হরতাল অবরোধে বান্দরবানের ফুলঝাড়ুর ব্যবসায়ীরা বিপাকে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারাদেশে ফুলঝাড়ুর ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও বান্দরবানের ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ীরা পড়েছে বিপাকে। হরতাল অবরোধে পরিবহন সংকটের কারণে অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বেকার হয়ে পড়েছে এ পেশার শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক।
সারাদেশে ফুলঝাড়ুর চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় সমতল জনগোষ্টির চাহিদা মেঠাতে ফুলঝাড়ুর যোগান দিচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা। পাহাড়ের ফুলঝাড়ু দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি টেকসই। পার্বত্য চট্টগ্রামের ফুলঝাড়ু বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হলেও বর্তমানে দৈন্য দশায় দিন কাটাচ্ছে সংলিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, ফালগুন থেকে বৈশাখ মাস হলো ফুলঝাড়ু তোলার মৌসুম। বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাস থেকে জুম চাষের জন্য পাহাড় পোড়ানো শুরু হয়। জুমে আগুন দেয়ার আগে আগেই ফুলঝাড়ু কেটে নেওয়া হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে ও আঁটি বানিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন স্থানীয়রা।
ফুল ঝাড়ু সংগ্রহকারী মোস্তাফা জানান, অন্যান্য বছরে ফুলঝাড়ু বিক্রি করে এক মৌসুমে প্রায় তিন লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল। এবছর নিজের টাকা ও ঋণ নিয়ে আট লাখ টাকার ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করেছি। হরতাল অবরোধের কারণে এখনো এক ট্রাক ফুলঝাড়ু জেলার বাইরে ডেলিভারি দিতে না পেরে অর্থ সংকটে পরেছি। কয়েক দিনের মধ্য ডেলিভারি দিতে না পারলে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।
ফুল ঝাড়ু সংগ্রহকারী আব্দুল করিম মিঞা বলেন, অন্য বছর ফুল ঝাড়ুর জন্য ঢাকার ব্যবসায়ীরা আমাদের অগ্রিম টাকা দিত। চাহিদা থাকা সত্বেও অবরোধ হরতালের কারণে তারা আমাদের অগ্রিম টাকা দিয়ে ঝুকি নিতে চাচ্ছেন না। ঢাকায় ডেলিভারি দিতে না পেড়ে শ্রমিকের বেতন অনেক বকেয়া হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে তার অধীনে দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ঝাড়ু রোদে শুকানো এবং মোছা বানানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
ঝাড়ু সংগ্রহের পেশায় নিয়োজিতরা জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম, মাঝেরপাড়া, রেইছা, সাতকমল পাড়া, ডলুপাড়া, খানসাম, কিবুক পাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করেন। পাহাড়ী পরিবারগুলো সদস্যরা পাহাড়ে গরু চড়ানো ও কৃষি কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে বাড়ীতে মওজুদ করে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ মওজুদ শেষে ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করে থাকে।
কিবুক পাড়ার মংথোয় বলেন, পাহাড়ে ফুল ঝাড়ু কেটে পোষায় না। গরু চড়ানোর পাশাপশি ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে থাকি। যা বাড়তি উপার্জন দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা আসে। ব্যাপারীরা হরতাল অবরোধের কথা বলে ফুলঝাড়ু কিনতে চাইছেনা। স্থানীয়দের কাছে কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। নয়তবা ব্যাপারারীদের কাছে বাকীতে দিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছি।
ফুলঝাড়ু সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত এ অঞ্চলের অনেক নারী। যা তাদের বাড়তি উপাজর্নের পথ বাতলে দিয়েছিল। ফুলঝাড়ু সংগ্রহ এবং রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করার পেশায় জড়িত রয়েছেন জেলায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। যা তাদের আর্থিক সংকট নিরসনে ভূমিকা রেখে আসছিল।
মাফুজা, ইয়াসমিন, আনোয়ারের মা’সহ কয়েকজন ঝাড়ু সংগ্রহকারী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা পাহাড় থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে এবং রোদে শুকিয়ে আঁটি তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিদিন তাদের ৩০০থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হত। এ টাকা দিয়ে তাদের সংসার মোটামুটি চলে যেত। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারণে ব্যাপারীদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমান কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন।
বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম শহিদুল্লাহ জানান, পাহাড়ের উলফুল-এটি ফুলঝাড়ু হিসেবে এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। যা পাহাড়ে কুটির শিল্পের ভুমিকা রাখছে। এ ব্যবস্যা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আসছে। পাহাড় থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে স্থানীয় পাহাড়ী- বাঙ্গালীরা আয় করছে।
ফুলঝাড়ু লাগাতে হয় না। এটি প্রাকৃতিকভাবেই হয়ে থাকে। সাধারণত জুমচাষের আগে আগেই ফুলঝাড়ু কাটা হয়। এরপর পাহাড় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মাটির গভীরে এর বীজ লুকিয়ে থাকে। পরে বৃষ্টির পানি পেয়ে সেখান আবার জম্মায়।