লামায় ইউপি নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

fec-image

বান্দরবা‌নের লামা ও নাইক্ষ‌্যংছ‌ড়ি উপ‌জেলার ৯‌টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হযেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) এই দুটি উপ‌জেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এর ম‌ধ্যে লামায় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও স্বতন্ত্র মিলে সর্বমোট চেয়ারম্যান পদে ১৮জন, সাধারন সদস্য পদে ২২১জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে ইতিমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য  ৭ইউনিয়নের জন্য পৃথক তিনজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ৬৪জন প্রিজাইডিং, ২০০জন সহকারি প্রিজাইডিং এবং ৪০০জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষনও প্রধান করা হয়েছে।

ভোট গ্রহনের দিন কেন্দ্র ও সার্বিক আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে ম্যাজিষ্ট্রেটসহ পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর পাশাপশি বিজিবি মোতায়েন থাকবে। উপজেলার ৬৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে সবক’টি কেন্দ্রকেই ঝুঁক্বিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ প্রশাসন।

বুধবার ব্যালট ও ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছবেন। এবারের নির্বাচনে সাত ইউনিয়ন মিলে সর্বমোট ৫৭ হাজার ৯৮৪জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ২৮ হাজার ১৫জন এবং পুরুষ ভোটার ২৯ হাজার ৯৬৯জন।

সূত্র জানায়, এবারে দেশের রাজনৈতিক দল বিএনপির অংশ গ্রহন ছাড়াই অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে গজালিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাথোয়াইচিং মার্মা (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বাবুল হোসেন (মোটর সাইকেল)। লামা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিন্টু কুমার সেন (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তার কামাল (মোটর সাইকেল)। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. নুরুল হোসাইন (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকের হোসেন মজুমদার (আনারস), মো. ওমর ফারুক (মোটর সাইকেল) এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. খোরশেদ আলম (লাঙ্গল)।

আজিজনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রশিদ আহমেদ (আনারস)। সরই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিছ (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফ (আনারস).। রুপসীপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাচিং প্রু মার্মা (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (আনারস)। ফাইতং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ওমর ফারুক (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.আবু তাহের (আনারস), আবদুল জলিল (চশমা) ও মো. শহিদ উল্লাহ্ (মোটর সাইকেল)।

বিগত উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের পর ইউপি নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে জয় পেতে নৌকা প্রতীক নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ আর নিজেদের দুর্গে বিগত দিনের জয়ের ধারা অক্ষুন্ন রাখতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তৎপর বিএনপি। প্রত্যেক ইউনিয়ন জাতীয় পার্টি, পাহাড়ি সংগঠন জেএসএস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ‘র মনোনীত (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও প্রতিটি ইউনিয়নেই মুল প্রতিদন্ধিতা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষের প্রতিকের প্রার্থীর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।

এসকল প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে দিন রাত পাহাড় নদী ডিঙ্গিয়ে ভোটারদের বাড়ী বাড়ী উঠান বৈঠক, প্রচার প্রচারনাসহ গণসংযোগ করেছেন। ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি অলি গলিতে টাঙ্গিয়েছেন ডিজিটাল ব্যানার ও পোস্টার। নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক বুধবার মধ্যরাত থেকে প্রার্থীরা তাদের প্রচার প্রচারণা বন্ধ করে দেন। এদিকে, ভোট কারচুপি প্রচেষ্টার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করার পাশাপাশি বান্দরবান মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বচ্ছভাবে ভোট গ্রহনের দাবি করা হয়।

এদিকে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী এবং আজিজনগর ইউনিয়নে নিজ দলের বিরোধী প্রার্থীর সাথে প্রতিদন্ধীতা করতে হচ্ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে। লামা সদর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আক্তার কামাল এবং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক দলের গঠনতন্ত্র লংঘন করে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে নির্বাচন করায় ইতিমধ্যে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও আজিজনগরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ দলীয় কোন পদে না থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। আজিজনগরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করছেন। এ কারণে ৩ ইউনিয়নের নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানান ভোটাররা।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহিরাগত লোকজনের প্রভাব বিস্তার, ভোট কারচুপি, জালভোট, কেন্দ্র দখল, কেন্দ্রে ভোট না গণনা, ভোটের ফলাফল ছিনিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসন মেকানিজম সহ নানান. অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ৪নং আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ ও লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তার কামাল প্রকাশ মাইজ্জা মিয়া। তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতা সহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানান।

একই অভিযোগ ও দাবী তুলে ধরেন লামা সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জলিল ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকের হোসেন মজুমদার ও ওমর ফারুক সহ অন্য ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা না থাকায় তারা এখন বিষদাগার করছেন বলে জানান নৌকা প্রার্থীরা।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আলমগীর হোসাইন জানান, দ্বিতীয় ধাপে উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা রাখি ৭ ইউনিয়নবাসীকে অবাদ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এ কর্মকর্তা।

নির্বাচনে ৬৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সবক’টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে প্রতি কেন্দ্রে পরিমানমত এস.আই এবং এ.এস.আইসহ পুলিশ সদস্যরা থাকবেন। এছাড়া থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা আনসার ভিডিপি সদস‌্য

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন