রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা

fec-image

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিন দিন বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবক শ্রেণি খুন-ধর্ষণ থেকে শুরু করে চুরি-ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ মাদক ব্যবসায় জড়াচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধে অনেক সময় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। আড়াই বছরে ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি। এর মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১টি। এসব মামলায় আসামি ১ হাজার ৮৮ রোহিঙ্গা।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, প্রত্যাবাসনের পক্ষে ও বিপক্ষে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। বিদ্রোহী সংগঠন ‘আল-ইয়াকিনথসহ কয়েকটি রোহিঙ্গা গোষ্ঠী অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

সবশেষ সোমবার (২ মার্চ) কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৮ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন ও বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হন। নিহতরা কুখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত জকি গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এমনকি নিহত সাতজনের মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে র‌্যাব ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ফের গুলিবর্ষণ করেন ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা।

কর্মহীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দিনে দিনে বাড়ছে নানারকম অপরাধ প্রবণতা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন।

সবকিছু বিবেচনা করে, দীর্ঘ সময়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় ক্যাম্পগুলোর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৬তম ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নবগঠিত এ ইউনিটের জন্য সৃজন করা হয়েছে ৫৮৮টি পদ। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।

নবগঠিত গঠিত ১৬ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠাকালেই দায়িত্ব সামলাবেন এসপি হেমায়েতুল ইসলাম। সেই সঙ্গে দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, চারজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), নয়জন পরিদর্শক, ৩১ জন উপ-পরিদর্শক, ৪৫০ কনেস্টবলসহ প্রায় ৫৮৮টি পদ থাকছে নতুন এ ব্যাটালিয়নে।

বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ১৬তম ইউনিটের অনুমোদন দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের অপরাধ কার্যক্রম ঠেকাতে এবং নিরাপত্তার জন্য মাঠপর্যায় থেকে ক্যাম্প এলাকায় অন্তত তিনটি থানা এবং একাধিক পুলিশ তদন্তকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেকোন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এছাড়াও ইয়াবা, মাদক প্রতিরোধে আইশৃঙ্খলাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন