পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে সন্ত্রাসী ঠেকাতে বিওপি বাড়ানো হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

fec-image

ভারতের মিজোরাম রাজ্য লাগোয়া বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ তৎপরতা ঠেকাতে বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) পিলখানায় বিজিবির এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে। তাদের ধাওয়া দিলে দুর্গম এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায়। এজন্য বিওপির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, সীমান্ত সড়ক হচ্ছে। এগুলো হলে তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে।”

গৌহাটিতে গত ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম মিজোরামে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটির’ অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সম্মেলন শেষে বিজিবির পক্ষ থেকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করেন।

“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতির’ কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওইসব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।”

বুধবার বিজিবি সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণের এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকরা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উত্তরে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, সন্ত্রাসী গ্রুপ আছে, মানা করিনি।”

বিজিবি মহা পরিচালক সাফিনুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “সম্প্রতি সীমান্ত সম্মলনে ভারতের মিজোরামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারাও তালিকা দিয়েছে। তাদের তালিকা অনুযায়ী আমরা কিছু পাইনি।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজিবিকে এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। আকাশ, পানি এবং স্থলপথে বিজিবি স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে উঠছে।

“বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করছি। বাংলাদেশের মাটির এক ইঞ্চি জায়গা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।”

পিলখানার এ অনুষ্ঠানে বিজিবি সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ/কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ৬০ জনকে পদক দেওয়া হয়। তাদের ১০ জন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জন রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সেবা পদক (বিজিবিএমএস) এবং ২০ জন রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড সেবা পদক (পিজিবিএমএস) পেয়েছেন।

বিজিবি সদর দপ্তরের মাল্টিপারপাস শেডে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা, বিজিবির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পদক বিতরণের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নানান সীমাবদ্ধতার পরও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদকপাচার ও নারী-শিশুপাচার রোধে বিজিবির সফলতা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইয়াবা, ফেনসিডিল এবং অন্যান্য মাদকপাচার রোধে বিজিবি যেমন কৃতিত্ব দেখিয়েছে, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ দেশ গঠনমূলক কাজে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।”

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দুটি হোলিকপ্টার সংযুক্ত হওয়ায় বিজিবি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম’ এর আওতায় আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রমকে আধুনিক, যুগাপযোগী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে যশোরে একটি অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার ডিজাস্টার রিকভারি সাইট স্থাপন করা হয়েছে।”

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন