শুধু ডাল আর ভাত খেয়েই টিকে আছে রোহিঙ্গারা


প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে কক্সবাজারের শরণার্থীরা বর্তমানে খাদ্য ও ওষুধ সংকটে আছে। চলতি বছরের শুরুতে রেশন কমিয়ে ১২ থেকে ৮ ডলার করা হয়। এরপর তা ৬ ডলারে নামানো হয়েছে। এ পর্যায়ে রোহিঙ্গারা মাছ, মুরগি কিছুই কিনতে পারছে না। তারা শুধু ডাল আর ভাত খেয়েই টিকে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সাময়িকভাবে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, তবে এ অর্থ সহায়তা কেবল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেওয়া হবে। আল জাজিরার বরাত দিয়ে এই তথ্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট হাজারো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। যে সংখ্যা বর্তমানে বেশ কয়েক লাখ ছাড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের এই ঢল নামার আট বছরের মাথায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত তিনদিনের সম্মেলনের আজ সমাপনী দিন।
মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের জাতীয় প্রতিনিধি কমিটির চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী কামাল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সংস্থা, বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগোষ্ঠী বা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ সংলাপে অংশ নিতে পারেনি। তাই এই সম্মেলনকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্মেলনে কারা অংশ নিচ্ছে
২৪ আগস্ট রোববার থেকে শুরু হওয়া এ সম্মেলনের লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের সহায়তা করা। এতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক দূত, জাতিসংঘ সংস্থার প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে বিদেশি মিশনের কর্মকর্তারা। গতকাল ২৫ আগস্ট সম্মেলনের মূল পর্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরও পরিদর্শন করবে। সেখানে তারা খাদ্য ও ওষুধের সংকটে থাকা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
সম্মেলনের গুরুত্ব কতটা?
আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিলের কো-চেয়ারম্যান নায় সান লুইনের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, এটি এমন একটি সম্মেলন যেখানে রোহিঙ্গাদের কথা শোনা হবে। গত আট বছরে এমন সম্মেলন এটিই প্রথম। এই সম্মেলনে উঠে আসা বিষয়গুলো জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। নিউ ইয়র্কে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন হওয়ার কথা।
নায় সান লুইন জানান, আগামী ডিসেম্বরে কাতারেও আরেকটি বৈঠক হতে পারে। যেহেতু এই বৈঠকগুলো অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের, তাই আশা করা হচ্ছে প্রস্তাবনামূলক সমাধান বেরিয়ে আসবে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষা দিয়ে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া।
সমাধানের পথ কী
বহু বছর ধরে মুসলিম রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন রোহিঙ্গার মধ্যে ৯০ শতাংশই শরণার্থী বা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে জীবনযাপন করছে। জাতিসংঘ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুর জন্য নাগরিকত্ব, সমতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা শুরু হয়। আরেকটি বছর চলে যাচ্ছে, কিন্তু এখনো কোনো ন্যায়বিচার হয়নি। রোহিঙ্গাদের ওপর বছরের পর বছর নির্যাতন বন্ধ করতে হলে আগে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে।
জেরেমি লরেন্স বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর থেকে রাখাইন প্রদেশের মানবাধিকার ও মানবিক পরিস্থিতি তীব্রভাবে অবনতি হয়েছে। ফলে রাজ্যটিতে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবন আরও হুমকির মুখে পড়েছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বেড়ে যায় ২০২১ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর। লরেন্স বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির স্থানীয় যোদ্ধারা রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে। যা এখনো অব্যাহত আছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ।
উৎস : আল জাজিরা এক্সপ্লেইনার ও সমকাল, ২৫ আগস্ট ২০২৫