সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার পতাকা বৈঠক শুরু

fec-image

সীমান্তে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)।

রোববার (৩০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজারের টেকনাফে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সাথে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শুরু হয়।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে টেকনাফ এসে পৌঁছায় মিয়ানমারের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে তাদের স্বাগতম জানান। পরে তাদের শাহপরীরদ্বীপ বিওপিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পতাকা বৈঠকে মিলিত হয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার পর পতাকা বৈঠকের তথ্য নিশ্চিত করেন বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।

শেখ খালিদ বলেন, ‘গত আড়াই মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন। সীমান্তের এ পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিল। একাধিকবার বিজিপির কাছে চিঠি পাঠানোও হয়েছে। এর কারণে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে।’

তবে পতাকা বৈঠকে সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার তথ্য জানালেও এতে আরো কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে এবং দু’দেশের কতজন সদস্য অংশ নেবেন তা বিস্তারিত জানাননি বিজিবির এই কর্মকর্তা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালিদ জানান, সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বিজিবি কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।

এ দিকে সীমান্তে উত্তেজনার রেশ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণ। এর মধ্যে ২৮ আগস্ট মিয়ানমারে ছোড়া দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। তবে বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি।

এরপর ৩ সেপ্টেম্বর, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া আরো দুটি মর্টারশেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়ে। একই দিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়ে আতঙ্ক।

ধারাবাহিকভাবে চলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলিও। এর মধ্যে ১৬ সেপ্টেম্বর আবারো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে আরো কয়েকটি মর্টারশেল। যার মধ্যে শূন্যরেখায় মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায় এক রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আহত হন আরো ছয়জন। যে কারণে সীমান্তের বাসিন্দারা অনেকেই বসতি ছেড়ে আশ্রয় নেন স্বজনদের বাড়িতে। সীমান্তে এমন কর্মকাণ্ডে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েক দফায় কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।

তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণ বন্ধ হতেই নতুন করে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে শুরু হয় একই পরিস্থিতি। তারপর নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয় টেকনাফ সীমান্তে। এভাবে সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে চলতে থাকে গোলাবর্ষণের ঘটনা।

চলতি মাসের ১০ অক্টোবর পরিস্থিতি দেখতে সীমান্তে আসেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ। সীমান্ত পরিদর্শনের পাশাপাশি দেখেন বিজিবি কার্যক্রম। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবাদলিপি পাঠানোর পাশাপাশি বিজিপির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।

বিজিবির মহাপরিচালক আরো জানান, সময় নির্ধারণ না হলেও পতাকা বৈঠকে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। তারপর চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা। যা দু’দিন থেমে থেমে অব্যাহত থাকে। তবে এরপর থেকে আর শোনা যায়নি গোলাগুলির শব্দ।

এর মধ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সঙ্ঘাতে সীমান্তে উত্তেজনার কারণে অবশেষে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে সম্মত হয় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পতাকা বৈঠক, বাংলাদেশ, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন