রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ: ৪ জনের মৃত্যু

fec-image

বছরের শুরু থেকেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। গত জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ক্যাম্পগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৯৫ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ইতিমধ্যে জেলার ১৩৯ জন বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে আক্রান্ত বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ৩৩টি ক্যাম্পের মধ্যে উখিয়ার চারটিতে আক্রান্তের হার বেশি। পুরনো খাল ও জলাশয়ের কারণে এসব ক্যাম্পে আক্রান্ত বেশি। জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের ১০ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৯৫ জন। এর মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্যাম্পগুলোতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি। ইতোমধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৯৫ জন।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ মশারি বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে ডেঙ্গু রোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’

সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শহরের বাসিন্দা শফিউল করিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। সঙ্গে পেটব্যথা। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ সেবন করেছি। কোনও কাজ হয়নি। পরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। গত তিন দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখনও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।’

একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোহিঙ্গা যুবক নুর উল্লাহ বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে ক্যাম্পে চিকিৎসা নিয়েছি। ভালো না হওয়ায় ওখানকার চিকিৎসকরা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছি। ওষুধ খাওয়ার পর এখন কিছুটা সুস্থ আছি। বর্তমানে ক্যাম্পের ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী আছে।’

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১০ জুলাই পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন জেলার ১৩৯ জন বাসিন্দা। ঈদের পরপরই শহরে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে দিনে ১০-১২ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই শহরের বাসিন্দা।’

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সেইসঙ্গে জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। গত জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত জেলার ১৩৯ জন বাসিন্দা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে অনেক রোহিঙ্গা চিকিৎসা নিয়েছেন। ঈদের পরপরই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দিনে ১০-১২ জন রোগী আসছেন।’

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। এ কারণে অসংখ্য গর্তে পানি জমে এডিস মশার জন্ম হচ্ছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ঝুঁকি কমাতে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।’

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘রোগীদের চিকিৎসায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন