রামগড়ে ইউএনওকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে বিয়ে দেয়া হল জেডিসি পরীক্ষার্থী ফাতেমাকে
নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়:
মেহেদীর রংয়ে রঙিন দুহাত নিয়ে গত শুক্রবার জেডিসি পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে এসেছিল ফাতেমা আক্তার(১৩)। কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে তার রঙিন হাত দুটি দৃষ্টি এড়ায়নি রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো: ইকবাল হোসেনের। সন্দেহবশত: ইউএনওর জিজ্ঞাসাবাদে ফাতেমা অকপটে স্বীকার করে নেয় পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরেই তার বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা।
পরীক্ষার আগেরদিন রাতে অর্থাৎ গত বৃহষ্পতিবার(৬ নভেম্বর) তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়েছে। রামগড়ের পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ির বাগানবাজারের বাসিন্দা আবুল বশরের দুবাই প্রবাসি পুত্র জহিরুল ইসলাম(৩০)এর সাথে তার বিয়ের সিন্ধান্ত চূড়ান্ত করে বর কনের দুই পরিবার। অপ্রাপ্ত বয়সী ফাতেমার বিয়ের কথা শুনেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে তার বাবা ইলিয়াছকে মোবাইল ফোনে কল করে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করতে নিদের্শ দেন। নচেৎ বাল্য বিবাহ দেয়ার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও তাকে শুনিয়ে দেন।
একই নিদের্শনা দেয়া হয় পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম(আলমগীর)কে। ফাতেমার বাড়ি রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের নাকাপার সাইদংছড়া গ্রামে। সে নাকাপা ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রী।
শুক্রবার বাদ জুমা ফটিকছড়ির বাগানবাজার থেকে বরযাত্রীও যথারীতি যায় নাকাপায় কনের বাড়িতে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কঠোর হুঁশিয়ারির মুখে মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় কাজি অপ্রাপ্ত বয়সী কনের বিয়ে পড়াতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে ভুরিভোজন করেই ফিরে আসতে হয় বরযাত্রীদের। ঘটনাটি নাকাপা এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো রামগড়ে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদক্ষেপ প্রশংসিত হয় এলাকার সচেতন মহলে। কিন্তু ইউএনওর বাধাপ্রাপ্ত এ বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করতে বর কনের পরিবার গোপনে নানা ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত থাকে শুক্রবারের সারা বেলা। পরিকল্পনা মাফিক শুক্রবার সন্ধ্যায় কনে ফাতেমাকে নাকাপার পিতৃালয় থেকে গোপনে নিয়ে যাওয়া হয় বাগানবাজারের বরের বাড়িতে। সেখানেই হুজুর ডেকে এনে বিয়ে পড়ানো হয় তাদের। তবে কাবিননামা বা নিকাহনামা রেজিস্ট্রি হয়নি বিয়ের। গত শনিবার দুপুরে বরের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় বৌভাত অনুষ্ঠান।
প্রতিবেশীরা জানায়, জহিরুল ইসলাম সাত বছর ধরে দুবাইয়ে থাকেন। গত ৪-৫ মাস আগে তিনি বাড়িতে আসেন। মাস খানিক পরেই আবার চলে যাবেন দুবাই। অপ্রাপ্তবয়সী ফাতেমাকে বিয়ে দিতে রাজি করাতে বর পক্ষ কনের বাবাকে নগদ এক লক্ষ টাকা এবং ছয় ভরি স্বর্ণালংকার উপঢৌকন দিয়েছে। পাতাছড়ার ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজি নুরুল আলম(আলমগীর) জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য ফাতেমার ভুয়া জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট সংগ্রহের চেস্টা করেছিল তার বাবা। কিন্তু তাঁর কঠোর মনোভাবের কারণে সে চেস্টা সফল হয়নি। নাকাপা মসজিদের ইমামও বিয়ে পড়াতে রাজি হননি।
এদিকে গতকাল রবিবার অংক পরীক্ষা দিয়েছে নববধূ ফাতেমা। পরীক্ষা শেষে উপজেলা নির্বাহি অফিসার মো: ইকবাল হোসেন প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ঢেকে এনে ফাতেমা আক্তারকে গোপনে বিয়ে দেয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে সরাসরি তা অস্বীকার করে।