রামগড়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হামলায় বাঙালী পরিবাবের ৯ জন আহত, ঘর লুটপাট, ভাঙচুর, দুই গৃহবধু গণধর্ষিত

দুই গৃহবধূ গণধর্ষণের অভিযোগ করলেও ওসি’র অস্বীকার

31

নিজস্ব সংবাদদাতা, রামগড়:
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম ছোট বেলছড়ি এলাকায় শনিবার রাতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হামলায় দুটি বাঙ্গালি পরিবারের ৯জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় দুই গৃহবধূ গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষিতা দুই গৃহবধু পার্বত্যনিউজের কাছে গণধর্ষণের অভিযোগ করলেও থানার ওসি রহস্যজনক কারণে ধর্ষণের মামলা নিতে রাজি নয়। এ ছাড়াও সন্ত্রাসীরা দুটি পরিবারের ঘরের সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ঘরবাড়ী ভাঙচুর করেছে।

আহতরা আজ রবিবার দুপুরে রামগড় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরা হচ্ছেন তাসলিমা বেগম(৪৫) ও তার তিন পুত্র আলমগীর হোসেন(২৭), আল আমীন(২৪),রাসেল(১৫) এবং অপর পরিবারের ওমর ফারুক(৬০), স্ত্রী আলেয়া বেগম(৪৫), পুত্র আব্দুল্লাহ(২৭) ও পুত্রবধূ শায়মা বেগম(২২)। এছাড়া তাসলিমা বেগমের স্বামী মকসুদ মোড়ল হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসীন আলমগীর জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ২৮-৩০জন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী তাদের বাড়িতে হানা দেয়। সন্ত্রাসীরা প্রথমে তাদের ডাকাডাকি করতে থাকে। তারা সাড়া না দেয়ায় সন্ত্রাসীরা দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে প্রথমেই মোবাইল ফোনগুলো ছিনিয়ে নেয় তারা। সন্ত্রাসীরা ঘর থেকে অস্ত্রের মুখে একেএকে তাদের সবাইকে বাহিরে নিয়ে এসে গাছের সাথে বেঁধে ফেলে। একইভাবে বাড়ির অন্য পরিবারের মহিলা পুরুষদেরও ঘর থেকে বের করে এনে বেধে রাখা হয়। পরে সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ বন্দুকের বাট ও শক্ত লাঠি দিয়ে সবাইকে এলোপাথারিভাবে বেদম মারপিট করে।

অন্য গ্রুপটি দুটি ঘরের সমস্ত মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করতে থাকে। আলমগীর জানান, এসময় সন্ত্রাসীরা অস্ত্র তাক করে রেখে কেউ চিৎকার করলে গুলি করে মারারও হুমকী দেয়।

তাসলিমা বেগম(৪৫) জানান, বেদম মারপিট করার পর সন্ত্রাসীরা তাঁকে ও গৃহবধূ শায়মা বেগম(২২)কে হাতের বাধঁন খুলে অস্ত্রের মুখে বাড়ির পাশের কচু ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক তাদের দু’জনকে ধর্ষণ করে। এসময় তিনি সন্ত্রাসীদের নিজের সন্তানতুল্য বলে অনেক আকুতি মিনতি জানালেও তারা কর্ণপাত করেনি। তিনি বলেন, দুই সন্তানের মা গৃহবধূ শায়মাকে ৩-৪জন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। নির্যাতনের পর তাদের দুজনকে আবার গাছের সাথে বেধে রাখে সন্ত্রাসীরা।

আলমগীর জানান, সন্ত্রাসীরা তাদের ঘর থেকে ৯ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোন, ১টি সোলার প্যানেল, একটি টেলিভিশন, নতুন কাপড়চোপড়, হাঁড়ি পাতিল, টর্চ লাইট, মশারী ও ১০টি হাঁসমুরগী লুট করে নিয়ে
যায়। অন্য পরিবারের ঘর থেকে ২৭ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোনসহ সমস্ত মালামাল নিয়ে গেছে তারা। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার সময় আজ রবিবার সকালের মধ্যে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য তাদের হুমকী দিয়ে যায়।

আহত আব্দুল্লাহ জানায়, তারা গত বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা থেকে এখানে এসেছেন। আলমগীর জানান, ২০০৯ সালে সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝর আইলায় সর্বস্ব হারিয়ে তারা সপরিবারে এখানে এসে পাঁচ একর টিলা ভূমি কিনে বসবাস করছেন। সন্ত্রাসীরা মূলত: তাদের উচ্ছ্বেদ করতেই এভাবে হামলা করেছে।

এদিকে পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম(আলমগীর) জানান, নিরীহ এ বাঙ্গালি পরিবার দুটির উপর সন্ত্রাসীদের এ হামলা অত্যন্ত নির্মম। সন্ত্রাসীরা দুই গৃহবধূকে ধর্ষণ করার কথা তাঁর কাছেও ধর্ষিতারা বলেছেন বলে তিনি জানান।

এদিকে এ ব্যাপারে রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: মাইন উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে আজ রবিবার বিকালে তিনি ও রামগড় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: ইউনুছ আলী মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুই গৃহবধূ ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঐ গৃহবধূরা তাঁর কাছে শারীরিক নির্যাতিত হওয়ার কথা বললেও ধর্ষিত হওয়া কথা স্বীকার করেনি। তিনিও আরও বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, সন্ধ্যার পর হাসপাতাল থেকে ঐ দুই গৃহবধূকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে যায় বলে জানাগেছে। তবে এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত থানায় এ ব্যাপারে কোন মামলা রুজু হয়নি বলে জানা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন