রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলেকিন দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত-৩
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে শুক্রবার দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷ তৎমধ্যে ১জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ভেবে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে প্রেরণ করেছে৷
কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ইউনুছ জানান, দীর্ঘদিন ধরে লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’দফা গুলাগুলি, কোপাকুপি ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ শুক্রবার আবারো ঘটনা ঘটে লম্বাশিয়া মাস্টার মুন্না এবং হাফেজ জাবের ও সাইফ্রু গ্রুপের মধ্যে গুলাগুলি এবং কোপাকুপির ঘটনায় নারিসহ ৩জন আহত হয়েছে। এসময় দা’র কোপে আহত ২জন মহিলাকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর গুলিবিদ্ধ নুর আলমকে প্রথমে কক্সবাজার পরে চট্টগ্রাম হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। সে কুতুপালং টু-ইস্ট ক্যাম্পের আহমদ হোসেনের ছেলে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সূত্র জানিয়েছে। এরপর থেকে রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাফেজ জালাল আহাম্মদ বলেন, ক্যাম্প গুলোর নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিনে দিনে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মাত্রায় চলে যাচ্ছে। গত কয়দিন ধরে বিভিন্ন ক্যাম্পে থেমে থেমে গুলির শব্দে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এধরনের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর অবস্থান নেয়া না হলে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে তিনি জানান।
কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, বুধবার রাতে কিছু বিচ্ছিন্ন গুলির ঘটনা সম্পর্কে শুনেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশ বা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কেউ এখনো জানায়নি।
সূত্র জানিয়েছে, গত ২৩ আগস্ট র্যাব-১৫ এর সদস্যরা কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগর থেকে ১৩লাখ পিস ইয়াবাসহ মাে. আয়াছ নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করে। সে উখিয়ার বালুখালী ১৩ নাম্বার ক্যাম্পের এইচ ব্লকের বাসিন্দা মো. বশির আহমদের ছেলে। আয়াছ আলেকিনের একজন বড় নেতা । ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে এক কাপড়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিল ক্যাম্পে। ইয়াবা ব্যবসা করে সে এখন কোটিপতি। তার মতো আরো অনেকে ইয়াবা ব্যবসা করে এখন কোটিপতি বনে গেছে বিভিন্ন ক্যাম্পে।
আয়াছ র্যাবের হাতে আটক হলেও তার ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে আলেকিন গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা। তাদের মধ্যে রয়েছে-বালুখালী ১১ নাম্বার ক্যাম্পের ডি-ব্লকের বাসিন্দা মো. আলী ছেলে মো. শফিক এবং সি ব্লকের রফিক। শফিক হচ্ছে সম্প্রতি ওসি প্রদীপের সাজানো বন্ধুকযুদ্ধে নিহত উখিয়ার কুতুপালং ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মৌলভী বখতিয়ার আহমদের সাথে পুলিশের হাতে আটক রোহিঙ্গা জাহাঙ্গীর আলমের ভগ্নিপতি। তার ব্যবসাও দেখবাল করেন এই শফিক। এরা ২জন পুরো ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে ত্রাণের মালামাল ক্রয় থেকে শুরু করে প্রতিটি দোকান থেকে ৫শ ১হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে থাকেন।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বালুখালী ২ নাম্বার ক্যাম্পে হেড মাঝি আরিফ উল্লাহ ও রোহিঙ্গা নেতা আব্দুল্লাহ খুন হয়। সম্প্রতি ১১নাম্বার ক্যাম্পের ডি-ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা ডাক্তার আকতারকে দিন দুপুরে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন। এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে ১১ নাম্বার ক্যাম্পের মো. ইউনুছ প্রকাশ আব্দুল্লাহ এবং কুতুপালং লম্বাশিয়া এলাকার মাস্টার মুন্না ও হাফেজ জাবের৷