শীতকালীন আগাম সবজি চাষে মাঠে নেমেছে প্রান্তিক চাষীরা 

fec-image

শীত মৌসুমকে সামনে রেখে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজারের চকরিয়ার জনপদের প্রান্তিক চাষিরা। এ বছর বৈরি আবহাওয়া ও কোভিড-১৯ করোনা মহামারী সংক্রমণ পরিস্থিতিতেও আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করতে পিছপা হননি গ্রামীণ জনপদের  সবজি চাষিরা। তবে ঝড়-বৃষ্টি ও করোনা পরিস্থিতির কারণে আগাম এ সবজি চাষে খরচ বেশি হচ্ছে বলে জানান তারা।

প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে তুলতে পারলেই অধিক লাভবান হবে এই ধারণা থেকে কৃষকেরা আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত।

উপজেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ও পৌরসভা এলাকার বেশ কয়েকটি জনপদে আগাম সবজি চাষে মাঠে নেমেছে চাষীরা।

বর্তমানে চাষীরা মাঠে যেসব শীতকালীন আগাম সবজি চাষাবাদ করছেন তা হচ্ছে মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ধনিয়া ও শিম।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার ৫ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ হবে। তবে বেসরকারিভাবে চাষের লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি হতে পারে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা শীতের সবজির চারা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ সবজির চারা ক্ষেতে লাগাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষেতে আগাছামুক্ত করতে নিড়ানি দিচ্ছেন। এছাড়াও প্রান্তিক কৃষকরা আগাম সবজি চাষের জন্য বীজতলায় চারা তৈরি, জমি প্রস্তুতকরণ এবং চারা রোপণ করছেন।

বিশেষ করে মরিচ, মুলা ও বেগুন চাষ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে শাকসবজি চাষের প্রস্তুতি চলছে। অধিকাংশ স্থানে নার্সারিতে বীজতলায় চারা তৈরি করা হয়। তবে বাড়ির আঙ্গিনায় বীজতলা তৈরির বিষয়টি উপজেলায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কৃষক বাড়ির আঙ্গিনায় বীজতলা করে নিজেরাই চারা তৈরি করছেন।

বিএমচর উত্তর বহদ্দার কাটা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার জানান, অতিরিক্ত দামে চারা কেনার চেয়ে নিজেরা চারা তৈরি করা সহজ। আর এ কারণে বাড়ির আঙ্গিনায় বীজতলা তৈরি করে মরিচ ও টমেটো চারা তৈরি করেছেন। অল্প দিনের মধ্যেই আগাম শীতকালীন টমেটো চাষ শুরু করবেন। এজন্য ইতোমধ্যে তিনি জমি প্রস্তুত করেছেন বলে জানান।

এ সময় উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা সিকদার পাড়া গ্রামের চাষী সিরাজুল ইসলাম (৫৫) নামের এক চাষিকে তাঁর দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে জমি পরিচর্যা করতে দেখা যায়। তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাইলে কিছুক্ষণ পর তিনি জমির আইলে উঠে এসে জানান, তার চল্লিশ শতক জমি রয়েছে। পুরো জমিতেই তিনি বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি চাষ করছেন। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মাঝে শ্রমিকের মজুরি বেশি, তাই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তিনি চাষাবাদের জন্য ক্ষেতে নেমে পড়েছেন।

নোয়াপাড়া গ্রামের চাষী রহমত আলী জানান, তিনি এবার ২০ শতক জমিতে ফুলকপির চাষ করছেন। শীতের আগে শীতকালীন সবজি বাজারে তোলা হলে তার চাহিদা বেশি থাকে। ফলে সেগুলোর দামও বেশি পাওয়া যায়। তিনি আশা করছেন, শীত আসার আগেই তিনি সবজি বাজারে তুলতে পারবেন।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ও উপ-সহকারী (উন্নয়ন শাখা) কর্মকর্তা রাজীব দে জানান, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ও বন্যা প্রভাবমুক্ত থাকার কারণে বিভিন্ন এলাকার মধ্যে আগাম শাক-সবজি চাষাবাদ শুরু হয়েছে। চলতি বছরে সবজি চাষের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই ভাল। বর্তমানে চাষীরা রবিবার পর্যন্ত আগাম ১২শত হেক্টর নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করেন।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেন, বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে উপজেলার অন্তত ১২টি ইউনিয়নে ও পৌরসভা এলাকার বেশ কয়েকটি জনপদে আগাম সবজি চাষে মাঠে নেমেছে চাষীরা।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার ৫ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ হবে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সবজি চাষের বিপ্লব ঘটাবে দেশের প্রান্তিক কৃষকরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনা, কৃষি বিভাগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন