রাঙামাটিতে অবৈধ অটোরিকশার ছড়াছড়ি, দেখার কেউ নেই
রাঙামাটি জেলা শহরে এখন অবৈধ অটোরিকশার ছড়াছড়ি। এ যেন দেখার কেউ নেই। এ নিয়ে প্রশাসন, অটোরিকশা চালক সমিতি বিষয়টি নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।
স্বাধীনতার পরবর্তী রাঙামাটি শহরের সড়কগুলোর পরিধি কিছুটা বাড়ানো হলেও যে হারে অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে তার তুলনায় সড়কের পরিধি বাড়েনি।
সম্প্রতি যেখানে সেখানে যানবাহগুলোর পার্কিং শহরে যেমন জ্যামের সৃষ্টি করছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা।
রাঙামাটি শহরে বসবাসকারী যাত্রী মনু মারমা বলেন, রাঙামাটি শহরটিকে পর্যটক বান্ধব শহর বলা চলে। এখানে অনেকগুলো অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে। কোন দুর্ঘটনা হলে অটোরিকশার নাম্বার না থাকায় সনাক্ত করাও যাবে না। যান চলাচলে কোন শৃঙ্খলা দেখতে পাচ্ছি না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে হলে জরুরী ভিত্তিতে অবৈধ অটোরিকশাগুলোতে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি অটোরিকশা চালক সমিতির একাধিক নেতা এবং চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে বর্তমানে ৬৪০টির মতো বৈধ অটোরিকশা রুটে চলাচল করছে। চলতি বছরের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি রাঙামাটি সার্কেল এর পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৩০ আগস্ট সময় বেঁধে দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে চালক সমিতি ২৫০টির মতো অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করে। বর্তমানে আবেদনকৃত এসব অটোরিকশাগুলো রুটে চলছে।
এছাড়া রাঙামাটি সিরিয়ালের বাইরে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি সিরিয়ালের অনেকগুলো অটোরিকশা রাঙামাটি শহরে রুট পাস ছাড়া অবৈধ ভাবে চলাচল করার কারণে পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় শহরে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বলে তারা দাবি করেন।
রাঙামাটি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন-এর সভাপতি পরেশ মজুমদার বলেন, রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অটোরিটি রাঙামাটি সার্কেল গত ৬আগস্ট এক নোটিশের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশাগুলো রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। আর এসময়ের মধ্যে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আনুমানিক ২৫০টির মতো অটোরিক্সা রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রায় আড়াইমাস পার হলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য এখনো কোন নির্দেশ পাইনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সদস্য কেন বাড়াচ্ছেন এবং কিভাবে সমিতির সদস্য অন্তর্ভুক্ত করাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, বর্তমানে আমাদের সমিতির এক হাজার চালক সদস্য রয়েছে। যাদের লাইসেন্স রয়েছে তাদের আমরা সদস্য করি। প্রতি জেলায় ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের নিয়ম মেনে কেউ যদি সদস্য হতে আবেদন করে তাহলে আমাদের নিতে হয়।
অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন-এর এ নেতা ক্ষোভের সাথে বলেন, রাঙামাটিতে আমাদের সমিতির অটোরিক্সা ছাড়াও রুট পারমিট ছাড়া চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান সিরিয়াল দেওয়া আরও ২০০এর কাছাকাছি অবৈধ অটোরিক্সা রাঙামাটি শহরে চলাচল করছে। এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে ট্রাফিক বিভাগের প্রধানকে অবহিত করা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এছাড়া বিআরটিএ কর্তৃক দীর্ঘ ১৮মাস ধরে কোন সভা না করায় আমরা আমাদের অভিযোগগুলো যথাযথ ভাবে উত্থাপন করতে পারছেন না বলে যোগ করেন তিনি।
রাঙামাটি পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ইসমাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে আছে। এর মধ্যে আমরা অনেকগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিক্সার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। মূলত সমস্যা হলো- যেগুলোকে রেজিস্ট্রেশবিহীন অটোরিকশা বলা হচ্ছে সেগুলো রেজিস্ট্রেশন পেতে বিআরটিএ বরাবর আবেদন করেছে। প্রশাসনিক জটিলতায় সেগুলো এখনো রেজিস্ট্রেশন পাইনি বলে জানা গেছে।
ট্রাফিক পুলিশের টিআই আরও বলেন, রাঙামাটি যাত্রীদের চলাচলের জন্য বিকল্প কোন যান না থাকায় রাঙামাটিতে অটোরিকশার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাইলেও মানবিক কারণে সবগুলো অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ চালক সমিতির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাবে। যে কারণে আমাদের অভিযান কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাহির থেকে আগত অটোরিকশাগুলো পর্যটক নিয়ে রাঙামাটি শহরে প্রবেশ করে। এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে বাহির থেকে আসা এসব অটোরিকশাগুলো স্থানীয় যাত্রী বহন করে ভাড়ায় চলতে পারবে না। যদি এ রুটে ভাড়ায় চালানোর চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) রাঙামাটি সার্কেল এর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এমডি শাহ আলম বলেন, আগামী ২৫নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভার মাধ্যমে আবেদনকৃত এসব অটোরিকশাগুলো রেজিস্ট্রেশনের দেওয়া হবে কি না ব্যাপারটি নিয়ে সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
রেজিস্ট্রেশনের জন্য কয়টি আবেদন জমা পড়েছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৮৮৪টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে আবেদনগুলো এখনো যাচাই-বাচাই করা হয়নি। ২৫নভেম্বর সভার পর বিষয়গুলো নিয়ে সিন্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
দুর্ঘটনার সময় অটোরিকশাগুলো সনাক্ত করতে আগে বডির পিছনে নাম্বারগুলো বড় করে লেখা থাকলেও এখন বেশিরভাগ অটোরিকশাগুলোতে নাম্বার দেওয়া নাই এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আইনে স্পষ্ট বলা আছে, প্রতিটি অটোরিকশার বডির পিছনে তাদের নাম্বারগুলো বড় করে লেখা থাকতে হবে। তবে যেসব অটোরিকশাগুলোর বডির পিছনে নাম্বার দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান বলেন, রাঙামাটি জেলাটি বড় হলেও শহরটি অনেক ছোট। এ ছোট্ট শহরে যে পরিমাণ রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে এর কারণে সড়কে যেকোন মূহুর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কারণ সড়কগুলো দু’লেইনের না থাকায় যেখানে বৈধ অটোরিকশা চলতে যেখানে হিমশিম খেতে হয় সেখানে অবৈধ অটোরিকশার দৌরাত্বে যানবাহনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারের উচিত এসব অবেধ অটোরিকশাগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে নিয়ে আসা। তাহলে যান চলাচলে যেমন কিছুটা সুশৃঙ্খল ফিরে আসবে তেমনি সরকারও পাবে বড় অংকের রাজস্ব এমনটা মনে করেন তিনি।