লক্ষ্মছড়ি বিএনপি থেকে বহিস্কৃত ও আওয়ামীলীগে যোগদানকারী মাজেদ গাজি অস্ত্র মামলায় জেল হাজতে

Majed Gaji Atok

মোবারক হোসেন, লক্ষ্মীছড়ি :

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সাবেক সভাপতি  আব্দুল মাজেদ গাজি পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় আটক হয়ে জেল হাজতে আছেন বলে জানা গেছে। গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে থানায় স্বাক্ষী দিতে আসলে আব্দুল মাজেদ গাজি (৫৫) পিতা-মৃত মুল্লুক চাঁদ গাজি ও মো: শাহজাহান বিশ্বাস(৩৫) পিতা- আবুল কশেম অস্ত্র মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে বলে পুলিশ। পরে ১৯ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলা হাজতে পাঠিয়ে পূণরায় ২৩ ডিসেম্বর সোমবার শুনানীর দিন ধার্য করেন। মামলায় এ পর্যন্ত একজন সন্দেভাজনসহ মোট ৪ জনকে আটক করা হয়।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ১২ নভেম্বর মহিষকাটা এলাকায় মৃত ফজলুল হকের ছেলে আলী হোসেন(২৫)কে অস্ত্রসহ এলাকাবসী আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ অস্ত্র ও আসামীসহ থানায় নিয়ে আসেন এবং মামলা রুজু করেন। আটককৃত আসামীর প্রাথমিক জবানবন্দী মূলে আব্দুল মাজেদ গাজি ও শাহজান বিশ্বাসকে পুলিশ আটক করে বলে জানা যায়। এদিকে মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে আব্দুল মাজেদ গাজি ও মো: শাহজান বিশ্বাস আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য মহিষকাটা এলাকায় জমি-জমা সংক্রান্ত দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল একই এলাকার মো: জাকির হোসেন(আলু জাকির) এর সাথে। কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারি পরিকল্পনা করে জাকির হোসেনকে ঘরে অস্ত্র রেখে ফাঁসাতে পারে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাকির বাড়ির আশে পাশে পাহাড়া বসায়। জাকিরের পাতানো ফাঁদে জড়িয়ে যায় অস্ত্র বহনকারি যুবক আলী হোসেন। আসামী আলী হোসেনর স্বীকারোক্তী মতেই বাকি আসামীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মামলার বাদী এস.আই ছাগির হোসেন জানান, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব না। 

আটক যুবক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। জমি বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই ঘরে অস্ত্র রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছিল এক প্রভাশালী ব্যক্তি এমন তথ্যই দিয়েছে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক মো: আলি হোসেন(২৩)। তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে কিছুই প্রকাশ করা হচ্ছে না।  

ঘটনার বিবরণ: মহিষকাটা এলাকার বহুল আলোচিত নাম মো: জাকির হোসেন ওরফে আলু জাকির। স্বামী নিখোজ হওয়া এক স্ত্রীকে বিয়ে করে জাকির হোসেন। মাত্র কয়েক বছর আগে আসা বসতি স্থাপনকারি এই জাকির হোসেন এর যেমন অনেক বন্ধু রয়েছে আবার কারণে অকারণে তার অনেক সত্রুও সৃষ্টি হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জাকিরের বিরুদ্ধে যেমন থানায় মামলা রয়েছে আবার নিরুপায় হয়ে জাকির হোসেন কয়েকজনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতেও হয়েছে। বছর দেড়েক আগে কিছু জমি ক্রয় করে জাকির হোসেন। আবার একই জমি ক্রয় করে আব্দুল মাজেদ গাজি। মাজেদ গাজি জমি দখল করতে গেলে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটে। জমির প্রকৃত মালিক থেকে কিনেছি অন্য দিকে দালাল ধরে কুটকৌশল ও জাল জালিয়াতি করে জমি কিনে দখল করতে চাইছে মাজেদ গাজি এমন দাবি করেন জাকির হোসেন। তার দাবি সত্রুরা আমাকে মারার জন্য এর আগেও চেষ্টা করেছিল এখনো করে যাচ্ছে। এ ব্যপারে থানায় সাধারণ ডাইর করা আছে বলেও জাকির হোসেন জানান।  

অস্ত্র উদ্ধার কাহিনী: শনিবার আনুমানিক ৫টার দিকে জাকির হোসেনের কাছে মোবাইল আসে। জরুরী মোবাইল পেয়ে ছুটে যায় জাকির হোসেন। ধারনা করা হচ্ছে অন্ত্র সরবরাহকারিদের পক্ষ থেকে যে কেউ গোপনে সংবাদ দেয় আপনার বাসায় অস্ত্র রাখা হবে আজ। বাঁচতে চাইলে সতর্ক হয়ে যান। এমন সংবাদ পেয়ে দ্রুত বাড়িতে ফিরে কড়া সতর্ক পাহাড়া বসায় জাকির হোসেন। এর পর কিছু নাটকীয় ঘটানা ঘটতে থাকে। জাকিরের পাতা ফাঁদে ধরা পরে অস্ত্র বহনকারি যুবক আলি হোসেন। তার দেহ তল্লাসী করে অস্ত্র পাওয়া যায়। জাকির পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে আলি হোসেনকে অস্ত্র সহ থানায় নিয়ে আসে।

তবে পুলিশের কাছে ঘটনাস্থলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল মাজেদ গাজিসহ আরো ৩জন পরিকল্পনাকারির নাম বলেছে। ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে এ অস্ত্রটি আলু জাকিরের ঘরে রাখার দায়িত্ব ছিল আলি হোসেনের এমনটিই সে পুলিশকে স্বীকারোক্তি দেয়। ঘটনা এখানে শেষ নয়। ময়ূরখীল এলাকার বাসিন্দা মো: রেজাউল করিম ঘটনাক্রমে পুলিশের গাড়ির সামনে আসলে  কর্তব্যরত পুলিশ রেজাউলকে জিজ্ঞাসা করে আসামী আলি হোসেন কেমন লোক। জবাবে রেজাউল বলে, আমার জানামতে ততটা ভাল না ইত্যাদি ইত্যাদি বলার পর ধৃত আসামী আলি হোসেন বলে ওঠে স্যার রেজাউল এ ঘটনার সব জানে। রেজাউল অবশ্য এসময় বলে ওঠে তোর (আলি হোসেন) সাথে এক বছরেও তো আমার দেখা হয়নি এটা তুই কি বলছিস। যাই হোক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেজাউলকে নিয়ে আসে থানায়।

উল্লেখ্য ঘটনাস্থলে যে ৩জনের নাম বলেছে সেখানে অবশ্য রেজাউলের নাম আসে নি। তবে রেজাউল করিম ঘটনার ষড়যন্ত্রের শিকার বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন। রেজাউল করিম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। আব্দুল মাজেদ গাজি বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন পরে তাকে বির্তকীত কর্মকান্ডের কারণে দল থেকে বহিস্কার করা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দেয়ায় আব্দুল মাজেদ গাজির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।    

মামলার তদন্তকারি অফিসার এস.আই ছাগির হোসেন জানান, তদন্ত না করে এই মুহুর্তে কোন কিছুই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। এ ঘটনার সাথে জড়িত কিছু ব্যাক্তির নাম ওঠে এসেছে বলে স্বীকার করলেও নাম প্রকাশ করতে রাজি হন নি। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার বিপরীত কোন রহস্য থাকতে পারে সেটিও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। অস্ত্রটি সচল না নিস্ক্রিয় তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে তিনি জানান।  

জাকির বলেন, কাউকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানোর ইচ্ছা আমার নেই। তবে যারা আমার বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র করছে আমি আইনিভাবে মোকাবেলা করব। অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তিনি কোন লিখিত অভিযোগ করেন নি বলেও জানান। 

একটি বাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায় এমন ঘটনা সচেতনমহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। অস্ত্রটি কোথা থেকে এলো, কারা সরবরাহ করেছে, কি উদ্দেশ্য ছিল। আসলে প্রকৃত ঘটনা কি সব কিছুই তদন্তের দাবি রাখে। না অন্য কোন রহস্য আছে তা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।  

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন