র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণকারী

স্বামীর চিকিৎসার খরচ যোগাতে বসতভিটার বালুমাটি বিক্রি করলেন স্ত্রী

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণকারী স্বামীর চিকিৎসা খরচ যোগাতে নিজ বসতবাড়ির বালুমাটি বিক্রি করেছেন স্ত্রী।
জেল ফেরত স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বহু অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় ব্যয়ভার ও সংস্থান জোগাড় করতে এখন নিজ বসতবাড়ির বালুমাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বালি বিক্রি করে চালানো হচ্ছে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা খাতে ব্যয়িত অর্থ। এমন ঘটনাটি ঘটে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের চৌকিদারপাড়ায় এলাকায়।

জানা যায়, ওই এলাকার মনোয়ারা বেগমের স্বামী আমির হোসেনসহ ৩৪ জন জলদস্যু ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাবের) কাছে আত্মসমর্পণ করে। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় এ উপলক্ষে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেখানে পেকুয়ার ৪ জন জলদস্যু ছিল। আমির হোসেনও ওই ৪ জনের মধ্যে ১ জন ছিলেন।

আমির হোসেন র‌্যাবের কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে কয়েকমাস জেলে খাটে এখন জেল থেকে বের হয়ে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে। তবে জেলে থাকাকালীন সময়ে শরীরে বিভিন্ন রোগের বাসা বাঁধে। এরই মধ্যে টি.বি রোগ সনাক্ত হয়েছে গত কয়েক মাস আগে থেকে। ঢাকা জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীনে ওই ব্যক্তির চিকিৎসাও চলছে।

তবে ছোঁয়াচে এ রোগটি এখন অধিকমাত্রায় অতিক্রম করেছে। রোগীর শরীর হলদে রং আচ্ছাদিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে ব্যবস্থাপত্রসহ পরামর্শ নিয়েছেন। টি.বি ছাড়াও তার শরীরে আরো জটিল রোগ সনাক্ত হয়েছে। এতে করে চিকিৎসা খাতে ব্যয়িত অর্থ কয়েকলক্ষ টাকা হতে পারে। তাকে নিয়মিত ওষুধও সেবন করতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে এখন হতদরিদ্র জেল ফেরত স্বামীকে বাঁচাতে নিজের বসতভিটার বালুমাটি বিক্রি করছে তারই স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে যায়, চৌকিদারপাড়ায় আমির হোসেনের ভিটা থেকে কুঁড়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এটি আমির হোসেনের বসতবাড়ি। আমির হোসেন চৌকিদার পাড়ার মৃত শফিকুর রহমান প্রকাশ শফু চৌকিদারের ছেলে। গত ৬০/৭০ বছর আগে পূর্ব টইটংয়ে চৌকিদারপাড়ার প্রবর্তন হয়। সেই সময় পাহাড়ের চওড়া ও পাদদেশে একমাত্র শফু চৌকিদার বসতি স্থাপন করেন। এলাকাটি তার নামে চৌকিদারপাড়া নামকরণ করা হয়। আমির হোসেন শফু চৌকিদারের ৪র্থ ছেলে।

সূত্র আরো জানায়, চৌকিদারপাড়ায় জেল ফেরত আমির হোসেনের ১৫ শতকের মতো বসতভিটা রয়েছে। জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। ২০০৩ সালে ওই জায়গা আমির হোসেন ২৪৫২ নং দলিলমূলে কবলা নেন। সেখানে তার বসবাসের একটি টিনের ছাউনি বসতবাড়িও রয়েছে। সোনাইছড়ি ছড়ার পার্শ্বে বসতভিটাটির স্থিতি। স্যালুমেশিন বসিয়ে সেখান থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে মাটি ও বালি। ওই মাটি ও বালি হচ্ছে এখন আমির হোসেনের চিকিৎসার জন্য বড় সংস্থান।

এদিকে আমির হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারাত্মক অসুস্থ। তিনি আসলে জলদস্যু নন। এরপরও কিছু ফৌজধারী মামলা ছিল। জীবনে সাগরে না গিয়েও বনে গেছেন জলদস্যু। আবার ডাকাতি না করেও হয়ে গেছেন ডাকাতি মামলার আসামি। রাষ্ট্রপক্ষের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাবোধ আছে আমার স্বামীর। দেশের চৌকসবাহিনী র‌্যাবের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে আমার স্বামী বাঁশখালীতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা অত্যন্ত অসহায় ও দরিদ্র। সংসার চালানোর মতো নেই অন্ন ও চিকিৎসা খরচ। এখন জীবন বাঁচাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজের ভিটা মাটি বিক্রি করা ছাড়া আর কোন উৎস নেই। বসতবাড়ি ধসে বিক্রি করছি মাটি ও বালি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসা, বসতভিটা, স্ত্রী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন