সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবার পাচ্ছে জমিসহ ৮টি পাকা ঘর: জায়গা নির্ধারণ

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬ ভাইয়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৮টি গৃহ নির্মাণ করে দেবে উপজেলা প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ স্থানীয় বাড়ি প্রকল্পের আওতায় প্রশাসনের তত্বাবধানে নিহতদের পরিবারের জন্য এসব ঘর বাস্তবায়ন করা হবে। ডুলাহাজারা নাথপাড়ার পাশে সরকারি খাস জায়গায় একসঙ্গে ৮টি গৃহ নির্মাণ কাজ শুরুর কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে মাটি ভরাটসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।

জানা গেছে, দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া হতে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা মালুমঘাটস্থ হাসিনা পাড়া এসে বসতি গড়ার পর সুরেশ চন্দ্র শীল চিকিৎসক হিসেবে স্থানীয়ভাবে মানুষের মাঝে সেবা দিতেন। তার ছেলেরা কুতুবদিয়ায় থেকে বাবা-মায়ের কাছে আসা যাওয়া করতো। সড়ক দুর্ঘটনার দশদিন আগে নিহত ৬ সহোদরের বাবা সুরেশ চন্দ্র শীল পরলোক গমন করেন।

প্রসঙ্গত : গত ৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বাবা’র শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য সনাতন ধর্মমতে সুরেশ চন্দ্র শীলের সাত ছেলে ও এক মেয়ে ভোরবেলা শ্রাদ্ধকর্ম (মাথার চুল ফেলে দেওয়া) সম্পন্ন করতে মালুমঘাট হাসিনাপাড়ার তিন রাস্তার মন্দিরে যান। মন্দির থেকে শ্রাদ্ধকর্ম শেষে বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে কক্সবাজারের মহাসড়কের মালুমঘাটস্থ এলাকায় পিকআপ চাপায় ৭ ভাইয়ের মধ্যে ৫ ভাইয়ের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, অনুপম শীল (৪৭), নিরুপম শীল (৪৫), দীপক (৪০), চম্পক শীল (৩০) ও স্মরণ শীল (২৯)। এ দুর্ঘটনায় আহত অপর ২ ভাই রক্তিম ও প্লাবন এবং তাদের বোন হিরা শীল আহত অবস্থায় মালুমঘাট হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে আশংকাজনক অবস্থায় রক্তিম শীলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হলেও আইসিইউ খালি না থাকায় তাকে ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে তার সুচিকিৎসার জন্য ৫ বিভাগের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত রক্তিমের মাথায় রক্ত ও ফুসফুসে পানি জমার কারণে তার জ্ঞান ফিরে আসেনি। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি রক্তিমকে পুনরায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ১৪ দিন পরে রক্তিম শীল হাসপাতালে চিকিৎসাবস্থায় মারা যান। সর্বশেষ নিহত রক্তিমসহ এ দুর্ঘটনায় ৬ ভাইয়ের প্রাণহানি ঘটে। প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র শীলের ৬ ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় পিকআপ চাপায় একসঙ্গে এমন মৃত্যুতে হতবিহ্বল সবাই। এরই মধ্যেই ৬ সন্তানকে হারিয়ে যেন ‘পাথর’ হয়ে বসে আছেন তাদের বিধবা ‘মা’ মানু বালা শীল। বুকের নাড়িছেড়া ধন ৬ সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা। কারো সাথে তেমন কোনো কথা বলছেন না। তার চোখে পানি নেই। তিনি এতটাই শোকাহত যে কান্না করতেও যেন পারছেন না, পুরো বাকরুদ্ধ মা মানু বালা শীল। পুরো পরিবার যেন শোকের মাতম। বর্তমানে নিহতদের পরিবারে ৬ সহোদরের বিধবা স্ত্রীসহ মিলিয়ে রয়েছে এগারজন শিশু সন্তান। নিহতদের মা মানু বালা শীল ও তার ছোট ছেলে প্লাবন শীল বেঁচে আছে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা নিয়ে পুরো পরিবার চরম অনিশ্চয়তায়। কর্মক্ষম সদস্যদের হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছে পরিবারগুলো। নিহত ৬ ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীরা তাদের কর্মক্ষম পরিবারের ব্যক্তিকে হারিয়ে বড় মহাসংকটে পড়েছে এই পরিবারটি।

এদিকে, গত বুধবার দুপুরে শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যাওয়া রক্তিম শীলের স্ত্রীসহ অপর ৫ ভাইয়ের স্ত্রীদের মাঝে জেলা প্রশাসক নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দেন। এসময় জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ সন্তান হারানো মা বানু মালা শীল ও সদ্য বিধবা পুত্রবধূকে শান্তনা দিয়ে বলেন, কোন ধরণের সংশয়ের কারণ নেই। প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে। দুর্ঘটনার পর থেকে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে এ পরিবারের সাথে সার্বক্ষণিক ভাবে যোগাযোগ রেখেছেন উপজেলা প্রশাসন। সরকারের তরফ থেকে নিহতদের পরিবারের জন্য যতো ধরণের সহযোগিতা করা দরকার তা অব্যহত থাকবে। এছাড়াও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন অটুট থাকে নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের ৮টি স্থায়ীভাবে মুজিব শতবর্ষের আশ্রয়ন ও গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ গৃহ নির্মাণ ও সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

ওই সময় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) তফিকুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ জামান ও চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি, সাংবাদিকসহ সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

গত বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারগুলোকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার অর্থ সহায়তা তুলে দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারের পাশে সবসময় থাকবে জেলা প্রশাসন। তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এই পরিবারটি ভূমিহীন। তাই প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পেরর আওতায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের উপহার হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত ৮টি পরিবারকে আমরা খাস জায়গায় নতুন করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেব। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতে ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করছে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড। ডুলাহাজারা নাথপাড়ার পাশে সরকারি খাস জায়গায় একসঙ্গে ৮টি বাড়ি নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পরিবার গুলো এতোদিন পর্যন্ত বনবিভাগের জায়গায় বসবাস করে আসছিল। ছিলনা তাদের কোন স্থায়ী বাড়িঘর ও নিজস্ব জমি। তাই নিহতের পরিবারগুলোকে স্থায়ীভাবে জমিসহ গৃহ নির্মাণ করে পুনর্বাসনের জন্য ইতিমধ্যে খাস জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে। যাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সদস্যরা ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাই পায়। খুব শীঘ্রই নির্ধারিত জায়গায় মাটি ভরাটসহ প্রয়োজনীয় কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন