হেগের আদালতে দৃষ্টি রোহিঙ্গাদের : মসজিদ মকতবে দোয়া

fec-image

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানির দুইদিনে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মধ্যে কৌতুহল ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। গাম্বিায়ার করার মামলায় রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল থেকে প্রায়ই মসজিদ মকতবে দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত অব্যাহত রেখেছে রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি টেলিভিশন, অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবারই দৃষ্টি ছিলো। কি হচ্ছে আদালতে তা দেখার জন্য ভীড় করতেও দেখা গেছে।

এছাড়াও রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি দেশের সচেতন মহলও গাম্বিয়ার করা মামলায় মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি করে। সবার দৃষ্টি ছিলো টেলিভিশন, অনলাইনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে একত্রে বসে গল্পে মেতে উঠতেও দেখা গেছে। সবারই একটি কথা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচার।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে আগুন ইত্যাদি মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য দীর্ঘ দুই বছর পরে হলেও আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর নেদাল্যান্ডের রাজধানী হেগে আদালতের শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়। এতে অভিযুক্ত পক্ষ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সূচির নেতৃত্বে একটি দল অংশ নেয়।

অপরদিকে ১০ ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গাদের অনেকে তাদের নিত্যদিনের কার্যক্রম বাদ দিয়ে চোখ কান খুলে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে থাকে। তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে থেকে অনুমতি প্রার্থণা করে বিফল হয়। যার ফলে কোন ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ না করলেও মসজিদ মকতবে রায় পক্ষে আসার জন্য দোয়া মাহফিল মোনাজাত করা অব্যাহত রাখে। অনেক নারী পুরুষ রোজা রেখে দোয়া করেন।

রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের গণহত্যা মামলার শুনানিতে হেগের বিশ্ব আদালতে মিয়ানমারের দৃষ্টান্ত শাস্তি হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। এ নিয়ে কক্সবাজারের ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে কি হচ্ছে, তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারের গণহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশা করেন আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন মহলও মিয়ানমারের দৃষ্টিমূলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে এতদাঞ্চলের দূর্ভোগ লাঘবের দাবি জানানো হয়।

এদিকে, আইসিজের শুনানিতে সরাসরি কোনো পক্ষ না হলেও গাম্বিয়াকে লজিস্টিক সহায়তা দেবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় বিভাগ) মাসুদ বিন মোমেন এক প্রতিনিধি দল নিয়ে দ্য হেগে সোমবার ৯ ডিসেম্বর পৌঁছেন। ২০ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া ৫ রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন। যাঁরা গাম্বিয়ার হয়ে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। দলে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে। তারা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে হেগে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন।

মামলার শুনানি শুরুর আগেই মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে। দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমর্থনকারী মানবাধিকার কর্মীরা বিশ্বব্যাপী এ প্রচার চালাচ্ছেন। ১০টি দেশের শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী সংগঠন ও ৩০ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা একযোগে এ প্রচার শুরু করেছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৬ এর এক নেতা মোঃ জাকারিয়া বলেন, মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি সুষ্ঠু বিচার পাব। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগসহ সরাসরি গুলি করেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করেছে রাখাইন সেনারা। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় হেগের আদালতের দিকে চেয়ে আছি।

রোহিঙ্গা মাঝি সামশুল আলম বলেন, মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গাকে এদেশে আশ্রয় দিয়েছে। এতগুলো মানুষ অন্যদেশে এভাবে থাকা সম্ভব নয়। যদি সুষ্ঠু বিচার পাই স্ব-ইচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাব। প্রত্যাশা রাখছি আল্লাহর অশেষ কৃপায় আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাব।

রোহিঙ্গা নেতা বদরুল বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে ৭৫ হাজার ঘরবড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, ১০ হাজার ৫৬৫ জন নারী পুুরুষ মেরে ফেলে, ১৮ শ ৩৩ জনকে ধর্ষণ করে, ৯০৬ টি মসজিদ পুড়িয়ে দেয়, ১২০০ মকতব মাদ্রাসা পুড়িয়ে দেয়, ২৫০০ লোক বিনাদোষে জেলে পাঠায়, ৮৮ টি গণকবর রয়েছে, এর মধ্যে ২টি ১০ জন করে মৃতদেহ পাওয়া যায়। একটি মংডুর আংডং গ্রামে অপরটি বুচিডংয়ের গুদামপাড়ায় । এসব তথ্যের ভিত্তিতে গাম্বিয়া মামলা দায়ের করেন বলেও জানান তিনি।

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যে বিচার শুরু হয়েছে তার জন্য সাধুবাদ জানাই। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বিচার নিশ্চিত হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে আগ্রহী হবে এবং স্থানীয়সহ দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অং সান সু চি, মিয়ানমার, রাখাইন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন