সূর্যের দিকে প্রথম মিশন উৎক্ষেপণ করল ভারত

fec-image

ভারত তার প্রথম সূর্যাভিযান শুরু করেছে। দেশটির প্রথম সূর্য পর্যবেক্ষণ মিশন ‘আদিত্য-এল ১’ শনিবার শ্রীহরিকোটা থেকে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে উৎক্ষিপ্ত হয়। আদিত্য সূর্যের আরেক নাম।

সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য।

পরবর্তী চার মাস ধরে যাত্রা করে সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে একটি ‘হ্যালো’ কক্ষপথের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট বা এল-১ পয়েন্টে স্থাপন করা হবে আদিত্যকে। ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টকে সূর্যের পথে যাওয়ার মাঝে একটি পার্কিং লট বলে বর্ণনা করা হয়।

সূর্য-পথের ‘পার্কিং লট’
পৃথিবী থেকে ওই ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টের দূরত্ব ১৫ লাখ কিলোমিটার। এই দূরত্ব অবশ্য পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, ১৫.১ কোটি কিলোমিটারের মাত্র এক শতাংশ।

ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল একসঙ্গে কাজ করে। ফলে এই অঞ্চলে পৌঁছে মহাকাশযান স্থির থাকতে পারে। উপগ্রহটি স্থির থাকার কারণে সামান্যই জ্বালানি লাগে। এমনকি সূর্যগ্রহণের সময়েও সূর্যের দিকে নজর রেখে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট থেকে।

তবে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগে মহাকাশযানটি পরবর্তী ১৬ দিন পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে।

কত খরচ হচ্ছে সূর্যাভিযানে?
মিশনের খরচ কত হবে তা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানায়নি, তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে সূর্যাভিযানের জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় পৌনে ৪০০ কোটি ভারতীয় রুপি।

ইসরো বলেছে, অরবিটারে সাতটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র রয়েছে, যা সৌর করোনা (সবচেয়ে বাইরের স্তর), ফটোস্ফিয়ার (সূর্যের পৃষ্ঠ বা যে অংশ আমরা পৃথিবী থেকে দেখি) এবং ক্রোমোস্ফিয়ার (প্লাজমার একটি পাতলা স্তর, যা ফটোস্ফিয়ার ও করোনার মধ্যে থাকে)—তিনটি অংশেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালাবে।

আদিত্যর পাঠানো তথ্য থেকে সৌর বায়ুচলাচল, সৌর শিখা এবং পৃথিবীর কাছাকাছি মহাকাশের আবহাওয়াতে সেগুলোর প্রভাবসংক্রান্ত গবেষণা চালানো যাবে।

‘যে নক্ষত্রের ওপরে আমাদের জীবন নির্ভর করে…’
ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী মাইলাস্বামী আন্নাদুরাই জানাচ্ছেন, বিকিরণ, তাপ এবং কণা ও চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রবাহের মাধ্যমে সূর্য ক্রমাগত পৃথিবীর আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে।

আবার একই সঙ্গে সেটি মহাকাশের আবহাওয়ার ওপরেও প্রভাব ফেলে।

আন্নাদুরাই বলেন, ‘মহাকাশের আবহাওয়া আবার স্যাটেলাইটগুলোর কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও একটা ভূমিকা পালন করে। সৌর বায়ু বা ঝড় স্যাটেলাইটের ইলেকট্রনিক্সকে প্রভাবিত করতে পারে, এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে দিতে পারে। মহাকাশ আবহাওয়া সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের মধ্যে ফাঁক রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে নক্ষত্রটির ওপরে আমাদের জীবন নির্ভর করে, সেই সূর্যকে আরো ভালোভাবে বুঝতে আর আগাম সতর্কতা দিতেও সাহায্য করবে আদিত্য মহাকাশযানটি।’

ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী বলছেন, ‘সৌর বায়ু বা সৌর অগ্নুৎপাতের মতো ঘটনা যদি কয়েক দিন আগে জানায় আমাদের উপগ্রহগুলোকে সরিয়ে নিয়ে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে আদিত্য। মহাকাশে আমাদের উপগ্রহগুলোর আয়ুও বাড়বে। যে নক্ষত্রটি পুরো সৌরজগতকে একসঙ্গে ধরে রেখেছে, সেই সূর্য সম্পর্কে আমাদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান তো বাড়বেই।’

যদি মিশন সফল হয়
মহাকাশে ভারতের ৫০টিরও বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা, আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য, কীটপতঙ্গের উপদ্রব, খরা ও আসন্ন দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার মতো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা পাওয়া যায়। আদিত্য এল-১ মিশন সফল হলে, ভারতও সেই সব কতিপয় দেশের তালিকায় নাম তুলবে, যারা ইতোমধ্যে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করছে।

জাপান ১৯৮১ সালে প্রথম এ ধরণের মিশন শুরু করেছিল। এরপর নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি ১৯৯০ সাল থেকে সূর্যকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।

নাসা এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ‘সোলার অরবিটার’ উৎক্ষেপণ করে, যেটি সূর্যের কাছাকাছি থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। আবার নাসার নতুন মহাকাশযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ ২০২১ সালে সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল, করোনার মধ্য দিয়ে প্রথম উড়ে ইতিহাস তৈরি করেছিল। সূত্র : বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ভারত, সূর্য
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন