সাজেকের রুইলুই ভ্যালিতে আলো এনজিওর “আলো রিসোর্ট” এর শুভ উদ্ভোধন

SAM_6111

সাজেক প্রতিনিধি:

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারতের মিজোরাম রাজ্য সন্নিহিত বাংলাদেশের পার্বত্যজেলা রাঙ্গামাটিতে প্রাকৃতিক রূপে রূপময় ও  অপার সম্ভাবনার জনপদ সাজেক। সাজেকের রুইলুই ভ্যালিতে পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আলো রিসোর্ট এর শুভ উদ্ভোধন করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০.৩০টায় এর উদ্ভোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জেলার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী শামছুল ইসলাম। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাঘাইহাট জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল রশিদুল ইসলাম, দিঘীনালা জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল লোকমান হোসেন, ৩৯ বিজিবি মারিশ্যা জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল রবিউল ইসলাম, আলো এনজিওর নির্বাহী পরিচালক অরুন কান্তি চাকমা এবং রুইলুই পাড়ার হেডম্যান লালথাংসহ সাজেকের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

উল্লেখ্য সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উচু পাহাড়ের চুড়ায় সাজেক অবস্থিত। এ পাহাড়ের চুড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের মনোলোভা দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন যেকোন আগন্তুক। সাজেক ভ্যালিতে উঠেই আকাশপানে তাকালে দেখা যায় কালো মেঘগুলোকে সরিয়ে দিয়ে সাদা মেঘের আনা গোনা। এমন সাদা মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায়, মনে হয় শিমুল তুলার দল আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। পায়ের নিচে মেঘের দল। মাথার উপরেও মেঘ। মেঘের এ দৃশ্য সবার মনকে উতাল উদাস করে তোলে, মনের গভীরে সুখময় আনন্দের কোমল পরশ ছুঁয়ে যায়।

সাজেকের সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক এসে ভীড় জমাচ্ছে রুইলুই ভ্যালিতে। দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক। আয়তন ৬০৭ বর্গ মাইল। যা দেশের যে কোন জেলার চেয়েও বড়। লোক সংখ্যা মাত্র হাজার দশেক। সাজেকের রয়েছে,ঢেউ খেলানো অসংখ্য উচ্চু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত হৃদয়গ্রাহী সবুজ বনানী। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। পাহাড়ের বুক চিরে  আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালংসহ নাম না জানা অসংখ্য নদ-নদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি। যা যাবে কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে। রাস্তার দু’ধারে-চোখে পড়বে উপজাতীয়দের বসত বাড়ী বিচিত্রময় জীবন ধারা।

এক সময় সাজেক যাওয়া ছিল অনেকটা স্বপ্ন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর’র সুবাদে  কয়েক বছর আগে সাজেক পর্যন্ত রাস্তা হয়েছে। সে সাথে বদলে যেতে শুরু করেছে সাজেকবাসীর জীবন চিত্র। সৌন্দর্যের টানে বহু পর্যটক এখন সাজেক আসছেন। প্রকৃতির সাথে মিতালি করতে এসে পর্যটকরা যাতে আরো স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারে পর্যটকদের সুবিধার্থে গত বছরের নভেম্বর মাসে সেনাবাহিনী পর্যটনের নানা অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। সুদৃশ্য সড়ক, কটেজ, বিশ্রামাগার, সড়কবাতি, ক্লাবঘর, শিব মন্দির, পাবলিক টয়লেট, বিদেশি ঘরের স্টাইলে তৈরি রিসোর্ট “রুম্ময়”ও থ্রি স্টার মানের হোটেলও এ পাহাড়ে তৈরি করা হয়েছে।

সাজেকের বাসিন্দাদের অধিকাংশই ভারতে মিজো এবং বাংলাদেশে লুসাই বা পাংখোয়া নামে পরিচিত।

সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর থেকে সাজেকের নৈসর্গিক সৌন্দর্যেও উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক সাজেক আসতে শুরু করেছে। পর্যটদের মতে, সাজেক একটি সম্ভাবনাময় জনপদ। প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যকে কাজে লাগাতে পারলে সাজেক হতে পারে দেশের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই সাথে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে।

সাজেকের কংলাক পাড়ার হেডম্যান চংমিং থাং লুসাই জানান, সেনাবাহিনীর উদ্যোগে সাজেক পর্যন্ত রাস্তায় হওয়ায় এলাকার চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। তিনি জানান, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারনে আজ থেকে ৭ বছর আগেও সাজেকের মানুষ জীবন ও জীবিকার জন্য পাড়ি জমাতে পশ্চাৎবর্তী মিজোরামে। এখন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় তারা মাত্র ৩ ঘন্টায় খাগড়াছড়ি যাতায়াত করতে পারে।

অনেকের মতে, সাজেক হতে পারে দেশের অন্যতম স্থল বন্দর। সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের বানিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান খাগড়াছড়িতে এক সুধী সমাবেশে এমনী আশার বানী শুনিয়েছিলেন।

সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত হলেও জেলা সদরের সাথে এখনো প্রায় বিছিন্ন। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দুরত্ব প্রায় ৫০কিলোমিটার। পক্ষান্তরে সাজেকবাসীকে নিজ জেলা সদর রাঙ্গামাটি যেতে হলে প্রায় ১ শ ২০ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার উপর দিয়ে যেতে হয়। এ জন্যে সাজেককে খাগড়াছড়ি জেলার সাথে অন্তর্ভূক্ত করার দাবীও ছিল এলাকাবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন