সমুদ্রে তেল-গ্যাস খুঁজতে আগ্রহী মার্কিন কোম্পানি

fec-image

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আবারও কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক তেল কোম্পানি এক্সন মোবিল। তবে এবার তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ব্লক বরাদ্দ নয়, গভীর সমুদ্রে দ্বিমাত্রিক সার্ভে করতে চায় মার্কিন কোম্পানিটি। তেল গ্যাস অনুসন্ধানে প্রায় সোয়া তিন লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি এক্সন মবিল।

এরি মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।

তবে, জ্বালানি সংকটের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এমন প্রস্তাবকে সুযোগ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করে গ্যাস উত্তোলন নিশ্চিত করা উচিৎ।

২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তির পর সাগরে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের মালিকানা।

পরে, ভারত ও মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় গ্যাসের মজুদ কতটা আছে তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।

এ বিষয়ে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনাগ্রহের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি এক্সন মবিল সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রমে অংশ নেয়ার আগ্রহ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।

এক্সন মবিলের এই আগ্রহকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছে জ্বালানি বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানালেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘এক্সন মবিল আগ্রহ দেখিয়েছে। গভীর সমুদ্রে তারা অনুসন্ধান করতে চান। প্রথমে টুডি সার্ভে এর পর থ্রিডি সার্ভে করতে চাইছে তারা। তারপরে যদি পোটেনশিয়ালিটি থাকে তাহলে উত্তোলনে যেতে চান তারা।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে শেষ হলে ওপেন বিডিংয়ে যাবো। এটা একটা পর্যায়। আরেকটা পর্যায় হলো, যদি ভাল পোটেনশিয়ালিটি দেখি, তাহলে নোগোশিয়েশনের মাধ্যমে আমরা যেতে পানি। কিন্তু আমরা এখনো আলোচনার মধ্যে রেখেছি বলেও মন্তব্য করেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সমুদ্রের প্রায় সাত হাজার মিটার পর্যন্ত গভীরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা আছে এক্সন মবিলের। এমন দক্ষ প্রতিষ্ঠানের আগ্রহকে দেশের জন্য সুযোগ হিসেবেই দেখছেন এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘এই সুযোগটাকে অবহেলা না করে এক্সন মোবিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বসা উচিত। চুক্তি করার ক্ষেত্রে আলোচনায় নামা উচিত। কারণ এক্সন মবিলের মতো কোম্পানি, তেল-গ্যাস উত্তোলনে এরা খুবই অগ্রগামী, প্রযুক্তির দিক দিয়ে এরা এক নাম্বারে। তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে এক্সন মোবিলের মতো অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতা পৃথিবীর খুব কম কোম্পানির আছে।

বদরুল ইমাম বলেন, গায়ানাতে এক্সন মবিল এতো পরিমাণ তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন করেছে যে, গায়ানা এখন পৃথিবীর তৃতীয় বা চতুর্থতম তেল সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এটা হচ্ছে গেম চেঞ্জার। আমরা এই সুযোগগুলো যদি অবহেলা করি তাহলে আমরা কিন্তু কোনোদিন গেম চেঞ্জ করতে পারবো না।’

তবে এ ধরনের কাজে দেশের আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতাকেই বড় সংকট বলে মনে করেন তিনি। এ কারণে বড় কোম্পানিগুলো আগ্রহ হারায়। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলছেন তিনি।

বদরুল ইমাম বলেন, ‘তবে এই রকম বড় কোম্পানির সঙ্গে নেগোশিয়েশনের দুটো সমস্যা আছে। একটা সমস্যা বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক ধীরগতি। যেকোনো সিদ্ধান্ত এতো বাধাগ্রস্ত হয় এই ধীরগতির কারণে। এ কারণে অনেক বিদেশি কোম্পানিগুলো ধৈর্য হারিয়ে ফেলে।

‘আর দ্বিতীয় সমস্যা হলো- দক্ষতার অভাব। দরকষাকষিতে বসলে টেকনিক্যাল, অর্থনৈতিক, আইনগত দক্ষতা তাদের দিকে যত শক্ত, আমাদের দিকে তত না।’

ভারত ও মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় গ্যাস পেয়েছে। তাই দেশের সাগরে তেল-গ্যাসের ভাণ্ডার থাকার জোর সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: একাত্তর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন