতরে চলছে মুক্তিপণ দিয়ে আপসরফার চেষ্টা। জানা গেছে, মুক্তিপণের অংক নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এখনও ছাড়া পাচ্ছে না তারা।
রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার কাট্রলীর এলাকার কাবিখারা জোত বাগান পরির্দশন করতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ফরিদ মিয়া (৫৫), রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল হোসেন (৩৫) ও বন কর্মচারী বিবর্তন চাকমা (৫০)। এ অপহরণের ঘটনায় পুরো রাঙামাটি জেলায় গুঞ্জন শুরু হলেও বারবার অস্বীকার করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি থেকে একটি উপজাতীয় সংগঠনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা মাস দুয়েক পরিশোধ না করায় চাপ সৃষ্টি করার লক্ষে উপজাতীয় সংগঠনটি উক্ত তিন ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে। মুক্তিপণ হিসাবে তারা প্রথম দিকে বিপুল অংকের টাকা দাবী করলেও বর্তমানে তা কমে এসেছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। বর্তমানে তারা বকেয়া চাঁদার সাথে অতিরিক্ত ৫/৬ লাখ টাকায় আপোষ করতে রাজি বলে রাঙামাটির একাধিক নিরাপত্তা সূত্র পার্বত্যনিউজকে জানিয়েছেন। রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা ও স্থানীয় নিরাপত্তা সূত্রগুলো নাম না প্রকাশের শর্তে পার্বত্যনিউজকে বলেন, রাঙমাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি প্রতি ট্রাক কাঠ থেকে ১৪ হাজার করে টাকা চাঁদা নিয়ে থাকে। এই টাকা জেএসএস, ইউপিডিএফ, বনবিভাগসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থায় চাঁদা হিসাবে দিয়ে থাকে। তবে এর বাইরেও কাঠ ব্যবসায় আরো বিভিন্ন নামে বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। এ বিষয়ে বিস্তাারিত প্রমাণ পার্বত্যনিউজের হাতে রয়েছে। সম্প্রতি সমিতি থেকে এই চাঁদার অংকের ভাগ জেএসএসকে দেয়া হলেও অন্য উপজাতীয় সংগঠন ইউপিডিএফকে দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এ অপহরণের ঘটনা তারই প্রতিক্রিয়া। সূত্র আরো জানিয়েছে, উপজাতীয সংগঠনগুলো তাদের জন্য নির্ধারিত চাঁদা সময়মতো পরিশোধ না করলে তা পেনাল্টিসহ দিতে হয়। এতে কাজ না হলে অপহরণ, খুনসহ নানা শাস্তি দেয়া হয়।
তবে রাঙামাটির পার্বত্য চট্টগ্রাম বন সার্কেলের বন সংরক্ষক আবু হানিফ পাটোয়ারি তিন বন কর্মকর্তার-কর্মচারীর অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অপহরণের বিষয়টি সত্য নয়, তিন বন কর্মকর্তা কর্মচারী জোত পরিদর্শনে গেছেন এবং তাদের সাথে মোবাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। যদি তারা অপহরণের শিকার হতো তাহলে আমরা থানায় অভিযোগ করতাম।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি লংগদু উপজেলা থানার কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম চৌধূরী বলেন, অপহরণের ঘটনার কথা লোক মুখে শুনেছি, এ ব্যাপারে সঠিক কিছুই জানি না। তবে এ এখনো অভিযোগ থানায় আসেনি। তাই মামলাও হয়নি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে জেলার লংগদু উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কাট্টলীর খাড়িকাটা নামক এলাকায় জোত বাগানের পরিদর্শন করতে যায় বন বিভাগের দুই কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া (৫৫), রবিউল হোসেন (৩৫) ও কর্মচারী বিবর্তন চাকমা (৫০)। এসময় হঠাৎ করে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের ঘিরে ফেলে। পরে অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে তুলে নিয়ে যায়।